আল্লাহ তাআলার রাগের চেয়ে রহমতের প্রশস্ততা বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘আল্লাহ তাআলা মাখলুকাত (সৃষ্টিজগত) সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিলে একটি কিতাব লিখলেন, যা আরশের উপর সংরক্ষিত আছে। এতে আছে, আমার রহমত আমার রাগকে প্রশমিত করেছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমার রাগের উপর (রহমত) জয়ী হয়েছে।’ (মেশকাত: ২৩৬৪)
তাই যতই সমস্যা আসুক কিংবা পাপ-পঙ্কিলতার কারণে জীবন অন্ধকার মনে হোক, আল্লাহর রহমতের আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার ক্ষতি অনেক বড়।
বিজ্ঞাপন
শয়তান মানুষকে হতাশায় নিমজ্জিত করতে চায়, আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘মুমিন কখনও হতাশ হতে পারে না।’ দয়াবান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা জুমার: ৫৩)
আরও পড়ুন: যেসব কাজে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ হয়
ছেলে ইউসুফকে হারানোর পর শোকার্ত হজরত ইয়াকুব (আ.) যখন আরেক ছেলে বিনিয়ামিনকেও হারিয়েছিলেন, তখন অন্য সন্তানদের তিনি নিরাশ না হয়ে দুজনকে অনুসন্ধান করতে আদেশ দেন। এসময় ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়াকে কুফুরি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ঘটনার বর্ণনা এসেছে পবিত্র কোরআনে। (ইয়াকুব (আ.) তার ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন)— ‘হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর করুণা হতে তোমরা নিরাশ হয়োনা, কারণ কাফির ছাড়া কেউই আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয় না।’ (সুরা ইউসুফ: ৮৭)
মানুষের জীবনে সমস্যা থাকবেই। বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন। সে কথারও উল্লেখ আছে কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
বিজ্ঞাপন
অনেকে দেখবেন, কাউকে দোষ করতে দেখলেই বলে ওঠে যে, তাকে ক্ষমা করা হবে না। এমন কথা বলার আগে তার ভাবা উচিত যে, মহান রবের দয়া অফুরান। তিনি যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন, আবার যে কোনো ইবাদাতগুজার ব্যক্তিকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারেন।
হজরত জুনদুব (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এক লোক বলেছে আল্লাহর কসম অমুককে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, কে আমার ওপর কর্তৃত্ব করে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম, অন্যদিকে তোমার আমল বিনষ্ট করলাম।’ (সহিহ মুসলিম)
আরও পড়ুন: আল্লাহর রহমত লাভের সর্বোৎকৃষ্ট দোয়া
দয়াময় আল্লাহ আসলে বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য সুযোগ খোঁজেন। বনি ইসরাইলের এক লোক ১০০ জনকে হত্যা করেও ক্ষমা পেয়েছিলেন। সহিহ বুখারির ৩৪৭০ ও মুসলিম শরিফের ২৭৬৬ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ঘটনাটি।
আল্লাহর কাছে আশা বা তাওয়াক্কুল করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তি সচল থাকে। আশাকে বলা হয় সফলতার চাবিকাঠি। অন্যদিকে হতাশা এমন এক ক্ষতিকর মন্দ গুণ, যা মানুষের সর্বপ্রকার যোগ্যতাকে সমূলে বিনষ্ট করে দেয়। কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টি করে নানা জটিলতা। সামনে চলার পথকে করে রুদ্ধ।
তাই হতাশা হলো সফলতার প্রধান শত্রু। পৃথিবীর সফল মানুষেরা কখনও হতাশাকে কাছে ভিড়তে দেননি। হতাশা আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের বেলায়ও অবহেলা করতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে সে তার পারিপার্শ্বিক সবকিছুকেই দোষারোপ করতে থাকে এবং সবার সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং সামাজিকভাবে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: আল্লাহ কি পরকালেও রহমত করবেন?
হতাশা নামক এই নিরব ঘাতককে দূর করার জন্য প্রথমত আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বেশি বেশি করে কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন করতে হবে। কোরআনে কারিমে আশার কথা বেশি বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাঁর রহমত প্রার্থনা করতে হবে তা-ও শিখিয়ে দিচ্ছেন- ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের ওপর দয়া করুন, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন: ১০৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হতাশা ছেড়ে ক্ষমাশীল প্রভুর রহমতের প্রত্যাশা নিয়ে ‘আমলে সালেহাহ’ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

