সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দিনশেষে আল্লাহর তালিকায় শ্রেষ্ঠ যারা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

দিনশেষে আল্লাহর তালিকায় শ্রেষ্ঠ যারা

পৃথিবীতে একেক জনের কাছে একেক জন শ্রেষ্ঠ। কারো কাছে অমুক অর্থনীতিবিদ, কারো কাছে অমুক বিজ্ঞানী, আবার কারো কাছে অমুক চিকিৎসক, কেউ বলেন, অমুক রাজনীতিবিদের চেয়ে উত্তম কেউ নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে শ্রেষ্ঠ বা সর্বোত্তম হওয়ার জন্য বিশেষ যোগ্যতা প্রয়োজন। এখানে আমরা দেখে নেব- আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ মানুষ কারা।

১. যারা কোরআন শেখে ও শেখায়
মানুষের হেদায়েতের জন্যে সর্বশেষ নাজিলকৃত গ্রন্থ পবিত্র কোরআন। এর একটি শব্দও পরিবর্তন হয়নি, হবেও না। কারণ এর সংরক্ষণের ভার স্বয়ং রাব্বুল আলামিন নিয়েছেন। কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.)। তিনিই মানুষকে কোরআনের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করেছেন; হালাল-হারাম চিনিয়েছেন; জুলুম-দয়ার ফারাক শিখিয়েছেন; হেদায়েতের আলো বিলিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-  لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ ‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশোধন করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)


বিজ্ঞাপন


রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি: ৫০২৭) পবিত্র কোরআন হিফজ করা, চর্চা করা এতটাই ফজিলতপূর্ণ কাজ যে, রাসুল (স.) কোরআন হিফজকারীদেরকে ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আয়েশা (রা.) নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কোরআনের হাফেজ-পাঠক-লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো। খুব কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কোরআন পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। (বুখারি: ৪৯৩৭)

যারা কোরআন শিখবে এবং সে মতে আমল করবে, কোরআন হিফজ করবে, কেয়ামতের দিন তাদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, কোরআন কেয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু, একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু, তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু, তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি একেক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে। (তিরমিজি: ২৯১৫)

আরও পড়ুন: ৬ শ্রেণির বান্দাকে জান্নাত দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কেয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো!’ (আবু দাউদ: ১৪৫৩)


বিজ্ঞাপন


২. আলেম
আলেম বলতেও মূলত কোরআনকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষকে বোঝানো হয়। যারা দ্বীন ও শরিয়তের গভীর জ্ঞান রাখেন ও সেই অনুযায়ী আমল করেন। তাদেরকেও শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নবীজি (স.)। হজরত আবু উমামাহ আল-বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুজন লোকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে আলোচনা করা হলো। তাঁদের একজন আবেদ (সাধক, অধিক ইবাদতকারী) এবং অন্যজন আলেম। মহানবী (স.) বলেছেন, তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির ওপর আমার যতখানি মর্যাদা, ঠিক তেমনি একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের ওপর। তারপর রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতারা এবং আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। (তিরমিজি: ২৬৮৫)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুবাসও পাবে না যারা

আলেম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি বলুন, যারা জানে (অর্থাৎ আলেম) আর যারা জানে না (অর্থাৎ আলেম নয়) উভয় কি সমান হতে পারে? (কখনোই না)। কিন্তু উপদেশ গ্রহণ তো কেবল বোধসম্পন্ন লোকেরাই করে।’ (সুরা জুমার: ৮) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি এ কিতাবের ওয়ারিশ বানিয়েছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদের, যাদের আমি মনোনীত করেছি।’ (সুরা ফাতির: ৩২)

এছাড়াও কোনো কোনো হাদিসে সত্যবাদী, বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী, পাওনা পরিশোধে উদার, পরিবারের কাছে উত্তম ও মৃত ব্যক্তির সমালোচনা বর্জনকারীদের সর্বোত্তম মানুষ বলা হয়েছে। (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬; বুখারি: ২৩০৫; তিরমিজি: ৩৮৯৫) আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোত্তম মানুষের কাতারে আমাদের সবাইকে শামিল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর