পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মোনাজাতের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ খুশি হন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর দয়া ও রহমত চাও। কেননা চাইলে তিনি খুশি হন।’ (তিরমিজি: ৩৫৭১)
মুমিনের দোয়া অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, দ্বীনের স্তম্ভ এবং আসমান ও জমিনের নূর।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৬৫, মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/৪৯২)
বিজ্ঞাপন
মোনাজাতে অনেকেই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের শেখানো দোয়াগুলো জানেন না, ফলে পুরো মোনাজাত নিজের ইচ্ছেমতো করেই শেষ করে দেন। যদিও শরিয়তবহির্ভূত বিষয় না থাকলে এতে ক্ষতি নেই, তবে মাসনুন দোয়াই সবচেয়ে উপকারী ও কার্যকর। এখানে আমরা জেনে নেব- যেকোনো মোনাজাতে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ এগারটি দোয়া।
১. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ উচ্চারণ: ‘রব্বানা যলামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকূনান্না মিনাল খা-সিরীন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নিজেদের উপর জুলুম করেছি। এখন যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব।’ (সুরা আরাফ: ২৩)
২. رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّفِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আ-তিনা ফিদদুনইয়া হাসনাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসনাতাও ওয়া কিনা আজা-বান না-র।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, আমাদের দুনিয়াতে যা কল্যাণকর, পরকালে যা কল্যাণকর তা দান করুন, আমাদের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
৩. رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ উচ্চারণ: ‘রব্বানা অজ-আলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়ামিন যুররিয়য়াতিনা উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাকা ওয়াআরিনা মানাসিকানা ওয়াতুব আলায়না ইন্নাকা আনতাত-তাওওয়াবু রাহীম।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব। আমাদেরকে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত জাতি উত্থিত করুন। আর আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনিই বেমি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১২৮)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে ৭ দোয়া জীবন বদলে দেবে
৪. رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ ھَدَيْتَنَا وَھَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَھَّابُ উচ্চারণ: ‘রব্বানা লা-তুঝিগ কুলূবানা বা’দা ইজ-হাদায়তানা ওয়াহাব লানা মিললাদুনকা রহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে হেদায়েত করার পর আমাদের অন্তর যেন (সত্য থেকে) বিচ্যুত না হয় এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮)
৫. رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْراً وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى القَوْمِ الكَافِرِينَ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আফরিগ আলাইনা সবরাও অছাব্বিত আকদামানা ওয়ানছুরনা আলাল-কওমিল-কা-ফিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, আমাদের ধৈর্য দান করুন, আমাদের পা মজবুত করুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন ‘ (সুরা বাকারা: ২৫০)
৬. رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ উচ্চারণ: ‘রব্বানা লা তাজআলনা মাআল কওমিজ জ-লিমিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন না।’ (সুরা আরাফ: ৪৭)
৭. رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন। (সুরা আরাফ: ১২৬)
আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া
৮. رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلٰوةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاۗءِ উচ্চারণ: ‘রব্বিজ-আ’লনী মুকীমাস সলাতি অমিন জুররিয়াতি রব্বানা ওয়াতাকাব্বাল দু-আ।’ অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে সালাত আদায়কারী বানিয়ে দিনি এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের পালনকর্তা! আমার দোয়া কবুল করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪০)
৯. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ উচ্চারণ: ‘রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর র-হিমীন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সুরা মুমিনুন: ১১৮)
১০. رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلَتْ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَِ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আমান্না বিমা আনঝালতা অত্তাবায়ানার-রসুলা ফাক-তুবনা মাআশ-শাহিদীন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি যা অবতীর্ণ করেছেন আমরা তাতে বিশ্বাস করি এবং রাসূলের অনুসরণ করি। অতঃপর আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৫৩)
আরও পড়ুন: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
১১. رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ … وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ উচ্চারণ: ‘রব্বানা তাক্বববাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম। ওয়াতুব আলাইনা ইন্নাকা আনতাত তাওওয়া-বুর রহীম।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পক্ষ হতে এটি কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’। ‘আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি অধিক তওবা কবুলকারী ও দয়াময়।’ (সুরা বাকারা: ১২৭-১২৮)
উল্লেখ্য, এখানে যেসব দোয়া দেওয়া হয়েছে, এর বাইরেও কোরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো মোনাজাতে করা যাবে। মোনাজাতের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী করিম (স.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করবেন। হাত উঠিয়ে দোয়া করবেন। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। যখন কোনো বান্দা হাত উঠিয়ে দোয়া করে তখন তিনি তার হাত খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন। (আবু দাউদ: ১৪৮৮)
আর বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে মোনাজাত করবেন। মোনাজাতের পর দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মুছে নেওয়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে, নবী (স.) দোয়ার সময় তাঁর ওপরে হাত উত্তোলন করতেন এবং তার দ্বারা মুখমণ্ডল মাসেহ করতেন। (আবু দাউদ: ১৪৯২)
মহান আল্লাহ আমাদের জীবনের যাবতীয় দোয়া ও মোনাজাত কবুল করুন। আমিন।

