জীবনের প্রতিটি বিধানের মতো পানাহারের ক্ষেত্রেও শিষ্টাচার ও বিধি নিষেধ শিক্ষা দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। তাঁর নির্দেশনাগুলো মেনে চললে খাওয়া দাওয়াও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে, সওয়াব লাভ হবে। এখানে নবীজির হাদিসের আলোকে পানাহারের কিছু শিষ্টাচার তুলে ধরা হলো।
১. খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মোস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমদ: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ: ৪৯৩)
বিজ্ঞাপন
২. দোয়া পড়ে খাওয়া শুরু করা
দোয়া না পড়লে খাবারে বরকত কমে যায়। শয়তানও সেই খাবারে অংশ নেয়। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে (বিসমিল্লাহ বলে) এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি: ৫১৬৭; তিরমিজি: ১৯১৩) খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে গেলে মাঝখানে বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু বলা সুন্নত। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
৩. ডান হাতে খাওয়া
প্রিয়নবী (স.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার করো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি: ১৯১২)
৪. দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া নবী (স.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (স.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
৫. প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ: ৩২৭৭)
৬. পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (স.) এমনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ: ১৪২১৮; মুসলিম: ২০৩৪)
৭. খাবারের ত্রুটি না ধরা
প্রিয়নবী (স.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ: ৩৩৮২)
আরও পড়ুন: মানুষের গোপনীয় বিষয় খোঁজার পরিণাম
৮. যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা
ঘরে সবসময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা নবীজির (স.) সুন্নত। (মুসলিম: ২০৫২) তাছাড়া আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা আমার নেয়ামতগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য আমার নেয়ামত বাড়িয়ে দেব।’ (সূরা ইবরাহিম: ৭)
৯. খাবার অপচয় না করা
অপচয় কঠিন গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে এক আয়াতে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সীমালঙ্ঘন ও অহংকার না করে খাও, দান করো এবং পরিধান করো।’ (নাসায়ি: ৫/৭৯, ইবনে মাজা: ৩৬০৫)
অন্যত্র নবীজি (স.) বলেছেন, বনি আদম যা কিছু পূর্ণ করে এর মধ্যে পেট পরিপূর্ণ করা সবচেয়ে নিন্দনীয়। খাবার এতটুকু খাওয়াই যথেষ্ট, যতটুকু খেলে মাজা সোজা করে দাঁড়ানো যায়। এর চেয়ে বেশি যদি খেতে হয় তাহলে, পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবারের জন্য। একভাগ পানীয়ের জন্য। একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা। (জামে তিরমিজি: ২৩৮০)
আরও পড়ুন: অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থাটি উত্তম
১০. খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা নবীজির সুন্নত। (ইবনে মাজাহ: ৩২৯৯) একবার রাসুলুল্লাহ (স.) খানা খাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি এলো। নবীজি তাকে বললেন, এসো, আমার সাথে খাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩২৯৯)
১১. আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৩৮০৯; মুসলিম: ২০৩৩)

