রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যে আমলে অলসতা দূর হয়ে যায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

যে আমলে অলসতা দূর হয়ে যায়

অলসতা একটি নিন্দনীয় স্বভাব। এটি উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। কর্মহীন বা অলস ব্যক্তি নিজের জন্য যেমন কিছু করতে পারে না; তেমনি অন্যদেরও কিছু দিতে পারে না। উপরন্তু আলস্যের খারাপ প্রভাব পড়ে সমাজে। ইসলাম অলসতার বিপরীতে কর্মঠ হওয়ার উৎসাহ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ আদায় সম্পন্ন হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা: ১০)

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অলসতা দূর করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল এখানে উল্লেখ করা হলো—


বিজ্ঞাপন


১. ফজরের নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়া
মুমিনের জন্য ফজরের নামাজ পড়তে না পারা সারাদিনের আমলহীনতা ও অলসতার সূচনা। তাই অলসতা থেকে বাঁচতে দিন শুরু করুন ফজর নামাজের মাধ্যমে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে- তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আরেকটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।’ (বুখারি: ১১৪২)

আরও পড়ুন: ফজর নামাজের ১০ ফজিলত

২. নেক আমলের দিকে অগ্রসর হওয়া
নেক আমলে মনোযোগ দেওয়ার সময় এখনই। বয়স বাড়লে আমল করব— এমন চিন্তা বাদ দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)

প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? নাকি ওই ঐশ্বর্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের জন্য অপেক্ষা করছ, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? নাকি সেই বার্ধক্যের অপেক্ষায় আছ, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। নাকি কেয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কেয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও তিক্ত হবে? (তিরমিজি: ২৩০৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

৩. অলসতা দূর করতে দোয়া পড়া
হাদিসে অলসতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য হাদিসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়ুন— اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি: ২৮৯৩)

৪. মনীষীদের জীবনী পড়া
নিজের মধ্যে প্রেরণা, চেতনা ও উদ্দীপনা জাগাতে মনীষীদের জীবনী ও বাণী পড়ুন। অলসতা দূর করতে বেশি কাজে লাগবে এগুলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পূর্বপুরুষদের কাহিনিতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এটা (কোরআনের বাণী) মিথ্যা রচনা নয়; বরং তা আগের ধর্মগ্রন্থগুলোর সমর্থক, সব কিছুর বিশদ বিবরণ এবং ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য পথ নির্দেশ ও রহমত।’ (সুরা ইউসুফ: ১১১)

আরও পড়ুন: ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকার উপকার

৫. তাউজ, ইস্তেগফার ও জিকিরে মনোনিবেশ করা
সবসময় স্মরণ রাখুন- অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। ইবাদত থেকে গাফেল হওয়ার বিশেষ কারণ। এটি শয়তানের প্ররোচনায়ও হয়ে থাকে। তাই শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে বেশি বেশি ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘ইস্তেগফার’ পাঠ করুন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে বেশি উত্তম ও প্রিয়। তুমি ওই জিনিসে যত্নবান হও, যার মধ্যে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও আর উৎসাহহীন (হিম্মতহারা) হয়ো না। (মুসলিম: ৪৮২২)

অন্তরকে সচল ও তীক্ষ্ণ রাখতে বেশি বেশি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লালাহ, আল্লাহু আকবর—এই চারটি জিকির মনে মনে পড়তে থাকেন। যখন আপনার অন্তর সচল ও তীক্ষ্ণ হয়ে যাবে তখন অন্তর থেকে মস্তিষ্ক সঠিক নির্দেশনা পাবে। আর মস্তিষ্ক আপনার অঙ্গ পতঙ্গগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করবে এবং আপনার প্রত্যেকটি অঙ্গ-পতঙ্গের কাজকর্মের মাধ্যমে তা প্রকাশ পাবে ইনশা আল্লাহ।

৬. কর্মোচ্ছল ও উদ্যমীদের সঙ্গে চলাফেরা করা
উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করুন। নেককার মানুষের সংস্পর্শ গ্রহণ করুন। এতে নিজের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)

আরও পড়ুন: সত্য বলার পুরস্কার

৭. অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে দূরে থাকা
জীবনকে এই মূলনীতির অধীনে নিয়ে আসুন যে আমি কোনো অহেতুক কাজ করব না; অহেতুক কথা বলব না। এই প্রতিজ্ঞা আপনার জন্য নেক কাজ ও কল্যাণময় কাজ করা সহজ করে দেবে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হলো, তার জন্য জরুরি নয়—এমন কাজ সে ত্যাগ করে।’ (তিরমিজি: ২২৩৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কর্মচঞ্চল হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং উল্লেখিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর