রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকার উপকার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকার উপকার

ইসলামের দৃষ্টিতে তারাই ভালো মানুষ যারা সহজ-সরল, অযথা কথা-কাজ থেকে মুক্ত, সত্যবাদী, মানুষকে ঠকায় না, হারাম থেকে দূরে থাকেন, দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত, মানুষকে কোরআন শেখায় এবং আল্লাহকে ভয় করে চলেন। এক কথায় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে জানেন, তা মেনে চলেন এবং মানুষকে সেই নসিহত করেন, তারাই ভালো লোক। ‘যার থেকে সবাই মঙ্গলের আশা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে।’ (তিরমিজি: ২২৬৩) ‘যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১১৯)

এমন মানুষের সংশ্রবে থাকতে পারা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। এতে কল্যাণমুখী শিক্ষা ও সদুপদেশ লাভ হয়। সৎকাজ করা ও অসৎকাজ থেকে দূরে থাকার প্রেরণা লাভ হয়। এসবের প্রভাব পড়ে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। ফলে জীবন হয় ধন্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! (চলা-ফেরা ও সব কাজে) তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং (যারা দ্বীনের ব্যাপারে অটল এরূপ) সত্যবাদীদের সংসর্গ গ্রহণ কর।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: গোপনে নেক আমল করার ফজিলত

অপরদিকে চরিত্রহীন ও মন্দলোকের সংশ্রব গ্রহণ করলে দ্বীনের পথে থাকা খুব কঠিন হয়ে যায়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোর প্রতি উদাসীনতা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে নিজের মধ্যেই মন্দ দিকগুলো ঢুকে পড়ে। বিষয়টি সাধারণ উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা সহজ। আতরের দোকানে বসলে সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। ডাস্টবিনের কাজ করলে, তার থেকে দুর্গন্ধ অনুভূত হয়—এটি স্বাভাবিক। হাদিস শরিফে ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীকে তুলনা করা হয়েছে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাপর হিসেবে। কস্তুরী বহনকারী থেকে আপনি কিছু না কিনলেও সুবাস পাবেন। আর কামারের হাপর (কয়লার আগুনকে উস্কে রাখার পাখা) আপনার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো দুর্গন্ধ দেবে।’ (দ্র: সহিহ বুখারি: ৫১৩৬)

যাদের বন্ধু-বান্ধব অশ্লীল কথা-কাজে অভ্যস্থ, মাদকাসক্ত কিংবা দুর্নীতিবাজ, তার কখনো তাকওয়া বা পরহেজগারির শিক্ষা লাভ হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহওয়ালার পাশে থাকে, তার মধ্যে কখনও মদ খাওয়া বা নাচ-গান করার চিন্তা উদয় হবে না। এজন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে সতর্ক করেছেন এভাবে—‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)

আরও পড়ুন: হাদিসে ৭টি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ


বিজ্ঞাপন


যারা মন্দলোকের সঙ্গে থাকে, আবার জান্নাতে যাওয়ারও আশা করে তারা নির্বোধ। আল্লাহর রাসুলের সোহবতে হজরত ওমর (রা.), হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত ওসমান ও আলী (রা.)-এর মতো মানুষ তৈরি হয়েছে। ফেরাউন, নমরুদ বা কারুনের সঙ্গে থেকে হজরত আবু বকর কিংবা হজরত ওমর হওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি মন্দ মানুষের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিলে জান্নাতি মানুষ হওয়া প্রায়ই অসম্ভব। আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, মানুষ যাকে ভালবাসবে (কেয়ামতের দিন) সে তারই সাথী হবে। (সহিহ বুখারি: ৬১৬৮, ৬১৬৯)

হাশরের দিন তারা আফসোস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম!’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৮)

অতএব, আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করুন, তবেই প্রকৃত মানুষে পরিণত হবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলকে বলছেন, ‘আপনি দৃঢ়চিত্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অবস্থান করুন, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় আপনি তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। আপনি তার আনুগত্য করবেন না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির আনুগত্য করে আর যার কার্যকলাপ সীমালঙ্ঘনমূলক।’ (সুরা কাহাফ: ২৮)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর