সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এশার পর দু’রাকাত নফল নামাজের ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

এশার পর দু’রাকাত নফল নামাজের বিস্ময়কর ফজিলত

নফল নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বড় মাধ্যম। নফল ইবাদত না করলে গুনাহ নেই; কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য নফল ইবাদতের বিকল্প নেই। নফল শব্দের অর্থই হলো ‘অতিরিক্ত’। অর্থাৎ এটি ফরজের মতো আবশ্যক না হওয়া সত্ত্বেও আমি পড়ছি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির ইচ্ছায়। এজন্য আল্লাহ তাআলা নফল ইবাদতকারীকে অনেক ভালোবাসেন।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমার বান্দা যে সমস্ত ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে থাকে, তার মধ্যে ওই ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় আর কোনো ইবাদত নেই যা আমি তার উপর ফরজ করেছি। আর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই (রূপক অর্থে), যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই...। (বুখারি: ৬৫০২)


বিজ্ঞাপন


তাছাড়া কেয়ামতের দিন নফল ইবাদতের বেশি দরকার হবে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। নামাজ সঠিক হলে সে সফল হলো। আর নামাজ সঠিক না হলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। যদি তার ফরজে কিছু ত্রুটি থেকে যায়, তখন আল্লাহ বলবেন- দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল আমল আছে কি না, যার দ্বারা ফরজে হয়ে যাওয়া ত্রুটি পূরণ হবে। অতঃপর তার বাকি সব আমল এমনই হবে।’ (তিরমিজি: ৪১৩)

আরও পড়ুন: জীবনে অনেক নামাজ কাজা হয়েছে, করণীয় কী

উল্লেখিত হাদিসগুলোতে প্রমাণ হয়, যারা ফরজ নামাজের পাশাপাশি ইশরাক, ‍দুহা, আওয়াবিন, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নফল নামাজগুলো পড়ার চেষ্টা করেন, তারা নিশ্চয়ই আল্লাহর বিশেষ বান্দা। এখানে এমন দু’রাকাত নফল নিয়ে আলোচনা করছি, যেটি এশার পরে পড়তে হয়। যে নামাজের ফজিলত সম্পর্কে  রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতির পড়বে তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’ (সুনানে দারেমি: ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১০৬; তাহাবি: ২০১১)

সুবহানাল্লাহ! এশার পরের দুই রাকাত নফল নামাজে কিয়ামুল্লাইলের ফজিলত লাভ হবে! শুধু দু’রাকাতই পড়তে হবে—এমন নয়। এশার পর চার রাকাত নফলেরও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। কাব (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে এশার জামাতে অংশগ্রহণ করবে, অতঃপর এশার নামাজের পর চার রাকাত (নফল) নামাজ পড়বে, যাতে কিরাত-রুকু-সেজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, তার জন্য শবেকদরের মতো সওয়াব লেখা হবে।’ (নাসায়ি: ৪৯৫৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কানুন

আসলে আল্লাহ তাআলা চান- বান্দা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য অতিরিক্ত কিছু করুক। ফরজ, ওয়াজিবের পর অতিরিক্ত নামাজই মহান প্রভুর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ। তাছাড়া আমরা অনেকেই শেষরাতে উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সেজন্যই নবীজি (স.) উম্মতকে তাহাজ্জুদ পড়তে না পারলে অন্তত দু’রাকাত বা চার রাকাত নামাজ পড়ে ঘুমাতে উৎসাহিত করেছেন। তাতেই মিলবে অজস্র সওয়াব ও ফজিলত।

তবে, মুমিনের উচিত তাহাজ্জুদ পড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কেননা তাহাজ্জুদ খাঁটি ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ব্যয়কারী ও রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থী।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭)

আরও পড়ুন: ইবাদতে আগ্রহ বাড়ানোর দোয়া

শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন প্রভুর ভালোবাসায় যারা নামাজে দাঁড়ায়, তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা: ১৬)

কিন্তু রাতে ঘুম থেকে ওঠে অজু করা, নামাজ পড়া—এটি অনেকের পক্ষে সহজ হয় না। তাই যারা ঘুম ভেঙে উঠতে পারে না তাদেরকে প্রিয়নবী (স.) এমন এক আমলের কথা বলেছেন যা তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভের উপায় হবে। সেটি হলো এশার নামাজের পর দু’রাকাত বা চার রাকাত নফল নমাজ। বিতিরের আগে এই নফল পড়তে হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর