আল্লাহর পথে কষ্ট স্বীকারের চেয়ে বড় মর্যাদার বিষয় নেই। যত বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিই আসুক, ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যে যত বেশি নিজেকে আল্লাহর পথে নিয়োজিত রাখবে, সে ততটাই সফল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সঙ্গে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা তাওবা: ১১১)
একজন মুসলমান যখন তার জীবনের সমস্ত কাজ আল্লাহর পথে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে, তখন তার সমস্ত আমল ইবাদত বা ইবাদতে পরিণত হয়। তাই ইসলামের নির্দেশনা পালন ও প্রসারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করা মুমিনদের কর্তব্য। এক্ষেত্রে আনসার ও মুহাজিররা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে যারা প্রথমে অগ্রগামী এবং যারা তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করে, মহান আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করেছেন যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তা-ই মহাসাফল্য।’ (সুরা তাওবা: ১০০)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আল্লাহ যাকে বেশি পছন্দ করেন তাকে বিপদে ফেলেন
মুমিনের সব দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে পাপ মোচনের সংবাদ দিয়ে নবী করিম (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, রোগ-ব্যাধি, এমনকি দেহে কাঁটা বিদ্ধ হলে মহান আল্লাহ এসবের প্রতিদানে তার পাপ মোচন করেন।’ (মুসলিম: ২৫৭৩) অন্য হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনের বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর। তার সব কিছুতে কল্যাণ রয়েছে। সে ভালো কিছু পেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে তা তার জন্য কল্যাণকর। সে অপছন্দের কিছু পেয়ে ধৈর্য ধারণ করলে তা-ও তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কারো সব কিছুতে কল্যাণ নেই।’ (মুসলিম: ২৯৯৯)
একটি দীর্ঘ হাদিসে মহানবী (স.) দ্বীনের জন্য বারবার নিজের প্রাণ উৎসর্গ করার আশা ব্যক্ত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যে তাঁর পথে বের হয়েছে। আমার পথে কষ্ট স্বীকার, আমার প্রতি বিশ্বাস ও আমার রাসুলদের সত্যায়নের কারণেই সে বের হয়েছে। অতএব আমার দায়িত্ব হলো- হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব অথবা প্রতিদান ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদসহ তাকে তার ঘরে ফিরিয়ে দেব, যে ঘর থেকে সে বের হয়েছে। ওই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহর পথে কেউ কোনো আঘাত পেলে সে যেভাবে আঘাত পেয়েছে সেভাবেই কেয়ামতের দিন আসবে। তার রং রক্তের মতো এবং তার ঘ্রাণ কস্তুরীর মতো হবে। ওই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মুসলিমদের জন্য কষ্টকর না হলে আমি কখনো আল্লাহর পথে যুদ্ধ অভিযানে না গিয়ে পেছনে বসে থাকতাম না। তবে আমার এত সামর্থ্য নেই যে তাদের সবাইকে বাহন দেব এবং তাদের নিজেরও বাহন নেওয়ার সামর্থ্য নেই। আর আমার সঙ্গে না গিয়ে পেছনে থাকাও তাদের জন্য কষ্টকর। ওই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! আমি চাই আল্লাহর পথে কষ্ট স্বীকার করব অতঃপর মারা যাব। আবার কষ্ট স্বীকার করব অতঃপর মারা যাব। আবার কষ্ট স্বীকার করব অতঃপর মারা যাব।’ (সহিহ মুসলিম: ১৮৭৬)
বিজ্ঞাপন
আসলে আল্লাহ তাআলা কষ্ট স্বীকার করা বান্দাদের বাছাই করে নেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি ভেবেছ জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ আল্লাহ এখনো জেনে নেননি কারা তোমাদের মধ্যে জিহাদ করেছে এবং কারা তোমাদের মধ্যে ধৈর্যশীল?’ (আলে ইমরান:১৪২)
এই আয়াতের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা ও মর্যাদা লাভের উপায় হলো আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আর জিহাদ সবচেয়ে কষ্টকার। এখানেই ধৈর্যের বড় পরীক্ষা দিতে হয়।
একইভাবে যারা রাতের বেলা আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতে পারে, আল্লাহ তাদের মর্যাদার জীবন দান করেন। একদিন জিবরাইল (আ.) এসে রাসূলুল্লাহ (স.)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘হে মুহাম্মাদ! মুমিনের মর্যাদা হলো ইবাদতে রাত্রি জাগরণ করা’। আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, তোমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উচিত। কেননা তা তোমাদের পূর্বেকার সজ্জন ব্যক্তিদের প্রতীক এবং তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। নামাজ গোনাহসমূহ বিমোচনকারী এবং গোনাহের প্রতিবন্ধক। (তিরমিজি: ৩৫৪৯, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১০৭৫)
এভাবে দ্বীনের প্রত্যেকটি ফরজ আমল ও নির্দেশনা পালনে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সুন্নাহর পথে অবিচল থাকার তাওফিক আল্লাহ যেন আমাদের দান করেন। আমিন।

