রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জীবনে প্রশান্তি ও সৌাভাগ্য লাভের দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০২:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

জীবনে প্রশান্তি ও সৌাভাগ্য লাভের দোয়া

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুলের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) সালমান (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, দোয়া ব্যতীত কোনোকিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত কোনো কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না। (তিরমিজি: ২১৩৯)

তাই আমরা দোয়া থেকে বিমুখ হতে পারি না। সকল প্রয়োজনে একমাত্র আল্লাহরই সাহায্য চাইব। আর যে বান্দা একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়, তাকে আল্লাহ তাআলা না দিয়ে পারেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩২০)


বিজ্ঞাপন


এখানে এমন কিছু দোয়া তুলে ধরছি, যেগুলো একজন মুমিনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। দুনিয়া-আখেরাতে সর্বাধিক কল্যাণ লাভের উপায়। যেসব দোয়া নিয়মিত পড়লে জীবনে প্রশান্তি ও সৌভাগ্য নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ। দোয়া শুরু করার আগে আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামের জিকির অথবা আল্লাহর গুণবাচক নামযুক্ত সুরা পাঠ করবেন। এরপর নবীজির প্রতি দরুদ পড়ে দোয়া শুরু করবেন। এভাবে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করে থাকেন। 

১. জীবনের সকল চাওয়া পূর্ণ হওয়ার দোয়া
প্রিয়নবী (স.) আল্লাহর কাছে এমন এক বিশেষ দোয়া করতেন, যে দোয়ায় জীবনের সকল চাওয়া নিহিত। সে দোয়ার মাধ্যমে আমরাও জীবনের সকল প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চেয়ে নেব। দোয়াটি হলো- اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪) 

২. যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা দূর হওয়ার দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’ (বুখারি: ২৬৯৪)

আরও পড়ুন: দোয়া করার সময় ৫টি বিষয় মাথায় রাখবেন


বিজ্ঞাপন


৩. সর্বাধিক কল্যাণ লাভের দোয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কল্যাণ লাভের দোয়া করতে শিখিয়েছেন। এ বিষয়ে সর্বোত্তম দোয়াটি হলো— اللَّهمَّ إنِّي أسألُك المعافاةَ في الدُّنيا والآخرةِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল মুআফাতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করি।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, বান্দা যত রকম দোয়া করে তার মধ্যে এই দোয়ার চেয়ে উত্তম কোনো দোয়া নেই। (ইবনে মাজাহ: ৩৮৫১)

৪. হেদায়াত লাভের দোয়া
আল্লাহ তাআলা যাদেরকে হেদায়াত করেন, তারা ছাড়া সবাই পথভ্রষ্ট। তাই মহান আল্লাহর কাছে হেদায়াত বা সুপথপ্রাপ্তির দোয়া করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তাঁর বান্দাদের শিখিয়েছেন কীভাবে এই প্রার্থনা করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, اِهۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ‘আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।’ (সুরা ফাতিহা: ৫)

রাসুলুল্লাহ (স.) পথভ্রষ্টতার ঊর্ধ্বে থাকার পরও হেদায়াত লাভের দোয়া করতেন। হেদায়াতের জন্য অনেক দোয়া করা যায়। এখানে একটি দোয়া তুলে ধরা হলো— اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করো এবং আমার নফসের খারাবি থেকে রক্ষা করো।’ (সূত্র: সুনানে তিরমিজি: ৩৪৮৩)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে যা হারিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম কিছু পাবেন

৫. বরকতময় ও ঋণমুক্ত জীবন এবং হালাল রিজিকের দোয়া
اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান করো। (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ: ১৩২১)

৬. উৎকৃষ্ট জ্ঞান লাভের দোয়া
উৎকৃষ্ট বোধশক্তি, গভীর জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞানের সমন্বয় হলো প্রজ্ঞা। এটি এমন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাপ্ত জ্ঞানের নাম, যার মাধ্যমে সবসময় মঙ্গল সাধিত হয়। এই অমূল্য সম্পদ যাদের নসিব হয়, তারা পরম ভাগ্যবান। এই জ্ঞানলাভের জন্য একটি দোয়া রয়েছে। যা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত ইবরাহিম (আ.) এই দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা দোয়াটি খুব পছন্দ করেছেন, তাই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। দোয়াটি হলো—رَبِّ هَبۡ لِیۡ حُکۡمًا وَّ اَلۡحِقۡنِیۡ بِالصّٰلِحِیۡنَ ‘রাব্বি হাবলী হুকমাওঁ ওয়ালহিক্বনী বিস সালিহীন’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (সুরা শুআরা: ৮৩)

৭. জান্নাত প্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া
একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো- সে জান্নাত লাভ করবে ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকবে। সর্বোচ্চ এই সফলতা অর্জনের জন্য নবীজি দোয়া শিখিয়েছেন উম্মতকে। দোয়াটি হলো—اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (তিরমিজি: ২৫৭২, ইবনে মাজাহ: ৪৩৪০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করার তাওফিক দান করুন এবং এর মাধ্যমে একটি সুন্দর দুনিয়াবি জীবন দান এবং পরকালীন মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর