সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সময় মুমিনের করণীয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সময় মুমিনের করণীয়

অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, পরীক্ষা, বিপর্যয় ইত্যাদির সমষ্টিকে একসঙ্গে আরবিতে ফিতনা বলা হয়। নবীজির হাদিস অনুযায়ী, অদূর ভবিষ্যতে সারাবিশ্বে ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। এ থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে মুমিনদের। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ প্রিয় বান্দাদের সতর্ক করে বলেন, আল্লাহর কাছে ফিতনা হত্যা অপেক্ষা মারাত্মক। (সুরা বাকারা: ২১৭) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিভিন্ন হাদিসেও ফিতনার ব্যাপারে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। 

এক হাদিসে রাসুল (স.) শেষ জামানায় ফিতনার ভয়াবহ বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, ‘শিগগিরই ফিতনা রাশি রাশি আসতে থাকবে। ওই সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি থেকে বেশি রক্ষিত। আর ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে বেশি বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে, ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোনো ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার জন্য কোনো ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তাহলে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিত হবে।’ (বুখারি: ৩৬০১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: গোপনে শত্রুতা বেড়ে যাবে, নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী

ফিতনা বা বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আল্লাহ ও রাসুল (স.)-এর দেখানো পথে ফিরে যাওয়া ছাড়া মুমিনের বিকল্প নেই। এখন আর আমাদের অন্যের দোষ তালাশ করারও সময় নেই। বরং উচিত নিজেদের সংশোধন করা। গুনাহ থেকে বিরত থাকা, সর্বদা আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার করা এবং বেশি বেশি নেক আমল করা। রাসুল (স.) বলেন, ‘আঁধার রাতের মতো ফিতনা আসার আগেই তোমরা নেক আমলের দিকে অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকেলে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে দ্বীন বিক্রি করে বসবে।’ (মুসলিম: ২১৩)

এসব কাজে মুসলিম জামাত আঁকড়ে ধরার বিশেষ উপকারিতা ও গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে জামাতবদ্ধ থাকার নির্দেশনা তো রয়েছেই। হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা মুসলিমদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, ‘তাহলে সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাকো এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।’ (মুসলিম: ৪৬৭৮)

আরও পড়ুন: চাটুকারিতা বন্ধে নবীজির শেখানো পদ্ধতি


বিজ্ঞাপন


সর্বোপরি ইসলামি শরিয়তের দুই উৎস কোরআন ও সুন্নাহর বিধানকে নিজেদের জীবনের জন্য অপরিহার্য করে নেওয়া ফিতনা থেকে বাঁচার কার্যকর উপায়। যারা ইসলামের এই দুই উৎসকে আঁকড়ে ধরবে তারা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুই বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ তা ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ১৬০৪)

প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে ফিতনা থেকে বাঁচতে দোয়াও শিক্ষা দিয়েছেন। اللَّهُمَّ إنِّي أعوذُ بكَ من الفِتَنِ، ما ظهَرَ مِنْهَا، وما بطَنَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফিতানি, মা জহারা মিনহা ওয়া মা বাতানা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল ফিতনা থেকে পরিত্রাণ চাই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৭৭৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভয়াবহ ফিতনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুক। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর