ইসলামি বিশ্বাসমতে, কেয়ামতের আগে মানুষ ব্যাপকহারে নীতিভ্রষ্ট হবে এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। এর একটি হলো বন্ধুবেশে শত্রুতামি। মুআজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের আগে এমন কিছু লোক হবে, যারা প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব দেখাবে আর ভেতরে ভেতরে শত্রুতামি করবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, এটা কীভাবে হবে? তিনি বলেন, একজন অন্যজনের প্রতি (স্বার্থের) লোভ থাকার কারণে আর একজন অন্যজনের থেকে (স্বার্থহানির) ভয়ের কারণে। (মুসনাদে বাজ্জার: ২৩০০)
আলোচ্য হাদিসে দেখা যায়, কিছু মানুষকে আমরা আপন মনে করি, যারা প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব দেখায়। অথচ ভেতরে ভেতরে চরম দুশমন। এসব বন্ধুবেশী শত্রুদের কারণেই মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।
বিজ্ঞাপন
তবে সব বন্ধু এমন নয়, প্রকৃত মুসলমান ও আল্লাহভীরুরা এমন হতে পারেন না। মুমিনের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা তো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। দ্বীনের শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই ইসলামের শত্রুদের সঙ্গে মুমিন বন্ধুত্ব রাখে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল এবং ঈমানদাররা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং তারা বিনম্র।’ (সুরা মায়েদা: ৫৫)
আরও পড়ুন: ইসলাম ‘ভালো বন্ধু’ বলেছে যাদের
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।’ (আবু দাউদ: ৪৬৮১)
তবে, মুমিনদের মধ্যে কোনো কারণে মনোমালিন্য হলে কোনো অবস্থাতেই সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য এমন— ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উত্কৃষ্ট দিয়ে। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদের, যারা ধৈর্যশীল এবং এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদের, যারা মহা ভাগ্যবান।’ (সুরা হামিম সাজদা: ৩৪-৩৫)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সওয়াব
প্রিয়নবীজি উম্মতকে শত্রুতা যেন চরম না হয়—সেজন্য সুন্দর একটি পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিজের বন্ধুর সঙ্গে ভালোবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। তোমার শত্রুর সঙ্গেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।’ তিরমিজি: ১৯৯৭)
অতএব, বন্ধুত্ব করতে হবে জেনেশুনে আল্লাহভীরুদের সঙ্গে। আর ইচ্ছাকৃতভাবেই যদি খারাপ চরিত্রের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা হয়, দুনিয়াতে ক্ষতি তো রয়েছেই, আখেরাতেও পস্তাতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৯) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)

