ইসলামে অতিরিক্ত প্রশংসা বা চাটুকারিতার স্থান নেই। প্রশংসা পাবার লোভ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা স্বীয় কৃতকর্মে সন্তুষ্ট এবং তারা যা করেনি তার জন্য প্রশংসা প্রার্থী, এমন লোকদের সম্পর্কে ধারণা করো না যে তারা শাস্তিবিমুক্ত; বরং তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৮)
কারও সামনে প্রশংসা করতে নিষেধ করে প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘কারও সামনে তার প্রশংসা করা তার পিঠে ছুরি মারা বা তার গলা কেটে ফেলার সমান।’ ( আদাবুল মুফরাদ: ৩৩৫) অন্য একটি হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কেউ তোমাদের সামনাসামনি প্রশংসা করলে তার মুখে তোমরা পাথর ছুড়ে মারো।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩৪০)
বিজ্ঞাপন
একদা এক সাহাবি রাসুল (স.)-এর কাছে অন্য এক সাহাবি সম্পর্কে বেশি বেশি প্রশংসা করেন, তা শুনে রাসুল (স.) বললেন, ‘আফসোস, তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেললে! কথাটি নবীজি (স.) তিনবার বলেন। অতঃপর বললেন, যদি কারো প্রশংসা করতেই হয়, তাহলে সে যেন এভাবে বলে যে আমি তার ব্যাপারে এমন এমন ধারণা পোষণ করি। কারণ তার প্রকৃত হিসাব মহান আল্লাহ জানেন।’ ( বুখারি, মুসলিম, মেশকাত: ৪৮২৭)
আরও পড়ুন: নেকি খেয়ে ফেলে যে ৬ গুনাহ
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন- উম্মতের ব্যাপারে আমার যে বিষয়গুলোতে ভয় হয়, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাকপটু মুনাফিক। (মুসনাদে আহমদ: ১/২২)
ইসলাম মনে করে, তোষামোদ মূলত মানুষের যোগ্যতাকে নষ্ট করে। কারণ, মানুষ যখন যোগ্যতা প্রদর্শন ছাড়াই প্রশংসা ও স্তুতি শুনতে পায় তখন মেধা ও শ্রম ব্যয় করতে আগ্রহী হয় না। ফলে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকে।
বিজ্ঞাপন
তোষামোদের ক্ষতির দিক আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম গাজ্জালি (রহ.) তার এক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, অবাস্তব প্রশংসা বা তোষামোদ পাঁচটি ক্ষতি বয়ে আনে। তন্মধ্যে তোষামোদকারী ব্যক্তি তিনটি ক্ষতির সম্মুখীন হয় আর তোষামোদকৃত ব্যক্তি সম্মুখীন হয় দুটি ক্ষতির। তোষামোদকারী যে তিনটি ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা হলো- ১. তোষামোদ করার মাধ্যমে মূলত মিথ্যা ও প্রবঞ্চনার আশ্রয় নেওয়া হয়। ২. ব্যক্তি মুনাফেকি বা কপটতার গুনাহে লিপ্ত হয়। ৩. অন্যকে গুনাহে লিপ্ত করা হয়। আর তোষামোদকৃত ব্যক্তির যে ক্ষতি হয় তা হলো- ১. নিজেকে বড় ও যোগ্য মনে করে। ২. অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকে। আর এগুলোর দায় বা গুনাহ মূলত তোষামোদকারী ব্যক্তির উপর বর্তায়।
আরও পড়ুন: উম্মতের ৬ ফেতনা নিয়ে নবীজির দুশ্চিন্তা
এসব কারণে সাহাবায়ে কেরাম চাটুকারিতার সুযোগ কাউকে দিতেন না। বরং কেউ চাটুকারিতা করার চেষ্টা করলে তাত্ক্ষণিক তার বিরুদ্ধে রাসুল (স.)-এর শেখানো পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নিতেন। আবু মামার (রহ.) থেকে বর্ণিত, কোনো একদিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোনো এক প্রশাসকের সামনেই তার প্রশংসা করতে শুরু করে। এতে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) তার মুখমণ্ডলে ধুলাবালি নিক্ষেপ করতে থাকেন এবং বলেন, রাসুল (স.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চাটুকারের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করি। (তিরমিজি: ২৩৯৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চাটুকারিতার মতো গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন। চাটুকারিতা বন্ধে নবীজির শেখানো পদ্ধতি ব্যবহারের তাওফিক দান করুন। সব বিষয়ে সব ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

