সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নামাজ আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য ৫ বিষয় খেয়াল রাখবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৪, ০৮:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

নামাজ আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য ৫ বিষয় খেয়াল রাখবেন

আমরা প্রত্যেকে চাই আমাদের ইবাদতগুলো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে অনেক সময় ইবাদত যথাযথ হয় না। ফলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। নামাজ কবুলের জন্য একজন হালাল উপার্জনকারী মুমিনেরও কিছু বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

১. ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়া
নামাজ আদায়ে তাড়াহুড়ো করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং নামাজের সব আবশ্যক বিষয়াবলী ধীরস্থিরভাবে আদায় করা ওয়াজিব। (বুখারি: ৭৯৩ ও মুসলিম: ৩৯৭) নামাজে যারা পূর্ণভাবে রুকু-সেজদা আদায় করে না, তাদের সবচেয়ে বড় চোর সাব্যস্ত করেছেন মহানবী (স.)। (মুয়াত্তায়ে মালেক: ৩৮৯) স্বয়ং নবীজি যাদের চোর বলেছেন, তাদের নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার আশা করাই বোকামি। অতএব, নামাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


২. ইখলাস
ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। ইখলাস অর্থ একনিষ্ঠতা। তবে শুধু এই অর্থ দিয়ে আরবি ইখলাস শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা সম্ভব হয় না। ইবাদতকে ইখলাসপূর্ণ করতে হলে প্রথমত রিয়া বা লৌকিকতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত ইবাদতের কথা মানুষকে বলে বেড়ানো যাবে না। ইসলামি পরিভাষায় যাকে বলে সুমআ। এটি ইবাদতকে ইখলাসশূণ্য করে দেয়। তৃতীয়ত পার্থিব লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করা যাবে না। এসবকিছু থেকে মুক্ত থেকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করলেই তা ইখলাসপূর্ণ হয়। অন্যথায় নয়। আর ইখলাসপূর্ণ ইবাদতের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমার রব নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের। আর তোমরা প্রত্যেক সেজদা বা ইবাদতে তোমাদের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ কর এবং তারই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাকে ডাকো। তিনি যেভাবে তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে।’ (সুরা আরাফ: ২৯)

আরও পড়ুন: ফজরের সুন্নত ও ফরজ নামাজে যেসব সুরা পড়তেন নবীজি

৩. সুন্নাহর অনুসরণ
ইবাদতকে মহান আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তা করতে হবে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী। মনগড়া ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর: ৭) রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’ (মুসলিম: ১৭১৮)

৪. শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা
নামায সহিহ এবং কবুল হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ তেলাওয়াত জরুরি। নামাজে অর্থ বিকৃত হওয়ার মতো ভুল হলে নামাজ ভেঙে যাবে। চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভেতরে হোক বা পরে। সর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুল- যার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে যায় না, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না।' (খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১১৮, ফতোয়া কাজিখান: ১/৬৭) অতএব, যাদের তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়, তারা অবশ্যই তেলাওয়াত শুদ্ধ করে নেবেন এবং নামাজে সহিহ-শুদ্ধভাবেই তেলাওয়াত করবেন। আর অতীতের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করবেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: স্যান্ডো গেঞ্জি পরে নামাজ শুদ্ধ হবে?

৫. পরিপাটি হয়ে নামাজ পড়ুন
নামাজ হলো বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সাক্ষাৎস্বরূপ। তাই মহান প্রভুকে হাজিরা দেওয়ার জন্য গুরুত্বসহকারে, পরিপাটি হয়ে নামাজ আদায় করা উচিত। এজন্য প্রথমে মেসওয়াক করবেন, এরপর  উত্তম পোশাক পরিধান করবেন। সম্ভব হলে হালাল সুগন্ধি লাগাবেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা (সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ) গ্রহণ করো।’ (সুরা আরাফ: ৩১) মেসওয়াকের ব্যাপারে হাদিসে অনেক বক্তব্য রয়েছে। এক হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘মেসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।’ (নাসায়ি: ৫) 

উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথ পালন করার পর ইবাদত কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে নামাজ কবুলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের নামাজ কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর