মৃত্যু অবধারিত বিষয়। আয়ু ফুরিয়ে গেলে যে যেখানেই থাকি না কেন মৃত্যু হবেই। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ (সুরা নিসা: ৭৫)
কোনো মুসলমানের মৃত্যু সংবাদে বেশকিছু কাজ আবশ্যক হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে পড়া উচিত— إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ উচ্চারণ : ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬)
বিজ্ঞাপন
উল্লেখিত ইন্নালিল্লাহি.. দোয়াটির সঙ্গে মিলিয়ে এই দোয়াটি পাঠ করা উত্তম — إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا উচ্চারণ : ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’ অর্থ : ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এরচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন। (সহিহ মুসলিম: ১৯৯৮)
উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো মুমিন ব্যক্তি যখন কোনো বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয় এবং আল্লাহ তাকে যা বলতে বলেছেন (উপরে উল্লেখিত) তা বলে, তখন আল্লাহ তাকে ওই মুসিবতের উত্তম বদলা এবং আগের চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেন। (সহিহ মুসলিম: ১৯৯৮)
আরও পড়ুন: মৃতব্যক্তিকে গোসল করানোর পদ্ধতি
শোক প্রকাশের পর বিলম্ব না করে দ্রুত দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা উচিত। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) হজরত আলী (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না— ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোনো অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোনো উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ (তিরমিজি: ১/২০৬)
বিজ্ঞাপন
দাফন-কাফনের আগে চওড়া পট্টি দিয়ে মৃতের চোয়াল বেঁধে দেওয়া মোস্তাহাব (অসুস্থ ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং তার চোখ বন্ধ করে দেবে। (মুসলিম: ১৫২৮)
আরও পড়ুন: জানাজার নামাজের নিয়মকানুন, গুরুত্ব ও ফজিলত
চোখ বন্ধ করার সময় এ দোয়া পাঠ করবে— উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইয়াসসির আলাইহি আমরাহু ওয়া সাহহিল আলাইহি মা-বাদাহু, ওয়াস আদহু বি-লিকাইকা, ওয়াজআল মা খারাজা ইলাইহি মিনমা খারাজা মিনহু।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিয়ে আসা দ্বীন অনুযায়ী। হে আল্লাহ! তার বিষয়াদি সহজ করে দিন এবং পরের বিষয়গুলোও তার জন্য সহজ করে দিন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য তাকে দান করুন। তার কাছে আগন্তুক বস্তুগুলো প্রস্থানকৃত বস্তু থেকে উত্তম করে দিন।’ (তিরমিজি: ৯৬৭)
মৃত ব্যক্তির দুই হাত বুকের ওপর রাখবে না, বরং তার দুই পাশেই রাখবে। (সুনানে কুবরা: ৬৮৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩/২৪১)
মনে রাখতে হবে- গোসল দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির পাশে উচ্চৈঃস্বরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা মাকরুহ। (মুসনাদ আবদুর রাজ্জাক : ৩/৩৮৬) মৃত্যুর খবর প্রচার করা এবং অনতিবিলম্বে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মোস্তাহাব। (বুখারি: ১১৬৮, আবু দাউদ: ২৮৪৭)

