মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানদের ওপর তার গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা জরুরি। দ্রুতই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। নবীজি (স.) হজরত আলী (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোনো উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ (তিরমিজি: ১/২০৬)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কেফায়া। কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপর মারা গেলেও গোসল দেওয়া জরুরি। আর যদি মৃতাবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে গোসল দেওয়া ভালো; তবে ফরজ নয়।
বিজ্ঞাপন
লাশ লা-ওয়ারিস হলে তার গোসলের দায়িত্ব সব মুসলমানের। গোসল ছাড়া তার দাফন করা হলে, যারা জানে তাদের সবাই গুনাহগার হবে।
আরও পড়ুন: মৃত ব্যক্তির নাভির নিচের পশম কাটা কি উত্তম?
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর সুন্নত পদ্ধতি
প্রথমে মৃতকে চৌকি বা গোসলের খাটিয়ার ওপর শোয়াতে হয়। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশে একটা কাপড় রাখতে হয়। হাতে কাপড় পেঁচিয়ে পেশাব-পায়খানার জায়গা পরিষ্কার করতে হয়। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পেশাব বা পায়খানা জাতীয় কিছু বের হলে গোসলদানকারী হাতে একটি নেকড়া বেঁধে নিয়ে মৃত ব্যক্তির পায়খানা ও পেশাবের স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করবে। নাভি ও হাঁটুর মাঝখানের স্থান ঢেকে নিয়ে পানি ঢালবে।
এরপর অজু করাতে হয়। নাকে ও মুখে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তুলা ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি ও নাকের ভেতর মুছে দেওয়া জায়েজ।
বিজ্ঞাপন
গোসল ফরজ বা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মারা গেলে মুখে ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরি। পানি যেন ভেতরে না যায় সে জন্য নাক, মুখ ও কানে তুলা দিতে হয়, এরপর ধুতে হয়।
মৃতকে বাঁ দিকে কাত করে শুইয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমনভাবে তিনবার পানি ঢালতে হয়, যেন বাঁ কাত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অনুরূপভাবে ডান কাত করে শুইয়ে তিনবার পানি ঢালতে হয়। এরপর মৃতকে কোনো কিছুর ওপর ঠেস দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে হয়।
মল বেরোলে পরিষ্কার করে ধুয়ে দিতে হয়। এর জন্য পুনরায় অজু ও গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। অতঃপর বাঁ কাত করে শুইয়ে কর্পূর মেশানো পানি ঢালতে হয় তিনবার। সব শেষে একটি কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হয়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/২১৮)
