মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ঢাকা

জিলকদ কি হজের মাস?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৪, ১২:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

জিলকদ কি হজের মাস?

হিজরি বর্ষের ১১তম মাস জিলকদ। আরবি জিলকদ শব্দের অর্থ হলো বসে থাকা। জাহেলি যুগ থেকে মানুষ এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ করত না। তাই এটিকে বসে থাকার মাস বা বিশ্রামের মাস বলা হয়। তবে জিলকদকে হজের মাসও বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হজের মাস সুনির্দিষ্ট।’ (সুরা বাকারা: ১৯৭) আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে যে কয় মাসের কথা বলেছেন তা হলো- শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। অর্থাৎ এ তিনটি মাসে হজের কাজ চলবে। যদিও হজের মূল কাজ হয় জিলহজ মাসে। 

আবার জিলকদ সম্মানিত চার মাসেরও একটি। সম্মানিত মাসগুলো হলো—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং রজব। (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২)


বিজ্ঞাপন


জিলকদ মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে আরও অনেক কারণে। প্রিয়নবী (স.) জীবনে যে কয়টি ওমরা করেছেন তার সবকটি ছিল জিলকদ মাসে। রাসুলুল্লাহ (স.) জীবনের তিনটি ওমরা করেছেন এবং তাঁর ঐতিহাসির ‘ওমরাতুল কাজা’ এই মাসে পালন করেছেন।

এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ান। বাইয়াতে রিদওয়ান হলো ৬ষ্ঠ হিজরিতে হুদাইবিয়ার নামক স্থানে একটি শপথ গ্রহণের ঘটনা। হজরত ওসমান (রা.)-কে কুরাইশরা হত্যা করেছে—এমন খবরে মুসলমানরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নবীজির হাতে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতির একটি প্রতীক।

আরও পড়ুন: জিলহজ মাসের ১০ আমল

আরও কিছু বিশেষ ঘটনা এ মাসকে তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে। যেমন- হিজরতের আগে ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে জিলকদ মাসে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রিয় চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। নবুয়তের ১১তম বর্ষে পবিত্র হজের মৌসুমে এই জিলকদ মাসেই মহানবী (স.) মক্কার বহিরাগত লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। নবুয়তের ১২তম বর্ষে এ মাসেই মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয় ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করে নবী (স.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। ইসলামের ইতিহাসে তা ‘আকাবার প্রথম শপথ’ হিসেবে পরিচিত। পঞ্চম হিজরি জিলকদ মাসে খন্দকের যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে ‘বনি কোরাইজার যুদ্ধ’ অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ হিজরির জিলকদ মাসে মহানবী (স.) আবু মুসা আশয়ারি (রা.) ও মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-কে গভর্নর করে ইয়েমেনে পাঠান।


বিজ্ঞাপন


৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ হিজরির জিলকদ মাসে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে ফোরাজের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। রোম, পারস্য ও আরবের বিভিন্ন গোত্র এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। মুসলমানরা এ যুদ্ধে জয়লাভ করে। ঐতিহাসিক তাবরানির মতে, যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যায়। তবে কোনো কোনো বর্ণনায় দুই লাখেরও উল্লেখ আছে। শত্রু বাহিনীর শেষরক্ষার জন্য এ যুদ্ধ ছিল তাদের মরণকামড় ও অন্তিম লড়াই।

৩৭ হিজরি জিলকদ মাসে মুয়াবিয়া (রা.) খিলাফতের আসনে সমাসীন হন। ৪৬৪ হিজরি, ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক ‘মালাজগিরদের যুদ্ধ’ অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টান রোম সম্রাট চতুর্থ রোমানোসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন বাদশাহ আরসালান। এ যুদ্ধে রোম সম্রাটের পরাজয়ে ওই অঞ্চলে খ্রিস্টানদের আধিপত্য লোপ পায়। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল জিলকদ মাসে।

জিলকদ মাসে বিশেষ আমল না থাকলেও স্বাভাবিক আমলগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা কর্তব্য। এ মাসে ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখের রোজা (আইয়ামে বিজ) রাখা যায়। সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজাসহ অন্যান্য মাসের সাধারণ নফল নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তসবিহ-তাহলিল, তেলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি পাঠ করা যায়। এছাড়াও পরবর্তী মাস জিলহজের ৯টি সুন্নত রোজা ও মহররমের ১০টি রোজার প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে আরও কিছু নফল রোজা রাখা যায়। নফল রোজার ফজিলত অসীম। এক হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে তার থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ২৫৬৫, খণ্ড-৬)

আর যাদের ওপর হজ ফরজ তারা হজের সকল প্রস্তুতি করবেন। যারা হজ করেন না, তাদের রয়েছে কোরবানির আমল। মনে রাখতে হবে, জিলহজ মাসের শুরুর ১০ দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব অসামান্য। হাদিস শরিফে এই ১০টি দিনের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এভাবে- ‘এমন কোনো দিন নেই, যে দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে জিলহজ মাসের এই ১০  দিনের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয়’ (তিরমিজি: ৭৫৭)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর