মৃত্যু অবধারিত বিষয়। আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত হায়াত শেষে দুনিয়ার বন্ধন ছাড়তে হয় প্রত্যেককে। এতে প্রিয় মানুষদের, আপনজনদের বিরহ-যাতনা ও কষ্টের সীমা থাকে না। তবুও আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ধৈর্য ধরতে হয়। এই অবস্থায় বেশি আহাজারি করা, বিলাপ করা ইসলামে নিষেধ। এতে মৃতব্যক্তির কষ্ট হয়। হজরত ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম (স.) বলেছেন- الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ ‘মৃত ব্যক্তিকে বিলাপের বিষয়ের উপর কবরে শাস্তি দেওয়া হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১২৯২)
মৃতব্যক্তির জন্য হাউমাউ করে কাঁদা, জামা ছিঁড়ে ফেলা জাহেলিয়াত বা মূর্খতা। এর দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর অসন্তুষ্টি প্রমাণ হয়। এতে নিজেরও অনেক বড় ক্ষতি হয়। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ليس مِنَّا من ضرب الْخُدُودَ، وشَقَّ الْجُيُوبَ، ودعا بِدَعْوَى الجاهلية ‘যারা (শোকে) গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলি যুগের মতো চিৎকার দেয় তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি: ১২২০)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: জানাজার নামাজসহ ৪ আমলে নিশ্চিত জান্নাত
মাতম করা কুফুরির পর্যায়ের অন্যায়। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে দুটি চরিত্র কুফুরির পর্যায়ের। একটি হলো বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা আর অপরটি হলো কোনো মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বিলাপ করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৭)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষতকারিনী, পকেট বিদীর্ণকারী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস প্রার্থনাকারীণীর ওপর লানত করেছেন।’ (ইবনে মাজা: ১৫৮৫) অন্য বর্ণনামতে, ‘মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে কেয়ামতের দিন তাকে আলকাতরার পাজামা ও খোস- পাঁচড়ার ঢাল পরিহিতা অবস্থায় দাঁড় করানো হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৩৪)
আরও পড়ুন
রমজানে কবর আজাব কি মাফ থাকে?
কবর আজাবের কারণ ও মুক্তির উপায়
বিজ্ঞাপন
সুতরাং প্রিয়জন মারা গেলে ব্যথিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা উচিত। আর ধৈর্য ধারণ করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি চোখের পানি চলে আসে কিংবা কান্নার মৃদু মৃদু আওয়াজ বের হয়ে যায় তাহলে এটা দোষণীয় নয়। কেননা অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন- ما لِعَبْدِي المُؤْمِنِ عِندِي جَزاءٌ، إذا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِن أهْلِ الدُّنْيا ثُمَّ احْتَسَبَهُ، إلَّا الجَنَّةُ ‘আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয়বস্তু দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্যধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু (প্রতিদান) নেই।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪২৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুক। আমিন।