এক বছর পর আবারও আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মহিমান্বিত মাস রমজান দিয়েছেন, ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগ দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। মহান এই মৌসুমের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে- إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِين ‘যখন রমজান মাস প্রবেশ করে, বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’ রোজাদারের অনেক মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদান রয়েছে আল্লাহর কাছে। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ২৭৬০)
রমজানকে বলা হয় জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মৌসুম। তবে এজন্য রমজানকে সঠিকভাবে কাজে লাগতে হবে। ঈমানকে পুষ্ট করার মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ বান্দায় পরিণত হতে নামাজ রোজার মতো দোয়াও করতে হবে। দোয়া স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। দোয়াকে বলা হয় ইবাদতের মূল। বান্দার দোয়া কবুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩২০)
বিজ্ঞাপন
সুতরাং পবিত্র রমজানে আমরা দোয়া থেকে বিমুখ হতে পারি না। রমজানের দিন-রাতে যেকোনো দোয়া করা যায়। এখানে খুব সুন্দর ৫টি দোয়া তুলে ধরা হলো।
১. রমজানে দিন-রাতে যে দোয়া বেশি পড়বেন
أَشهَدُ أَن لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله، أَستَغفِرُ الله، نَسأَلُكَ الجَنَّةَ ونَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّار উচ্চারণ: ‘আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, নাস-আলুকাল-জান্নাতা ওয়া নাউযু বিকা মিনান-নার।’ অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো ইলাহ নেই, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, আমরা (হে আল্লাহ) আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং আমরা আপনার কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।’
আরও পড়ুন: ইফতারের সময় করণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
নবী (স.) একবার শাবান মাসের শেষদিন এক ভাষণে বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ খুব বেশি করে করবে। দুটি কাজ দ্বারা তোমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। আর দুটি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই। যে দুটি কাজ দ্বারা তোমরা প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে তা হলো- তোমরা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিতে থাকবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। যে দুটি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই তা হলো- তোমরা জান্নাত প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৭)
বিজ্ঞাপন
উল্লেখিত দোয়াটি হাদিসেরই নির্যাস। হাদিসে নির্দেশিত ৪টি বিষয় রয়েছে দোয়াটিতে। আলেমরা হাদিসের উপর ভিত্তি করে উপরের দোয়াটি পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
২. ইফতারের সময় দোয়া
ইফতারের মুহূর্তটি অতি মূল্যবান। এটি দোয়া কবুলের সময়। তাই ইফতারের সময় দোয়া থেকে অলস হওয়া বাঞ্ছণীয় নয়। রাসুল (স.) ইফতারের সময় এই দোয়া পড়তেন—اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ (আবু দাউদ: ২৩৫০, মুজামুল আওসাত: ৭৫৪৯)
রাসুল (স.) ইফতারশেষে এ দোয়া পাঠ করতেন—ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله ‘জাহাবাজ জামাউ ওয়াব তাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহু।’ অর্থ: (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো। (আবু দাউদ: ২৩৫৭)
মহানবী (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)
৩. তারাবি নামাজের পর দোয়া
তারাবি নামাজ শেষে এই সুন্দর দোয়াটি করতে পারেন- بِسمِ اللهِ الرَّحمَنِ الرَّحِيْم. الحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِيْن، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى أَشْرَفِ الأَنْبِيَاءِ وَالمُرْسَلِيْن سَيِّدِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْن اَللَّهُمَّ اجْعَلْناَ بِالْإِيْمَانِ كَامِلِيْنْ، وَلِلْفَرَآئِضِ مُؤَدِّيْنَ، وَلِلصَّلَاةِ حَافِظِيْنَ، وَلِلزَّكَاةِ فَاعِلِيْنَ، وَلِمَا عِنْدَكَ طَالِبِيْنَ، وَلِعَفْوِكَ رَاجِيْنَ، وَبِالْهُدَى مُتَمَسِّكِيْن، وَعَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضِيْنَ، وَفِي الدُّنْيَا زَاهِدِيْنَ، وَفِي الْأَخِرَةِ رَاغِبِيْنَ، وَبِالْقَضَاءِ رَاضِيْنَ، وَبِالنَّعْمَاءِ شَاكِرِيْنَ، وَعَلَى الْبَلاءِ صَابِرِيْنَ، وَتَحْتَ لِوَاءِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ سَائِرِيْنَ، وَإِلَى الْحَوْضِ وَارِدِيْنَ، وَفِي الْجَنَّةِ دَاخِلِيْنَ، وَمِنَ النَّارِ نَاجِيْنَ، وَعَلَى سَرِيْرَةِ الْكَرَامَةِ قَاعِدِيْنَ، وَبِحُوْرِ عيْنٍ مُتَزَوِّجِيْنَ، وَمِنْ سُنْدُسٍ وَاِسْتَبْرَقٍ وَدِيْبَاجٍ مُتَلَبِّسِيْنَ، وَمِنْ طَعَامِ الْجَنَّةِ آكِلِيْنَ، وَمِنْ لَبَنٍ وَعَسَلٍ مُصَفًّى شَارِبِيْنَ، بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيْقَ وَكَأْسٍ مِنْ مَعِيْنٍ، مَعَ الَّذِيْنَ أَنعَمْتَ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّين والصِّدِّيقِينَ والشُّهَدَاءِ والصَّالِحِين، وحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا، ذَلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ وَكَفَى بِاللهِ عَلِيْمًا، وَالحَمدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ
আরও পড়ুন: তারাবি নামাজ: সুন্নাহভিত্তিক নিয়ম ও দোয়া
অর্থ: ‘পরম করুণাময় আল্লাহর নামে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। দোয়া ও সালাম বর্ষিত হোক নবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, আমাদের নেতা মুহাম্মদ (স.) এবং তাঁর সমগ্র পরিবার ও সাথিদের উপর। হে আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা পূর্ণ ঈমান রাখে, সকল ফরজ পালন করে, নামাজের হেফাজত করে, জাকাত দেয়, আপনার কাছে যা প্রাপ্য তা চায়, আপনার ক্ষমার আশা করে, হেদায়েতকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে, অনর্থক কাজ থেকে দূরে থাকে, বাড়াবাড়ি করে না। পার্থিব সুখের জন্য আগ্রহী, পরকালের জন্য নিবেদিত, খোদায়ী আদেশে সন্তুষ্ট, আপনার অনুগ্রহে কৃতজ্ঞ, পরীক্ষার সময় ধৈর্যশীল, আমাদের নেতা (সায়্যিদিনা) মুহাম্মদ (স.)-এর পতাকাতলে যারা হাঁটবেন। কেয়ামতের দিন নবীর কূপের কাছে পৌঁছাবেন, জান্নাতে প্রবেশ করবেন, জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবেন, সম্মানিত গদিতে (জান্নাতের) বসবেন, জান্নাতের সাথীদের সাথে বিয়ে, সিল্ক ও ব্রোকেডের পোশাকে (জান্নাতের) সুশোভিত হবেন, জান্নাতের খাবার খাবেন, পান করবেন দুধ ও খাঁটি মধু এবং পানপাত্রে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণা থেকে, তাদের সাথে আপনি বরকত দান করুন। আপনি তাদের জন্য নবী, সত্যবাদী, শহীদ, সৎকর্মশীল এবং উত্তম সঙ্গী দান করেছেন, এটাই আল্লাহর অনুগ্রহ এবং আল্লাহই সর্বজ্ঞাতা হিসেবে যথেষ্ট এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’
তাছাড়া তারাবি নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার পালনকর্তা। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার দাস। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার কাছে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার প্রতি আপনার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা আপনি ছাড়া পাপগুলো ক্ষমা করার কেউ নেই।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এটা সাইয়েদুল ইস্তেগফার (সর্বোত্তম তাওবা)। যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতি হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
৪. বিতির নামাজের পর দোয়া
বিতরের নামাজ শেষ করার পর রাসুল (স.) তিনবার পড়তেন-سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ উচ্চারণ: ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দু-স।’ অর্থ: ‘অতি পবিত্র নিষ্কলুষ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’ (আবু দাউদ: ২/৬৫, নং ১৪৩০; নাসায়ি: ৩/২৩৫, নং ১৬৯৯; সহিহ ইবনু হিব্বান: ৬/২০৩, মুসতাদরাক হাকিম: ১/৪০৬)
আরও পড়ুন: সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভাঙলে কাফফারার নিয়ম কী
এরপর সুন্দর অর্থপূর্ণ এই দোয়াটি করা যায়— بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْم. الحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِيْن، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى أَشْرَفِ الأَنْبِيَاءِ وَالمُرْسَلِيْن سَيِّدِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ وعَلَى آلِهِ وَصَحبِهِ أَجمَعِين. إِلَهَنَا قَد تَعَرَّضَ لَكَ فِي هَذِهِ اللَّيلَةِ المُتَعَرِّضُون، وَقَصَدَكَ القَاصِدُون، وَرَغِبَ في جُودِكَ وَمَعرُوفِكَ الطَّالِبُون، وَلَكَ فِي هَذِهِ اللَّيلَةِ وَكُلِّ لَيلَةٍ مِن لَيَالِي شَهرِ رَمَضَان نَفَحَاتٍ وَجَوَائِزَ وَمَوَاهِبَ وَعَطَايَا تَجُودُ بِهَا عَلَى مَنْ تَشَاءُ مِنْ عِبَادِك، فَاجْعَلْنَا اللَّهُمَّ مِمَّنْ سَبَقَتْ لَهُ مِنْكَ العِنَايَة، هَا نَحْنُ نَدْعُوكَ كَمَا أَمَرْتَنَا، فَاستَجِبْ مِنَّا كَمَا وَعَدْتَنَا، إِنَّكَ لاَ تُخْلِفُ المِيْعَاد، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِين. اللَّهُمَّ يَا فَارِقَ الفُرقَانِ وَمُنزِلَ القُرآنِ بِالحِكمَةِ وَالبَيَان অর্থ: ‘পরম করুণাময় আল্লাহর নামে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য এবং বরকত ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী ও রসূলদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত, আমাদের প্রভু ও ওস্তাদ মুহাম্মদ এবং তাঁর সমস্ত পরিবার ও সাথিদের উপর। হে আমাদের প্রতিপালক, সীমালঙ্ঘনকারীরা এই রাতে আপনার ক্ষমা আশা করেছে, সন্ধানকারীরা আপনাকে সন্ধান করছে এবং অনুসন্ধানকারীরা আপনার কল্যাণ ও দয়া কামনা করছে এবং আপনার কাছে এই রাত এবং আমার প্রতিটি রাত রয়েছে। রমজান মাসের জন্য রয়েছে বরকত, পুরষ্কার, প্রতিভা এবং উপহার যা আপনি আপনার বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তাকে দান করেন। সুতরাং হে আল্লাহ, আমাদেরকে তাদের মধ্যে পরিণত করুন যাদের জন্য আপনার যত্ন অগ্রগণ্য। আমরা আপনাকে ডাকছি যেমন আপনি আমাদের আদেশ করেছেন। সুতরাং আপনি আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে সাড়া দিন। আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন না, হে পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, মাপকাঠির বিভাজনকারী এবং জ্ঞান ও স্পষ্টীকরণের সাথে কোরআনের নাজিলকারী।’
এছাড়াও আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে পারেন— بَارِكِ اللَّهُمَّ لَنَا فِي شَهْرِ رَمَضَان ‘বারিক আল্লাহুম্মা লানা ফি শাহরি রমাদান।’ অর্থ: ‘রমজান মাসে আমাদের দয়া করুন।’
অথবা এই বিতিরশেষে এই সুন্দর দোয়াটি করুন— اللَّهُمَّ أَجِرْنَا مِنَ النَّارِ سَالِمِين وَأَدْخِلْنَا الجَنَّةَ آمِنِين، وَأَلحِقنَا باِلصَّالِحِين، ومَتِّعنَا بِالنَّظَرِ إِلَى وَجهِكَ الكَرِيم، يَا رَبَّ العَالَمِين অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমাদেরকে নিরাপদে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন এবং নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের সঙ্গে যুক্ত করুন এবং আমাদেরকে আপনার উদার মুখের দিকে তাকানোর আনন্দ দান করুন, হে বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’
এছাড়াও বিতিরশেষে পড়তে পারেন— اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّا اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنَّا صَلاتَنَا وَصِيَامَنَا وَقِيَامَنَا وَرُكُوعَنَا وَسُجُودَنَا وَتَخَشُّعَنَا وَتَضَرُّعَنَا وَتَعَبُّدَنَا وَتَمِّم تَقْصِيْرَنَا يَا الله يَا أَرحَمَ الرَّاحِمِين. وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى الِهِ وَصَحبِهِ وَسَلَّمَ وَالحَمدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাদের ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা, আমাদের রোজা, আমাদের দাঁড়ানো, আমাদের নতজানু হওয়া, আমাদের সেজদা, আমাদের বিনয়, আমাদের প্রার্থনা, আমাদের ইবাদত, এবং আমাদের ত্রুটিগুলিকে পূর্ণ করুন, হে আল্লাহ, হে পরম করুণাময়ের পরম করুণাময়। হে আমাদের প্রভু, মুহাম্মদ (স.) এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের উপর আল্লাহর দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তার জন্য।’
৫. লাইলাতুল কদরে দোয়া
একটি হাদিসে নবী (স.) তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-কে উৎসাহিত করেছেন লাইলাতুল কদরে মিলিত হলে উক্ত দোয়াটি পড়তে, যে রাতটিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। দোয়াটি হলো- اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি সত্যিই ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)
বরকতের মাস রমজানে আল্লাহ তাআলা আমাদের ইবাদত কবুল করুন। উল্লেখিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

