শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা ইসলামে কঠিনভাবে নিষেধ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা ইসলামে কঠিনভাবে নিষেধ

ইসলামে মারাত্মক পাপগুলোর অন্যতম হলো সরলমনা মুমিন নারীর চরিত্র নিয়ে মিথ্যারোপ করা। কেননা নারীর প্রতি অপবাদ তার সংসার, সামাজিক সুনাম, আত্মীয়তার সব সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) আছে মহা শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)

দুঃখজনকভাবে নারীদের চরিত্র নিয়ে কথা বলার চর্চা বেড়ে চলেছে সমাজে। অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এই জঘন্য কাজে লিপ্ত। নবীজির দৃষ্টিতে তারা খুব নিকৃষ্ট মানুষ। হাদিস শরিফে শিরক, জাদু, হত্যার মতো ভয়ংকর গুনাহের তালিকায় এই গুনাহটিও রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি সর্বনাশা কাজ থেকে দূরে থাকো। সকলে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তা কী কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, জাদু করা, ন্যায় সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) যুদ্ধের দিন পলায়ন করা এবং সতী উদাসীনা মুমিন নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি: ২৭৬৬, ৬৮৫৭, মুসলিম: ২৭২)

ইসলামে পর্দার বিধান শুধু নারীদের জন্য নয়
নারী-পুরুষ একে অপরকে সালাম দেওয়া জায়েজ?

নারীর বিরুদ্ধে কেউ অপবাদ দিলে ইসলামি নির্দেশনা হলো- চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে না পারলে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হবে, তার সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তার পরিচয় হয়ে যাবে ফাসিক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সৎ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিল, অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তাহলে তোমরা তাদের ৮০ বেত্রাঘাত করো, কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নুর: ৪-৫)

এটি ছোটখাটো অপরাধ নয় যে, অপবাদদাতাকে ছেড়ে দেওয়া হবে কিংবা কোনো শাস্তি ছাড়াই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে সাবধান করে বলছেন- ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর অপরাধ।’ (সুরা নুর: ১৫)


বিজ্ঞাপন


ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, হিলাল ইবনু উমাইয়া নবী (স.)-এর নিকট তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শারিক ইবনু সাহমা’র সঙ্গে ব্যভিচারের অভিযোগ করলে নবী (স.) বললেন, হয় তুমি প্রমাণ পেশ করবে, নয় তোমার পিঠে দণ্ড আপতিত হবে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ কি আপন স্ত্রীর ওপর অপর কোনো পুরুষকে দেখে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য ছুটে যাবে? কিন্তু নবী (স.) একই কথা বলতে থাকলেন, হয় প্রমাণ পেশ করবে, নয় তোমার পিঠে বেত্রাঘাতের দণ্ড আপতিত হবে। তারপর তিনি লি‘আন... সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করলেন। (সহিহ বুখারি: ২৬৭১)

নারীদের যথাযথ সম্মান দিয়েছে ইসলাম
হাদিসের আলোকে ‘নেককার স্ত্রী’ চেনার উপায়

অপবাদ দুই ধরনের। ১. যে অপবাদে ইসলামে নির্দিষ্ট পরিমাণের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। যেমন—ব্যভিচারের প্রকাশ্য অপবাদ অথবা কারো বংশীয় পরিচয় অস্বীকার করা। ২. যে অপবাদে ইসলামে নির্দিষ্ট পরিমাণের কোনো শাস্তি নেই। এমন অপবাদের ক্ষেত্রে অপবাদকারীকে শিক্ষামূলক কিছু শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে। যেসব কারণে অপবাদকারীকে বেত্রাঘাত করতে হয় না, সেগুলো চার ধরনের। যেমন—

১.  যাকে অপবাদ দেওয়া হলো সে অপবাদকারীকে ক্ষমা করে দিলে।

২.  যাকে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সে অপবাদকারীর অপবাদকে স্বীকার করলে।

৩.  অপবাদকারী অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দাঁড় করালে।

৪.  পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে নিজেকে লানত করতে রাজি হলে।

এই চার অবস্থায় অপবাদকারীকে বেত্রাঘাত করতে হয় না। অপবাদ থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হলো- মানুষের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা এবং অনুমান থেকে দূরে থাকা। কারো কোনো দোষ-ত্রুটি শুনলেই যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্বাস না করা এবং এ বিষয়ে প্রচার না করা। (সুরা হুজরাত: ১২; মুসলিম: ৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর