তাবলিগ জামায়াতের বড় ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হবে। প্রথম পর্ব গত শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়। এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে পরের শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাদপন্থী মুসল্লিরা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিচ্ছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই বছরের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।
তাবলিগ জামাতে দুই দলের প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এরপর হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী’র উপস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয়। এতে সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে। একটি হলো সাদপন্থী, অন্যটি শূরাপন্থী (তথা আলেমদের সম্মিলিত জোট)।
বিজ্ঞাপন

শূরার মুরুব্বিদের বর্ণনা অনুযায়ী বিরোধের মূল কারণ হলো- মাওলানা সাদ নানা সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন, যা কোরআন-হাদিসের বিপরীত। তার সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে এসে তার বক্তব্য প্রচার করলে ফেতনা বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন: তাবলিগের বিভাজন নিয়ে আরশাদ মাদানীর বক্তব্যে তোলপাড়
এরপর থেকে কোনো বছর মাওলানা সাদ কান্ধলভি বিশ্ব ইজতেমায় অংশে নিতে পারেননি। যদিও তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন, কিন্তু তার আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হলে তিনি ইজতেমা প্রাঙ্গণে উপস্থিত না হয়েই দিল্লি ফিরে যান।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এদিন সন্ধ্যার মধ্যে মাওলানা সাদের বিশ্ব ইজতেমায় যোগদান নিশ্চিত করতে ভিসা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাদপন্থী গ্রুপ সাধারণ মুসল্লি পরিষদ। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুফতি মুয়াজ বিন নূর বলেন, প্রতিবছর আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু শেষপর্যন্ত তার আসার ব্যবস্থা করা হয় না। এ বছর উনাকে আসতে না দেওয়ার কোনো উপযুক্ত কারণ নেই। দেশে এত পুলিশ, র্যাবসহ শান্তি শৃঙ্খলা বাহিনীর অগণিত সদস্য থাকার পরও কেন তাকে নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না? না পারলে দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দেন। আমরা জানবাজী রেখে তার নিরাপত্তা বিধান করব ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুন: দাওয়াত ও তাবলিগ কেন গুরুত্বপূর্ণ
তাছাড়া প্রতিবছর কেন একটি গ্রুপকে প্রথমবার ইজতেমা করার অনুমতি দেওয়া হয় সেই প্রশ্নও তোলা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। মুফতি মুয়াজ বিন নূর বলেন, আগামী ইজতেমায় প্রথম ধাপে আমাদের ইজতেমা করার অনুমতি এবং আজ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মাওলানা সাদকে বাংলাদেশের ভিসা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে সাধারণ মুসল্লি পরিষদ বাংলাদেশ এবং বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা যেকোনো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে।
এর আগে গত সপ্তাহে একই দাবিতে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে মানববন্ধন করেছে সাদ সমর্থকেরা।
এদিকে মাওলানা সাদকে আসার অনুমতি দিলে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি রয়েছে শূরাপন্থী মুরুব্বি ও সমর্থকদের। এর কারণ হিসেবে তাদের ব্যাখ্যা হলো- তার বয়ান শুনে সাধারণ মুসলিমদের দ্বীনি চেতনা ও কর্মযজ্ঞে ফেতনা তৈরি হবে। তাই তার এ দেশে আসার চেয়ে দ্বীনি ক্ষতি ও বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা এড়ানো বেশি ভালো।
এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত মাওলানা সাদ বাংলাদেশে আসবেন না বলেই ধরে নেওয়া যায়। কারণ সরকার সাধারণত চাইবে না মুসলিম-মুসল্লিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ুক কিংবা পরিস্থিতি আরও জটিল হোক।

