রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তাবলিগের বিভাজন নিয়ে আরশাদ মাদানীর বক্তব্যে তোলপাড়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

তাবলিগের বিভাজন নিয়ে আরশাদ মাদানীর বক্তব্যে তোলপাড়

তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের বিরোধ মীমাংসায় জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাবলিগের উভয় গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। অনেকে এই বক্তব্যের সমর্থন ও সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, তিনি সঠিক কথাই বলেছেন, মুসলিমদের পতন ঠেকাতে অনতিবিলম্বে সবাইকে এক হতে হবে। কেউ বলছেন- শীর্ষস্থানীয় আলেমরা সবসময় এক হওয়ার তাগিদ দিয়ে আসছেন, কিন্তু এদেশের আলেমরা তাতে কর্ণপাত করে না। আবার কেউ বলছেন- এই বক্তব্য হকের দলিল নয়, এতে সাদ সাহেবের ভুলগুলো সঠিক প্রমাণিত হয় না। 

এরকম নানা মন্তব্য, আলাপ-আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গতকাল (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের খতমে বুখারি অনুষ্ঠানে সায়্যিদ আরশাদ মাদানী তাবলিগের বিরোধ মীমাংসা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের, উভয়পক্ষই সত্যের ওপর রয়েছে। আমাদের উচিত কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করা। কেউ কাউকে কাফের বা ফাসেক বলে নিজের ঈমান ও আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না। যারা এতদিন এসব করেছেন তারা তওবা করুন। সবাই মুসলমান, সবাই নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন।


বিজ্ঞাপন


আরশাদ মাদানীর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই সাধারণ মুসল্লি থেকে শুরু করে তাবলিগ জামাতের উভয়পক্ষের লোকজন গতকাল থেকে নিজ নিজ মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে থাকেন। সাদপন্থী মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মাওলানা আরশাদ মাদানী এমন বক্তব্য আগেও দিয়েছেন। নিজে নিজামুদ্দিন মারকাজে গিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশের আলেমরা তা বিশ্বাস করতে চান না ও স্বীকার করেন না। গতকাল হাজারো আলেমের সামনে বাংলাদেশে দিয়েছেন। এখনো বাংলাদেশে আছেন। তার কথাকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে অপব্যাখ্যা না করে তাকে উলামায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞেস করতে পারেন।’

দাওয়াত ও তাবলিগ কেন গুরুত্বপূর্ণ
ঈমান মজবুত হয় যেসব আমলে

আলেম-উলামার পক্ষের মুফতি মহিউদ্দীন কাসেমী ফেসবুকে লিখেছেন, মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী বলেছেন, এতায়াতিদের কাফের, ফাসেক বলা যাবে না, লানত করা যাবে না। এর মানে এই না যে, মাওলানা সাদ সাহেবের ভুলগুলো সঠিক হয়ে গেছে। সাদ সাহেবের ভুল, অপব্যাখ্যা, তাহরিফাত এগুলো ভুলই। তবে এতায়াতিদের সাধারণ লোকজন যারা এসব ভুল সম্পর্কে অবহিত না, তারা সঠিক পথে আছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।’

ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি ‘আমিরুল হিন্দ’ আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষকেই ঐক্যের স্বার্থে দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাবলিগের দু’পক্ষই আমাদের কাছে আসে, কথা বলে, আমরা শুনি। আমাদের দাওয়াত করে, আমরা যাই, তাদেরও আমরা দাওয়াত করি। আমাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। দু’পক্ষ একই মেহনত করে। দু’পক্ষের জামাতই আল্লাহর রাস্তায় বের হয়। তাই আমরা বলি, কোনো একপক্ষকে ভালোবাসার কারণে অপরপক্ষকে কাফের বলা, পথভ্রষ্ট বলা ভয়াবহ গুনাহ। এতে করে অন্যপক্ষ কাফের হবে না বরং আপনার ইমানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে স্থায়ী হলো যেভাবে
তাবলিগ জামাতের ছয় মূলনীতি

আরশাদ মাদানী আরও বলেন, সাদ সাহেবেরে যে ভুলভ্রান্তি হয়েছে সে ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে ফতোয়া চাওয়া হয়েছিল। আমরা ফতোয়া দিয়েছি। তিনি (মাওলানা সাদ) নিজের ভুল বিষয়গুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তখন সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। কেউ দুনিয়ার স্বার্থে আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না।

আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানির ছেলে ও সাইয়্যেদ আসআদ মাদানির ভাই । বর্তমানে তাকে ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী আলেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে তার অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রয়েছে। ২০২০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও ২০২১ সালে তিনি পঞ্চম ‘আমিরুল হিন্দ’ নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলিগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালে। এরপর কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী’র উপস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয়। এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকেই তাবলিগ জামাতের দু’দলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর