সফরকারীকে শরিয়তের বিধি-বিধানে কিছু শিথিলতা দিয়েছে ইসলাম। যেমন চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে। সফর অবস্থায় কেউ ফরজ নামাজ ইচ্ছাকৃত চার রাকাত পূর্ণ করলে গুনাহ হবে। এক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পড়া শুরু করে এবং যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সাহু-সেজদা করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না, পুনরায় পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৯১)
বিজ্ঞাপন
মুসাফিরের নামাজের এই কসর বা সংক্ষিপ্তকরণ শুধু ফরজের ক্ষেত্রে। সুন্নত পড়লে পুরোটাই পড়বে। কেননা সুন্নত নামাজের কসর হয় না। অনেকে মনে করে থাকেন, সফর অবস্থায় সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না। এটি সঠিক ধারণা নয়। সফরের শান্তিপূর্ণ অবস্থায় সুন্নত নামাজ পড়াই উত্তম। বিশেষত ফজরের সুন্নত সফর অবস্থায়ও অধিক গুরুত্ব রাখে। সুতরাং ‘সফর অবস্থায় সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না’ ঢালাওভাবে এমন মনে করা ঠিক নয়।
আরও পড়ুন: বিয়ের পর নারীরা কি বাবার বাড়িতে মুসাফির?
মুসাফির ব্যক্তির জন্য চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (এলাউস সুনান: ৭/১৯১, রদ্দুল মুহতার: ১/৭৪২; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৩৯)
কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে তার এলাকা পেরুলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬, আহসানুল ফতোয়া: ৪/১০৫)
বিজ্ঞাপন
আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগের সমান, অর্থাৎ স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/৭৩৫)
আরও পড়ুন: হাজিদের নামাজের বিধান কি মুসাফিরের মতো?
শহরের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার সীমানা বলতে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সীমানাকে বুঝাবে। সফর থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের মাধ্যমেই তার সফরের বিধান শেষ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুখতার: ২/১২৮)
পার্বত্য এলাকায় সফরও সমতলে চলার হিসেবেই হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালুসহ দূরত্বের হিসাব হবে।’ (ফাতহুল কাদির: ২/৩১, আল বাহরুর রায়েক: ২/২২৯)
কোনো জায়গায় ১৫ দিন বা ততোধিক অবস্থানের নিয়ত করলে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানাসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১০৪)