রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য

টঙ্গীর ‍তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। ইতিমধ্যে তাবলিগ জামাতের সাথীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে ইজতেমা ময়দান। অনেকে অবস্থান নিয়েছেন মাঠের পাশের রাস্তা ও ফুটপাতে। প্রতিবারের মতো এবারও জনসমুদ্রে পরিণত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। 

বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪ এর প্রথম পর্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা আগামীকাল শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। এ পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। 


বিজ্ঞাপন


আপন রব সম্পর্কে অজ্ঞ ও দ্বীনবিমুখ মানুষকে আল্লাহমুখী করতে ১৯২৪ সালে ঈমানি এই জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবী (রহ.)। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আধুনিক বিশ্বে আল্লাহর রাসুলের দ্বীনকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে এই জামাত। এই জামাতের মানুষগুলোর মিলনমেলা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বাঙ্গনে বাংলাদেশকে দিয়েছে এক নতুন পরিচিতি।

আরও পড়ুন: ইজতেমায় কে কখন বয়ান করবেন

তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য
রাসুল (স.) এর সঙ্গে থেকে সাহাবারা যেসব আমল করে আল্লাহ তাআলার প্রিয় হয়েছেন, আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন সেই গুণগুলো অর্জন করে জীবন পরিচালনার আহ্বান করে তাবলিগ জামাত। তাবলিগ জামাত মানুষকে আল্লাহর পথে চলার আহ্বান করে, ব্যক্তি জীবনের কাজ-কর্ম, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, অন্য সবকিছুর সঙ্গে মিলিয়ে ইসলামি বিধান ও রাসুলের নির্দেশ পালন করা যে কষ্টসাধ্য বিষয় নয়—তা শেখাতে চায় তাবলিগ জামাত।

ইলিয়াস (রহ.) বলেন, ‘আমি এই তাহরিকের (ঈমানি আন্দোলন) মাধ্যমে প্রত্যেক জায়গায় ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীন এবং দুনিয়াদারদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন, মিল-মহব্বত ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে চাই।’ (মালফুজাত: মালফুজ নম্বর ১০২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: তাবলিগ জামাতের ১৯ কার্যক্রম

ইলিয়াস (রহ.) আরও বলেন, ‘আমাদের এই তাবলিগি মেহনত ব্যাপকভাবে দ্বীনি তালিম ও তরবিয়ত বিস্তার করা এবং ব্যাপকভাবে দ্বীনি জীবন গঠন করার মেহনত। আর এর উসুল (মূলনীতি) যথাযথভাবে পালন করার মধ্যেই কামিয়াবি ও সফলতা নিহিত। এই মেহনতের গুরুত্বপূর্ণ একটি উসুল (মূলনীতি) হলো- মুসলমানদের যে শ্রেণি-পেশার জন্য আল্লাহ তাআলা যে হক (মর্যাদা ও অধিকার) রেখেছেন সেগুলোকে আদায় করে তার সামনে এই দাওয়াত পেশ করা। মুসলমানদের তিনটি স্তর আছে: এক. হতদরিদ্র শ্রেণি। দুই. উন্নত শ্রেণি (ইজ্জতওয়ালা কিংবা ধনী)। তিন. ওলামায়ে দ্বীন। তাদের সঙ্গে যে আচরণ করতে হবে তা একত্রে এই হাদিসের মধ্যে উল্লেখ আছে: ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করল না, বড়দের সম্মান করল না এবং ওলামায়ে কেরামের ইজ্জত করল না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মালফুজাত: মালফুজ নম্বর ১৩৫)

আরও পড়ুন: বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে স্থায়ী হলো যেভাবে

তিনি (রহ.) বলেন, ‘তাবলিগি কাজের একটি উসুল (মূলনীতি) হলো- স্বাধীনভাবে নিজের মনমতো না চলা; বরং নিজেকে ওই সব বুজুর্গের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করা—যাদের ওপর দ্বীনি বিষয়ে আমাদের পূর্ববর্তী আকাবির (শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি) হজরতরা আস্থা রেখে গেছেন এবং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে যাদের খাস সম্পর্কের ব্যাপারটি পরিজ্ঞাত ও সর্বস্বীকৃত। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পর সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ নিয়ম এই ছিল যে নবীজি (স.) যাদের ওপর বেশি আস্থা রেখেছিলেন তারাও তাদের ওপর বেশি আস্থা রাখতেন। পরবর্তী যুগে বেশি আস্থার পাত্র ছিলেন ওসব বুজুর্গানে দ্বীন, যাদের ওপর আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) আস্থা রেখেছিলেন।’ এরপর তিনি (রহ.) বলেন, ‘দ্বীনের কাজে আস্থাশীল ব্যক্তি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা জরুরি। অন্যথায় অনেক বড় ধরনের গোমরাহির আশঙ্কা আছে।’ (মালফুজাত: মালফুজ নম্বর ১৪৩)

‘আমাদের তাবলিগি কাজের সাথীদের তিন শ্রেণির লোকদের কাছে তিন উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে যাওয়া উচিত: এক. ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীনের খেদমতে গিয়ে দ্বীন শেখা ও দ্বীনের ভালো প্রভাব গ্রহণ করা। দুই. নিজের চেয়ে নিম্নশ্রেণির লোকদের মধ্যে দ্বীনি কথাবার্তা প্রচার করে নিজের দ্বীনের মধ্যে মজবুতি (দৃঢ়তা) অর্জন করা এবং নিজের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করা। তিন. বিভিন্ন শ্রেণির লোকদের কাছ থেকে তাদের ভালো গুণাবলী গ্রহণ করা।’ (মালফুজাত: মালফুজ নম্বর ৮৬)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর