বাবা-মা তুলে গালি দেওয়ার বদভ্যাস রয়েছে অনেকের। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এমন গালি দেয় মানুষ। খুবই অদ্ভুত বিষয় হলো- কেউ কেউ কাছের বন্ধুকে কিংবা বিশ্বস্ত কর্মচারীকেও সাধারণ কথাবার্তায় এ ধরনের গালি দিয়ে থাকে। এটি তাদের সাধারণ অভ্যাস এবং এতে তারা কষ্টও অনুভব করে না। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য। দেশের কিছু এলাকায় যুবকদের মধ্যে এরকম স্বভাব দেখা যায়। অথচ বাবা-মা তুলে গালি দেওয়ার পরিণতি খুবই খারাপ। মূলত এতে করে নিজের মা-বাবাকেই গালি দেওয়া হয়। আর নিজের মা-বাবাকে গালি দেওয়া জঘন্য গুনাহের একটি।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, একটি অন্যতম কবিরা গুনাহ হলো পিতামাতাকে গালি দেওয়া। সাহাবিরা বিস্ময়মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন- নিজের পিতামাতাকে কেউ কেমন করে গালি দিতে পারে? নবীজি বললেন- সে অন্যের পিতামাতাকে গালি দিবে, প্রত্যুত্তরে ওই ব্যক্তি তার পিতামাতাকে গালি দিবে। (উহাই তো প্রকারান্তরে নিজের পিতামাতাকে গালি দেওয়া) (আদাবুল মুফরাদ: ২৭)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মৃত মা-বাবার জন্য সন্তানের করণীয়
সহিহ বুখারির বর্ণনায় রয়েছে, ‘কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের মা-বাবাকে অভিশাপ করা।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল! মানুষ নিজের মা-বাবাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালাগাল করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালাগাল করে থাকে। আর যে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি: ৫৯৭৩)
আরও পড়ুন: মানুষকে অভিশাপ দেওয়ার কঠিন পরিণতি
ইসলামে বাবা-মা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের গালি দেওয়া তো দূরের কথা, কোনোরকম কষ্ট যেন না পায় সে ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। কোরআনে এ ব্যাপারে অনেক আলোচনা রয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২১)
বিজ্ঞাপন
তাই কারো মধ্যে এই বদভ্যাস থাকলে দ্রুত ত্যাগ করা জরুরি। ইসলামে ছোট-খাটো গালিও অনুমোদিত নয়। উপরন্তু তা আমাদের ব্যক্তিত্বকেই খাটো করে দেয়। কোনো মুমিন গালি দিতে পারে না। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি, আর তার সঙ্গে লড়াই, ঝগড়া করা কুফুরি। (বুখারি: ৬০৪৫) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না। (তিরমিজি: ২০৪৩)
আরও পড়ুন: গুনাহ করতে করতে ক্লান্ত, তাদের জন্য কোরআনের উপদেশ
এমনকি শয়তানকেও গালি দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। এর অর্থ এই নয় যে শয়তান ভালো হয়ে গেছে। বরং সে অভিশপ্ত ও খারাপই আছে। তাকে গালি দিলেও সে সংশোধন হবে না। এজন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা শয়তানকে গালি দিয়ো না। বরং তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (সহিহুল জামি: ৭৩১৮)
অতএব, আমাদের উচিত, অশ্লীল গালাগালসহ সবরকম অশ্লীল বিষয় ত্যাগ করা। মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। রাগ এলে নিয়ন্ত্রণ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অশ্লীল গালাগালসহ সবরকম বদভ্যাস ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

