রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গুনাহ করতে করতে ক্লান্ত, তাদের জন্য কোরআনের উপদেশ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

গুনাহ করতে করতে ক্লান্ত, তাদের জন্য কোরআনের উপদেশ

আল্লাহ তাআলার রাগের চেয়ে রহমতের প্রশস্ততা বেশি। হাদিসে কুদসিতে এসেছে— سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي অর্থাৎ ‘আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে’। তাই যতই সমস্যা আসুক বা পাপ-পঙ্কিলতার কারণে জীবনকে অন্ধকার মনে হোক, আল্লাহর রহমতের আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া গুনাহের কাজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (হে রাসুল আপনি) বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো- (তোমরা) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা যুমার: ৫৩)


বিজ্ঞাপন


আয়াতের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি ঈমান আনে অথবা সত্য হৃদয়ে তওবা করে সে আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হয়ে যাবে, তার পাপ যদি সমুদ্রের ফেনা সমানও হয়, তবুও তা মাফ হয়ে যাবে। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..আল্লাহর করুণা হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না, কারণ কাফের ছাড়া কেউই আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয় না।’ (সুরা ইউসুফ: ৮৭)

আসলে শয়তান আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়, গুনাহ হলেই সে আল্লাহর বান্দাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে এবং ইবাদত থেকে গাফেল করে রাখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে মুমিন কখনও হতাশ হতে পারে না। গুনাহ হলে দ্রুততার সাথে তাওবা করাই হলো কোরআনের নির্দেশনা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার: ৫৩)

মূলত গুনাহ করা শুধুমাত্র খারাপ লোকের কাজ নয়। ভালো মানুষও গুনাহ করে। তবে তারা গুনাহের পরে তাওবা করে নেয়। নবীজি (স.) বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। -(মুসলিম: ২৭৪৮)

গুনাহ হয়ে গেলে সত্ত্বর তাওবা করা আল্লাহর পছন্দের আমল এবং এটি জান্নাতিদের গুণ। আল্লাহ তাআলা বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে—


বিজ্ঞাপন


‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)

অন্যদিকে যারা তাওবা করতে দেরি করে এবং গুনাহের ওপর অটল থাকে তাদের তাওবার সুযোগ লাভ হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘..তাওবা (কবুল) তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)

অতএব মুমিন মুসলমানের উচিত- যথাসম্ভব শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা এবং আল্লাহর কাছে এমনভাবে তওবা করা যেন তিনি তা কবুল করেন। আর তওবা কবুল ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলো— ১. পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। ২. পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৩. ওই পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। গুনাহ হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে দয়াময় আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর