সকল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ অংশ হলো সেজদা। সেজদায় গিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা সেজদার সময় সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকেন। তাই নবীজি (স.) সেজদায় গিয়ে দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সেজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দোয়া করতে থাকো।’ (মুসলিম: ৪৮২)
আলেমরা বিভিন্ন উপলক্ষে সেজদা দেওয়ার এবং সেজদায় গিয়ে দোয়া করার জন্য উৎসাহিত করে থাকেন। যেমন জীবনে বিভিন্ন সুসময় আসে, তখন শুকরিয়ার সেজদা করা যায় এবং সেজদায় গিয়ে দোয়া করা চমৎকার একটি আমল। আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপও সেজদা দেওয়া যায় এবং নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী দোয়া করা যায়। এ বিষয়ে অভ্যস্ত হওয়া দরকার।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: শুকরিয়ার সেজদায় অজু করা ও সতর ঢাকা কি জরুরি?
সিঙ্গেল সেজদার নিয়ম হলো- আল্লাহু আকবর বলে সেজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ পাঠ করবেন, এরপর উঠে যাবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, সিঙ্গেল সেজদা দেওয়ার ক্ষেত্রে নবী (স.) এই পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। এই সেজদা হবে একটি এবং এর জন্য সতর ঢাকা, অজু করা, কেবলামুখী হওয়া এবং সালাম ফেরানো শর্ত নয়। কেননা এটি নামাজ নয়, বরং শুকরিয়া আদায়মাত্র। (উসাইমিন, শারহুল মুমতে: ৪/৮৯-৯০, ১০৫)
তবে, তবে কেউ কেউ এই সেজদার ক্ষেত্রেও আদব রক্ষার কথা বলেছেন। সেজদা যেহেতু নামাজের রুকন, তাই সেজদার আদব রক্ষার্থে কেবলামুখী হওয়া, সতর ঠিক রাখা, অজু থাকা ইত্যাদিকে উত্তম বলেছেন তারা।
যেকোনো সময় দোয়া করতে হলে নবীজির অনুসরণে আল্লাহর হামদ এবং নবীজির ওপর দরুদ পাঠের পর দুরাকাত নামাজের সেজদায় গিয়ে অথবা সিঙ্গেল সেজদায় গিয়ে দোয়া করলে কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। নবীজি (স.) সেজদায় কখনো কখনো এ দোয়াটি পড়তেন— سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি। অর্থ: হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন। (বুখারি: ৭৬১; মুসলিম: ৪৮৪)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নামাজে সচরাচর ৫টি মারাত্মক ভুল
ভোর রাতে দোয়া কবুল হয় বেশি। এই সময় সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়। হাদিসে এসেছে— ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫, মুসলিম: ৭৫৮)
দোয়া কবুলের আরেকটি অন্যতম সময় হলো আরাফাতের দিন। সেদিন ওই ময়দানে থাকাবস্থায় সেজদায় গিয়ে দোয়া করলে কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনোদিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)
জাবের (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, সেদিন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, দেখো- আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোমলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আজাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মতো আর কোনোদিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৮৫৩)
আরও পড়ুন: আরাফার দিনের উত্তম দোয়া যা পূর্ববর্তী নবীরাও পড়েছেন
সেজদায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্যও বেশি বেশি সেজদা দেওয়া যায়। এতে আল্লাহভীতি বাড়বে। আমলের পাল্লা ভারী হবে। যারা সেজদা করে না, আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে না তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তাদের কী হলো যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সেজদা করে না।’ (সুরা ইনশিকাক: ২০-২১) সেজদা না দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদের সেজদা করার জন্য আহ্বান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না।’ (সুরা কলম: ৪২)
তবে, মনে রাখা উচিত- ফরজ নামাজের সেজদায় ইচ্ছামত দোয়া করা নিষিদ্ধ। ফরজ নামাজে কোরআন হাদিসে বর্ণিত নির্ধারিত দোয়া ও তাসবিহ পড়াই বিধেয়। নফল নামাজের সিজদায় দোয়া করতে চাইলে তাকে অবশ্যই কোরআন-হাদিসে বর্ণিত এমন দোয়া করতে হবে যাতে দুনিয়া আখেরাতের সব ধরনের কল্যাণ রয়েছে, যেমন ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ’। এর বাইরে বাংলায় কোনও দোয়া করা যাবে না এবং পৃথিবীতে সাধারণত মানুষের কাছে চাওয়া যায় বা পাওয়া যায় এমন কোনও দোয়াও করা যাবে না। যেমন- হে আল্লাহ আমাকে কাপড় দিন, বিয়ে দিন অথবা এক লক্ষ টাকা দিন- ইত্যাদি। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী নামাজে এভাবে দুনিয়াবি কোনও দোয়া করলে নামাজ ভেঙে যায়। (কিতাবুন নাওয়াজেল: ৪/১০৫)
অতএব, মুমিনের জন্য বিভিন্ন উপলক্ষে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি সেজদা করা উচিত। সেজদা শুকরিয়াস্বরূপ দেওয়া যায়, দোয়া করার জন্যও দেওয়া যায়। যেকোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সেজদায় লুটিয়ে দোয়া করা যায়। সেই দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

