আল্লাহর জিকির হলো ইবাদতের রুহ বা প্রাণ। মুমিন কখনও জিকির থেকে গাফেল হতে পারে না। আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা বান্দাকে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয়, গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা ইমানদারদেরকে দিনে-রাতে গোপনে-প্রকাশ্যে বেশি বেশি জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সুরা আহজাব: ৪১-৪২)
জিকিরকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। জিকিরবিমুখ বান্দাকে মৃত বলে আখ্যা দিয়েছেন নবীজি (স.)। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’(সহিহ বুখারি: ৬৪০৭)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: সারাদিন ৬ জিকিরের অবিশ্বাস্য ফজিলত
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সঙ্গে প্রত্যেক আমলই জিকির হিসেবে বিবেচিত। সেই হিসেবে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন সবকিছুই জিকির। একইভাবে তাসবিহ, তাহলিল, তাহমিদ ও তাকবিরও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত তাসবিহ, তাহলিল, তাহমিদ কিংবা নির্দিষ্ট কিছু দোয়া ও কালেমার জন্যই তাসবিহ দানা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে সমাজে। বর্তমানে যে তাসবিহ দানা বা তাসবিহ মালা ব্যবহার করা হয় তা ফুকাহায়ে কেরামের মতে জায়েজ। একে বিদআত মনে করা ভুল।
কারণ সহিহ হাদিস ও সাহাবিদের আমল থেকে আঙ্গুলের ব্যবহার ছাড়াও ভিন্ন বস্তু দ্বারা তাসবিহ গণনার প্রমাণ রয়েছে। সায়াদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি খেজুরের বিচি ও পাথরকুচি দ্বারা তাসবিহ জপতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮২)
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সমর্থন পাওয়া যায় হাদিসে। সায়াদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলে কারিম (স.) এক মহিলার গৃহে প্রবেশ করে দেখলেন, তার সামনে কিছু পাথরকুচি অথবা খেজুরের বিচি রয়েছে। সে তা দিয়ে তাসবিহ জপছে। নবীজি তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে সহজ কোনো পন্থা বলব? এরপর তিনি তাকে ফজিলতপূর্ণ একটি দোয়া শিখিয়ে দিলেন। (জামে তিরমিজি: ২/১৯৭)
উল্লেখিত হাদিসে রাসুল (স.) মহিলাটিকে পাথরকুচি দিয়ে তাসবিহ জপতে নিষেধ করেননি। কাজটি যে শরিয়তপরিপন্থী নয় তা প্রমাণের জন্য এটিই যথেষ্ট। (বাজলুল মাজহুদ: ২/৩৫৫)
তবে, আঙ্গুল দ্বারা তাসবিহ গণনা করাই উত্তম। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, ইয়ুসাইরাহ (রা.) বলেন- أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ أَمَرَهُنَّ أَنْ يُرَاعِينَ بِالتَّكْبِيرِ وَالتَّقْدِيسِ وَالتَّهْلِيلِ وَأَنْ يَعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ ‘রাসুলুল্লাহ (স.) তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকবির, তাকদিস এবং তাহলিল এগুলো খুব ভালোভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে আঙ্গুলে গুণে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কথা বলবে। (মুসনাদে আহমদ: ২৫৮৪১; আবু দাউদ: ১৫০১)
আরও পড়ুন: যেসব তাসবিহ ১০০ বার পড়তে উৎসাহিত করেছেন নবীজি (স.)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘অঙ্গুলি দ্বারা তাসবিহ গণনা করা সুন্নত। আর খেজুরদানা এবং পাথর টুকরো বা এ জাতীয় বস্ত্ত দ্বারা গণনা করা ভালো। সাহাবিদের কেউ কেউ এমন করতেন।’ (মাজমুউল ফতোয়া: ২২/৫০৬)
(তথ্যসূত্র: মাজমুউল ফতোয়া: ২২/৫০৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮২, জামে তিরমিজি: ২/১৯৭, বাজলুল মাজহুদ: ২/৩৫৫, রদ্দুল মুহতার: ১/৬৫০-৬৫১, আল বাহরুর রায়েক: ২/২৯, ২/৩১; আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা: ১১/২৮৩; ফয়জুল কাদির: ৪/৩৫৫)