বিয়ে মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। ইসলামে সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে দ্রুত বিয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা বিয়ের মাধ্যমে চরিত্রকে হেফাজত করা যায়, যাবতীয় অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং দ্বীনি কাজ সহজ হয়। এছাড়াও সুশৃঙ্খল ও প্রশান্তিময় জীবনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْۤا اِلَیْهَا وَ جَعَلَ بَیْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّ رَحْمَةً ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَكَّرُوْن ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এটি একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীকে, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি লাভ করতে পার এবং তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে সেইসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা রুম: ২১)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কত বছর বয়সে বিয়ে করা সুন্নত
বিয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- দ্বীনদারী দেখে বিয়ে করা। অর্থাৎ কাউকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের আগে যাচাই করে নেওয়া যে, সে দ্বীনদার কি না। কেননা এর ওপরই নির্ভর করে একটি দ্বীনদার পরিবার ও প্রজন্ম বা বংশধর। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন- أَنْكِحُوا الصّالِحِينَ وَالصّالِحَاتِ، فَمَا تَبِعَهُمْ بَعْدُ فَحَسَنٌ ‘নারীদেরকে সালেহ (দ্বীনদার-নেককার) পুরুষের নিকট বিবাহ দাও, আর পুরুষদেরকে সালেহা (দ্বীনদার-নেককার) নারীর সাথে বিবাহ দাও; ফলশ্রুতিতে তাদের যে সন্তান হবে তারা হবে উত্তম (নেককার)। (সুনানে দারিমি: ২২২৭)
বিয়ের ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করা একটি ভালো আমল। শরিয়ত যেকোনো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এলে প্রথমে ইস্তেখারা করতে বলে। বিয়েও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফলে এক্ষেত্রেও নবীজি (স.) ইস্তেখারা করতে বলেছেন। প্রিয় সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা).-কে তার বিয়ের বিষয়ে কীভাবে ইস্তেখারা করবে তা শিখিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করলে সন্তানের ঝুঁকি রয়েছে—এমন কোনো হাদিস আছে কি?
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেছেন- প্রথমে তোমার প্রস্তাব গোপন রাখো, অতঃপর উত্তমরুপে অজু করো এবং যে কয় রাকাত সম্ভব নামাজ পড়, অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করে বলো- اللّهُمّ إِنّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلّامُ الْغُيُوبِ، فَإِنْ رَأَيْتَ فِيَ فُلَانَةَ - وَتُسَمِّيهَا بِاسْمِهَا - خَيْرًا لِي فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَآخِرَتِي فَاقْدُرْهَا لِي، وَإِنْ كَانَ غَيْرُهَا خَيْرًا لِي مِنْهَا فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَآخِرَتِي فَاقْضِ لِي ذَلِكَ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি সক্ষম আমি অক্ষম। আপনি জানেন আমি জানি না। আপনি গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয়ে সম্যক অবগত; আপনি যদি অমুককে (পাত্রীর নাম নিবে) আমার দ্বীন-দুনিয়া এবং আখেরাতের ক্ষেত্রে কল্যাণকর মনে করেন তাহলে তাকে আমার জন্য সহজ করে দিন। আর যদি তার থেকে অন্য কেউ আমার দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষেত্রে কল্যাণকর হয় তাহলে আমার জন্য তাই ফয়সালা করুন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪০৪০; মুসনাদে আহমদ: ২৩৫৯৬)
এই বর্ণনায় দোয়াটি এভাবেই এসেছে। তবে ইস্তেখারার প্রসিদ্ধ দোয়াটি হলো- اللّهُمّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ যা সহিহ বুখারিসহ হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। ইস্তেখারার সেই দোয়াটি জানতে এবং দোয়ার পর স্বপ্ন দেখা বা না দেখা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
উল্লেখ্য, হাদিসের ভাষ্যমতে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামতের অন্যতম হলো নেককার স্ত্রী। নেককার স্ত্রীর কারণে পরিবার জান্নাতে পরিণত হয়। এক হাদিসে এসেছে, مِنْ سَعَادَةِ ابْنِ آدَمَ ثَلاثَةٌ، وَمِنْ شِقْوَةِ ابْنِ آدَمَ ثَلاثَةٌ، مِن سَعَادَةِ ابْنِ آدَمَ: الْمَرْأَةُ الصّالِحَةُ، وَالْمَسْكَنُ الصّالِحُ، وَالْمَرْكَبُ الصّالِحُ، وَمِنْ شِقْوَةِ ابْنِ آدَمَ: الْمَرْأَةُ السّوءُ، وَالْمَسْكَنُ السّوءُ، وَالْمَرْكَبُ السّوءُ ‘আদম সন্তানের সৌভাগ্যের বিষয় তিনটি, দুর্ভাগ্যের বিষয়ও তিনটি। প্রথম তিনটি হলো- সালিহা (দ্বীনদার-নেককার) স্ত্রী, ভালো বাসস্থান, ভালো সওয়ারি। দ্বিতীয় তিনটি হলো- খারাপ স্ত্রী, খারাপ বাসস্থান ও খারাপ সওয়ারি। (মুসনাদে আহমদ: ১৪৪)
আরও পড়ুন: গোপনে বিয়ে করা ইসলামে অপছন্দনীয়
আরেক হাদিসে এসেছে- إِنّمَا الدّنْيَا مَتَاعٌ، وَلَيْسَ مِنْ مَتَاعِ الدّنْيَا شَيْءٌ أَفْضَلَ مِنَ الْمَرْأَةِ الصَّالِحَةِ ‘দুনিয়া তো (ক্ষণস্থায়ী) প্রয়োজন পূরণের। আর মানুষ দুনিয়াতে যা কিছু দ্বারা কল্যাণ ও উপকার লাভ করে, তার মধ্যে সালিহা-দ্বীনদার-নেককার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম কিছু নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৫৫)
উত্তম স্বামী-স্ত্রী শুধু দুনিয়ার সহযোগী নয়, আখেরাতেরও সহযোগী। তাই তাদের মাঝে জাগতিক বিষয়ের আলোচনার মতো আখেরাতের বিষয় নিয়েও আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারও মধ্যে কোনো আমল বা গুণের অভাব থাকলে তা চিহ্নিত করে বাস্তবে আনার চেষ্টা করতে হবে। একজন কোনো ভালো কিছু পড়লে, শুনলে বা জানলে অপরকে জানাবে, একজন একটি নেক কাজ করলে অপরজনকেও শরিক করবে। একজন যেটা জানবে না, তা অন্যজন শিখিয়ে দেবে এবং উত্তম প্রজন্মের জন্য আল্লাহর কাছে এই দোয়া করবে— رَبِّ اجْعَلْنِیْ مُقِیْمَ الصَّلٰوةِ وَ مِنْ ذُرِّیَّتِیْ، رَبَّنَا وَ تَقَبَّلْ دُعَآءِ ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন; এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমাদের প্রতিপালক আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

