পুরুষের জন্য মুহরিম ছাড়া যেকোনো প্রাপ্তবয়স্কা নারীকে শরিয়তসম্মত পন্থায় বিয়ে করা জায়েজ। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে- নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়েতে সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে বা নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত হয়। এমন কথা ডাক্তারদের মুখেও শোনা যায়। কিন্তু ইসলামে এ ধরণের বক্তব্য দেখা যায় না।
ইসলামি বিশ্বাসমতে, মানুষের জীবনে অসুস্থতা থাকা স্বাভাবিক। ধনী-গরিব, শিশু-বৃদ্ধ, মুসলিম-অমুসলিম, নারী-পুরুষ সবাইকে অসুস্থতার শিকার হতে হয়। মহানবী (স.)-ও নানারকম অসুস্থতার শিকার হতেন। তখন তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সবর করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চেয়ে বেশি রোগ যন্ত্রণা ভোগকারী অন্য কাউকেও দেখিনি। (বুখারি: ৫৬৪৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যেসব নারীকে বিয়ে করা ইসলামে নিষেধ
সুস্থ থাকার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়ম মেনে ঘুমানো ও পরিমিত পবিত্র খাবারগ্রহণে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। (সুরা বাকারা: ২২২; সুরা আরাফ: ৩১; তিরমিজি,: ১১৯৫)
এরপরও আল্লাহর ইচ্ছায় যে কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে। নিকটাত্মীয় ছাড়া দূরের কাউকে বিয়ে করলেও সন্তান নানাভাবে অসুস্থ হতে পারে। আবার কোনোক্ষেত্রে দেখা যায়, নিকটাত্মীয় স্বামী-স্ত্রীর সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ; অসুস্থতার ঝুঁকিও কম। তাই সুস্থতা কিংবা অসুস্থতা নিকটাত্মীয়ের সংসারের ওপর নির্ভর করে না। ইসলামি বিশ্বাসমতে, অসুস্থতার মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দার গুনাহ মাফ হয় আবার আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবেও তা আপতিত হয়। (বুখারি: ৫৬৪১; ৫৬৪৫; তাফসিরে তাবারি: ১৮/ ৪৪০)
তবে যেকোনো অসুস্থতার জন্য বিশ্বস্ত ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে ইসলাম নিষেধ করে না। নিকটাত্মীয় যদি রোগা বা অসুস্থ হয়, ডাক্তার যদি বিয়ের আগে কিছু পরীক্ষা আবশ্যক করে দেন, তাহলে সতর্কতা হিসেবে সেসব পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু তা হতে হবে শুধুই সতর্কতা হিসেবে; অন্ধবিশ্বাস থেকে নয়। কারণ, ইসলাম যেকোনো ধরণের কুসংস্কারে বিশ্বাস রাখতে কঠিনভাবে নিষেধ করে। (সুরা আরাফ: ১৩১; সুরা নিসা: ৭৮; আবু দাউদ: ৩৯০৯)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: শিরক না করার কারণে যেসব প্রতিদান পাবেন
কেউ কোনো পরীক্ষা ছাড়াই বিয়ে করে নিলেও কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে আল্লাহর ওপরেই ভরসা করো।’ (সুরা মায়েদা: ২৩) আল্লাহর ওপর ভরসা করার নগদ পুরস্কার হলো- আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। ওই বান্দার আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। (তাফসির: সুরা তালাক: ২-৩)
সুতরাং নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করলেই যে শিশু অসুস্থ হবে বা প্রতিবন্ধী হবে—এধরণের কথা মুসলমানদের মুখে শোভনীয় নয়। এমন কোনো বক্তব্য হাদিসেও পাওয়া যায় না। তাই এ ধরণের বিশ্বাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা মেয়ে সন্তান আবার যাকে চায় ছেলে সন্তান দান করেন।’ (সুরা আশ শুরা: ৪৯) ‘অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছে তাকে করে দেন বন্ধ্যা; নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাবান।’ (সুরা আশ শুরা: ৫০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্ধ বিশ্বাস থেকে হেফাজত করুন। শরীরের হকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

