রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শয়তান যেভাবে গুনাহের কাজে লাগিয়ে রাখে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

শয়তান যেভাবে গুনাহের কাজে লাগিয়ে রাখে

গুনাহ করার ইচ্ছা মানবজাতির সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু একে দমন করার চেষ্টা করতে হয়। পবিত্রতাকে সঙ্গী করা, নেক আমলে লেগে থাকা এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মৌলিক উপায়। নবী-রাসুলরাও মন্দপ্রবণ প্রবৃত্তির ক্ষতি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-এর কথা এভাবে উল্লেখ করেন, ‘আর আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দপ্রবণ। শুধু ওই ব্যক্তি ছাড়া, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন। নিশ্চয়ই আমার রব ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৩)

মানুষকে জান্নাতে যেতে হলে কঠোর নিয়ন্ত্রণে জীবন যাপন করতে হয়। সবসময় মনকে পাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হয়। অন্যথায় শয়তান এই সুযোগকে এমনভাবে কাজে লাগায় যে, এক পর্যায়ে গুনাহকে আর গুনাহই মনে হয় না। যেমন শয়তান বলে, আজ তো বাইরে বৃষ্টি বা ঠাণ্ডা বেশি। জামাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এভাবে আস্তে আস্তে ছোট থেকে বড় গুনাহর দিকে বান্দাকে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন সে নামাজই ছেড়ে দেয়। প্রথমে বেগানা নারী-পুরুষের অল্প একটু কথা বলা, এরপর অযথা কথা বলা, হাসিঠাট্টা করা। শয়তান বলে- তোমরা তো আর কবিরা গুনাহ করছ না, নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি আন্তরিক থাকাতেই আসল কল্যাণ—এভাবে বান্দা পুরোপুরি শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: যে কাজে শয়তান সবচেয়ে খুশি হয়

এজন্যই রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থেকো। কেননা তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ওই সম্প্রদায়ের মতো, যারা কোনো উপত্যকায় অবতরণ করেছে। অতঃপর প্রত্যেকে একটি করে কাঠ নিয়ে এসেছে। এমনকি তা স্তূপাকার ধারণ করেছে। যার দ্বারা তারা রুটি পাকাতে পারে। আর নিশ্চয়ই ছোট ছোট গুনাহ যখন পাপীকে পাকড়াও করবে তখন তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। (মুসনাদে আহমদ: ২২৮৬০)

কবি শেখ সাদি (রহ.) সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন। ‘পাপকে ছোট মনে করো না। এই ছোট পাপ থেকে যদি তুমি বেঁচে থাকতে না পারো, এমন একদিন আসবে, বড় পাপ থেকেও তুমি ফিরতে পারবে না।’ তাই গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করে নিয়ে নিজেকে সংশোধন করে নেওয়া বাঞ্ছনীয় এবং এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শয়তান থেকে সারাদিন নিরাপদ থাকার উপায়

রাসুল (স.) বলেন—মুমিন ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নিচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে হয়ত পর্বতটা তার ওপর ধসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মতো মনে করে, যা তার নাকের ওপর দিয়ে চলে যায়। (বুখারি: ৬৩০৮)

সুতরাং মন্দপ্রবণ অন্তরের চাহিদা ত্যাগ করে, শয়তানের প্ররোচনায় গা না ভাসিয়ে আল্লাহর বিধানের সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করলেই জান্নাত পাওয়া যাবে। যদি আমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করি তবে আমাদের গন্তব্য হবে জাহান্নাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (স.) বলেছেন, জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাত কে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে। (বুখারি: ২৪৫৫, খণ্ড-৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে ক্ষমা করুন এবং শয়তানের প্ররোচনামুক্ত থাকা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর