পরীক্ষা এক কঠিন যন্ত্রণার নাম। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সবকিছুতে অনিয়ম শুরু হয় পরীক্ষা কাছে এলে। দুশ্চিন্তায় জানা বিষয়ও ভুলে যায় অনেকে। শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয়, অভিভাবকরাও চিন্তায় কাবু হয়ে যান। মোটকথা পরীক্ষার সময়টাতে পরীক্ষার্থীর আশেপাশের সবাইকে অস্থির এক সময় পার করতে হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ইসলামের কিছু নির্দেশনা মেনে চলা যেতে পারে।
১. প্রস্তুতিগ্রহণ
ইসলাম ভালো ফলাফলের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করে। প্রস্তুতি যার যত ভালো তকে আল্লাহ তত ভালো প্রতিদান দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সবার জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আল-আহকাফ: ১৯)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশপরিচয় তাকে কখনোই এগিয়ে দিতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৭০২৮)
বিজ্ঞাপন
২. আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা
প্রস্তুতি গ্রহণের সঙ্গে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা উত্তম বান্দাদের আমল। আল্লাহ তাঁর ওপর ভরসাকারীদের কখনও বঞ্চিত করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা তালাক: ৩)
সুতরাং পড়ালেখাও করতে হবে, আল্লাহর ওপর ভরসাও রাখতে হবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইয়েমেনের কিছু লোক হজে যেত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ (আবু দাউদ: ১৭৩০)
আরও পড়ুন: আল্লাহর ওপর ভরসা করার পুরস্কার
৩. সালাতুল হাজত পড়া
পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ (স.) যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘সালাতুল হাজত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ: ১৩১৯)
এটি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়া জরুরি নয়। বরং সাধারণভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিজ প্রয়োজনগুলো মহান আল্লাহর কাছে পেশ করা ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা।
৪. স্থিরতা অবলম্বন করা
তাড়াহুড়ার কারণে ভুল হয়। তাই তাড়াহুড়া করা যাবে না, বরং ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে। ইসলামে তাড়াহুড়াকে শয়তানের অভ্যাস বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কাজে ধীরস্থিরতা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (সুনানে বায়হাকি: ২০৭৬৭)
তাড়াহুড়ার কারণে দোয়াও কবুল হয় না। নবী কারিম (স.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি: ৬৩৪০)
বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: শয়তান থেকে সারাদিন নিরাপদ থাকার উপায়
৫. বিসমিল্লাহ বলা
যেকোনো ভালো কাজই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। তাই পরীক্ষার্থীরাও প্রশ্নপত্র গ্রহণ করার সময় এবং উত্তর লেখা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সঙ্গে দরুদ শরিফও পাঠ করে নিতে পারেন। কারণ কোনো ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর ওপর একবার দরুদ পড়লে মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন (তারগিব: ৩/২৯৯)। বিসমিল্লাহ পড়ার ব্যাপারে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যেসব কাজ আল্লাহর নাম না নিয়ে শুরু করা হয়, সেগুলো বরকতশূন্য। (মুসনাদে আহমদ: ১৪/৩২৯)
৬. দোয়া করা
পরীক্ষায় সঠিক উত্তর প্রদানে মহান আল্লাহর সাহায্যের জন্য মনে মনে তাঁর কাছে দোয়া করা যেতে পারে। যেমন ‘রব্বি জিদনি ইলমা’। মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর বন্ধুকে এই দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—‘এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও। (সুরা ত্বহা: ১১৪)

৭. কোনো উত্তর মনে না পড়লে দোয়া
অনেক সময় দেখা যায়, ভালোভাবে মুখস্থ করে যাওয়া জিনিসও মনে পড়ে না। কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পারেন। উচ্চারণ: ‘রব্বিশরাহলি সদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি, ইয়াফকহু কওলি।’ অর্থ: ‘সে বলল, হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন—যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা ত্বহা: ২৫-২৮)। এই দোয়া মৌখিক পরীক্ষার সময় বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।
৮. নকল না করা
নকল করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রতারণার শামিল। মুমিন কখনো প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম: ১০২)
যাকে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (স.) অস্বীকার করবেন, সে কী করে সফল হবে? তার তো ইহকাল-পরকাল দুটোই বরবাদ। তাছাড়া নকল করার কারণে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে, যা তার নিজের জীবনে যেমন কালি লেপন করবে, তেমনি পরিবারের সম্মানও নষ্ট করবে।
আল্লাহ তাআলা সব পরীক্ষার্থীকে উপরোক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন এবং পরীক্ষায় সফলতা দান করুন। আমিন।

