সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঘুমের আগে ছোট্ট যে আমলে জান্নাতের সুসংবাদ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ঘুমের আগে ছোট্ট যে আমলে জান্নাতের সুসংবাদ

রাতে ঘুমানোর আগে সুন্দর এক ছোট্ট আমলের শিক্ষা রয়েছে হাদিসে। প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে সেই আমলটি করতে উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন সেই আমলের প্রতিদান হলো জান্নাত। কী সেই আমল? আমলটি হলো—ঘুমের আগে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া। এই আমলের কারণে এক সাহাবির ব্যাপারে রাসুল (স.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি ওই সাহাবির ব্যাপারে এই সুসংবাদের কথা সাহাবায়ে কেরামদের তিন বার বলেছেন। 

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে তিনি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সবাইকে ক্ষমা করে ঘুমান। অন্তরে কোনো মুসলমানের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করেন না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এ গুণ আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ৫/১৭৮; মুসনাদে বাজজার: ১৯১৮; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৮/৭৪)


বিজ্ঞাপন


উক্ত হাদিসে জান্নাতি সাহাবির নাম অনুচ্চারিত হলেও তিনি হলেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। এ সংক্রান্ত অন্যান্য বর্ণনায় তাঁর নাম উল্লেখ রয়েছে। যিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবির একজন।

আরও পড়ুন: জান্নাত লাভে নবীজির শেখানো ছোট তিন আমল

মূলত ক্ষমা হলো মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীলদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মানুষকে ক্ষমা করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)

রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। নবীজির জীবনীতে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না। তবুও তিনি ক্ষমা করেছেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সেসব জঘন্য মানুষকে ক্ষমা করেছেন যারা সারাজীবন নবীজিকে কষ্ট দিয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে, সাহাবিদের নির্যাতন করেছে। এমনকি মাতৃভূমি থেকে মুসলমানদের বের করে দিয়েছে। কাবাপ্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্যে নবীজি বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের ঘরে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ৪০৫, ৪০১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নবীজির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাটি কেমন ছিল

তাঁর ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ হলে তিনি প্রতিশোধ নিতেন না। বরং ক্ষমা ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাকে কাছে টেনে নিতেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবীজির সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর পরনে ছিল মোটা কাপড়ের একটি নাজরানি (ইয়েমেনি) চাদর। এক বেদুইন তাঁর কাছে এসে সেই চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আমি দেখলাম মোটা কাপড়ের ঘষায় নবীজির কাঁধে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশ স্বরে তাঁকে বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ আপনার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিন!’ নবীজি (স.) লোকটির দিকে ফিরে তাকান এবং মুচকি হাসেন। এরপর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দেন। (বুখারি: ৩১৪৯)

প্রিয়নবীর ক্ষমাশীলতা, উদারতায় মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে। প্রিয়নবীর মাঝে যদি এই মহৎ গুণ না থাকত, তাহলে এর চিত্র ভিন্ন রকমও হতে পারত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন। আপনি যদি কর্কশ ও কঠোর মনের হতেন, তাহলে এরা সবাই আপনার চারপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন, তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)

আরও পড়ুন: জানাজার নামাজসহ ৪ আমলে নিশ্চিত জান্নাত

ক্ষমাশীল ও ধৈর্যবানের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরবে ও ক্ষমা করবে, সন্দেহাতীতভাবে এটা বড় উচ্চমানের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের অন্যতম।’ (সুরা আশ শুরা: ৪৩)

অতএব আমাদের উচিত, ক্ষমাশীল হওয়া। ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়েই সব কিছু জয় করা। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে ছোট্ট আমলটি করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর