রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মসজিদে শিশুরা কোন কাতারে দাঁড়াবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মসজিদে শিশুরা কোন কাতারে দাঁড়াবে?

ছোটবেলা থেকে সন্তানদের নামাজে অভ্যস্ত করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। কেননা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চর্চা যদি শিশুকাল থেকে শুরু হয়, সে সম্পর্ক মজবুত থাকবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ (সুনানে বায়হাকি: ৫০৯৪)

সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর (প্রয়োজনে) নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইসলামে শিক্ষার্থীদের প্রহারের সীমারেখা

দুঃখজনক বিষয়, এখনও অনেক জায়গায় শিশুদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়। বাচ্চারা দুষ্টুমি করবে—এই আশংকা থেকেই মূলত এটি করা হয়। অথচ এটি সুন্নাহপরিপন্থী কাজ। বাচ্চারা একটু দুষ্টুমি করলে সমস্যা কী? বয়সের পরিক্রমায় আমরা যেমন দুষ্টুমি ছেড়েছি, তারাও ছেড়ে দেবে। তাই এটি বিব্রতকর কোনো বিষয় নয়। বেশি প্রয়োজন হলে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে অভিভাবকই বাচ্চাকে শোধরানোর চেষ্টা চালাবেন।

নবীজির জীবনীতে দেখা যায়, তিনি শিশুকে কাঁধে নিয়েও নামাজ পড়েছেন। আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (স.) তাঁর নাতনী উমামাহকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। উমামাহ হলো আবুল আস বিন রাবি ইবনে আবদে শামসের ঔরসে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মেয়ে জয়নব (রা.)-এর সন্তান। রাসুলুল্লাহ (স.) সেজদায় যাওয়ার সময় উমামাহকে নামিয়ে রাখতেন এবং উঠে দাঁড়ানোর সময় পুনরায় কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। (বুখারি: ১/১০৯)

সুতরাং শিশুদের কখনও হুমকি-ধমকি দেওয়া যাবে না। কচি মনে ভয়ের উদ্রেক করা যাবে না। এতে শিশুর মনে তৈরি হতে পারে মসজিদভীতি। একজন মুমিন ব্যক্তির এ ধরণের কাজ শোভা পায় না।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: সন্তানের প্রতি মা-বাবার ১১ দায়িত্ব

শিশুরা কোন কাতারে দাঁড়াবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিভ্রান্তি এখনও রয়ে গেছে। সেটি হলো- অনেকে ধারণা করেন যে, শিশুরা সবার পেছনে দাঁড়াবে, তা না হলে কারো নামাজ হবে না। এটি সঠিক বক্তব্য নয়। এমনটি বাধ্যতামূলক নয় যে, নাবালেক শিশুদের সবার পেছনেই দাঁড়াতে হবে। বরং উত্তম পদ্ধতি হলো- যদি বাচ্চা একটি হয়, সে সবার সঙ্গেই দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। যদি একাধিক হয় কিন্তু বাচ্চা ছিনতাই হবার ভয় থাকে, তাহলেও তাকে বড়দের কাতারে রাখতে হবে। 

যদিও সাধারণভাবে নিয়ম হলো- একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো। কিন্তু ছিনতাই হওয়া, হারিয়া যাওয়াসহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকলে বড়দের কাতারে দাঁড় করাতে হবে। আবার বাচ্চারা সবাই দুষ্টুমি করে নামাজের বিঘ্ন ঘটানোর সম্ভাবনা থাকলেও শিশুদেরকে বড়দের কাতারে রাখতে কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। নবীজির সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

(তথ্যসূত্র: ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩১২-৩১৪,৭৩; আল বাহরুর রায়েক: ১/৬১৮; আন নাহরুল ফায়েক: ১/২৪৬; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/৮৯; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৩৯২; আদ্দুররুল মুখতার: ১/৫৭১)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর