মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আল্লাহর কাছে বান্দার হক নিয়ে হাদিস

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

আল্লাহর কাছে বান্দার হক নিয়ে হাদিস

আরবি হক শব্দের অর্থ অধিকার, দাবি পাওনা। বান্দার ওপর আল্লাহর হক হলো- তাঁর আদেশগুলো মেনে চলা, তাঁরই নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে থাকা, শিরক না করা, দ্বীনের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করা ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী।’ (সুরা নিসা: ৩৬)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা নিসা: ১১৬)


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলার কাছেও বান্দার হক রয়েছে। সেটি হলো- তিনি বান্দাদের ক্ষমা করবেন এবং শাস্তি দেবেন না। তবে, এই হক বা অধিকার শুধুমাত্র তাদের, যারা শিরক থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। এ বিষয়ে এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি গাধার ওপর নবী কারিম (স.)-এর পেছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন, হে মুয়াজ! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর ওপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই অধিক জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, সে তাঁর ইবাদত করবে, এতে তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক এই যে, যে ব্যক্তি তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, তিনি তাকে আজাব দেবেন না। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কী লোকদের (এই) সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন, তাদের সুসংবাদ দিয়ো না। কেননা, তারা (এরই ওপর) ভরসা করে বসবে। (সহিহ বুখারি: ২৮৫৬)

আরও পড়ুন: শিরকমুক্ত জীবন ক্ষমার উপযুক্ত

মনে রাখা জরুরি, শিরক থেকে বেঁচে থাকা অতটা সহজ নয়। শুধুমাত্র তাওহিদের ধারক-বাহকরাই এ থেকে বাঁচতে পারে। এর ইঙ্গিত হাদিসেও পাওয়া যায়। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পিপড়ার নিঃশব্দ গতির মতোই শিরক তোমাদের মধ্যে গোপনে অনুপ্রবেশ করে।’ শিরক থেকে মুক্ত থাকার জন্য তিনি একটি দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন, যা তিনবার পড়া নিয়ম। দোয়াটি হলো—اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকাবিকা শাইয়ান ওয়া আনা আঅলামু ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আঅলামু। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করা থেকে আশ্রয় চাই। জানা-অজানা (শিরক-গুনাহ) থেকেও ক্ষমা চাই।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৭২১)

শিরক না চেনার কারণে অনেকে সারাদিন শিরকে ডুবে থাকে। অজ্ঞতাবশত মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত (রব), উলুহিয়্যাত (ইলাহ) ও আসমা ওয়াস সিফাত (নাম ও গুণাবলীতে) মানুষ শিরক করছে প্রতিনিয়ত। এর শাস্তি কী জঘন্য অনেকে জানেই না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেবেন। তার স্থান হবে জাহান্নামে। আর সীমালংঘনকারীদের জন্য আখেরাতে কোনো সাহায্যকারী থাকবে না (সুরা মায়েদা: ৭২) 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শয়তানের শেষ অস্ত্র বিদআত

এজন্যই তাওহিদ বিষয়ে বেশি বেশি পড়ালেখা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন হক্কানি আলেমরা। মনে রাখতে হবে, নবী-রাসুলরা নিজ নিজ উম্মতদের তাওহিদ শেখাতে শেখাতে জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাই তাওহিদকে একদিনেই মুখস্থ করা যায় মনে করলে বড় ভুল হবে। 

আর অতীতের ছোট-বড় যাবতীয় ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তাওবা-ইস্তেগফার করলে ক্ষমা করার অঙ্গিকার রয়েছে। আল্লাহ তাআলার ওয়াদা যে, ইস্তেগফারকারীদের তিনি ক্ষমা করে দেবেন। এমনকি ইস্তেগফারের কারণে কখনও তিনি বান্দার গুনাহগুলোকে সওয়াবে পরিণত করে দেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু যারা তাওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। (সুরা ফুরকান: ৭০)

ইস্তগফারকারীদের ক্ষমার বিষয়ে এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ইবলিস তার রবকে উদ্দেশ্য করে বলল- আপনার সম্মান ও ইজ্জতের শপথ করে বলছি, যতক্ষণ বনি আদমের দেহে প্রাণ থাকবে ততক্ষণ আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে থাকব। ফলে আল্লাহ বললেন, আমি আমার সম্মান-প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ: ৩/২৯, মুস্তাদরাকে হাকেম: ৪/২৬১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আন্তরিকভাবে তাওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করুন। আমাদেরকে তাওহিদে বিশ্বাসী-বাস্তবায়নকারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর