বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শিরকমুক্ত জীবন ক্ষমার উপযুক্ত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

শিরকমুক্ত জীবন ক্ষমার উপযুক্ত

ইসলামে সবচেয়ে বড় গুনাহের নাম শিরক। আল্লাহর হুকুম আহকাম না মানার চেয়েও জঘন্য। এর পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্যসব গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা: ৪৭) 

শিরক অর্থ- অংশীদার করা, সহযোগী বানানো, সমকক্ষ করা ও সম্পৃক্ত করা। কার্যত এমন সব বিশ্বাস, কাজ, কথা ও অভ্যাসকে শিরক বলা হয়, যার দ্বারা মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত (রব), উলুহিয়্যাত (ইলাহ), আসমা ওয়াস সিফাত (নাম ও গুণাবলীতে) অপর কারো অংশীদারিত্ব বা সমকক্ষতা প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ তাআলা এই গুনাহকে জুলুম আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অতি বড় জুলুম।’ (সুরা লোকমান: ১৩)


বিজ্ঞাপন


অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেবেন। তার স্থান হবে জাহান্নামে। আর সীমালংঘনকারীদের জন্য আখেরাতে কোনো সাহায্যকারী থাকবে না (সুরা মায়েদা: ৭২) 

আরও পড়ুন: ছোট-বড় শিরক চেনার ও আত্মরক্ষার উপায়

শিরকমুক্ত জীবনের অনেক প্রতিদান রয়েছে। ক্ষমা তারই প্রাপ্য যে শিরক থেকে মুক্ত থেকেছে। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪০৩৫)

উল্লেখিত হাদিসে আল্লাহ এমন ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি নিখাদ বিশ্বাস লালন করে। সুতরাং মুমিনের জন্য ঈমান-ইবাদতসহ জীবনের সর্বত্র শিরক পরিহার করা আবশ্যক। স্মরণ রাখতে হবে, অনেক শিরক আছে, যা খুবই সূক্ষ্ম। যার কারণে বেশির ভাগ মানুষ ঈমান আনার পরও মুশরিক থেকে যায়। পবিত্র কোরআনে বিষয়টি এসেছে এভাবে- ‘আবার অনেক মানুষ আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু তারা শিরক করে। (সুরা ইউসুফ: ১০৫-১০৬)


বিজ্ঞাপন


শিরক না চেনার কারণে অনেকে সারাদিন শিরকে ডুবে থাকে। এজন্যই তাওহিদ ও শিরক নিয়ে বেশি পড়ালেখার গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। জানা-অজানা শিরক থেকে মুক্ত থাকার দোয়া শিখিয়েছেন নবী (স.)- ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন-আশরিকা বিকা, ওয়া আনা আ’লামু; ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই।’ (সহিহ আল আদাবুল মুফরাদ: ৭২১)

আরও পড়ুন: মা-বাবা শিরক করলে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে?

শিরকমুক্ত জীবন দুনিয়ার যাবতীয় ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়। এটি ক্ষমা ও হেদায়াত লাভের উপায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদের ঈমানের সঙ্গে জুলুমের (শিরকের) সংমিশ্রণ ঘটায়নি তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা আনআম: ৮২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, যারা ঈমান ও ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না পরকালে আল্লাহ তাদের সাক্ষাৎ দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০) 

সর্বোপরি শিরকমুক্ত থাকায় রয়েছে জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে সে তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করেনি, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৮০) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। প্রকৃত মুমিন হিসেবে গুনাহমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহর কাছে ফেরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর