প্রধান চার মাজহাব হলো- হানাফি, শাফেয়ী, মালেকি ও হাম্বলি। এই চার মাজহাবের শ্রেষ্ঠ চার ইমামের নাম ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ)। তাঁরা সকলেই মুজতাহিদ ছিলেন। আল্লাহ তাআলা যেহেতু উলুল আমরের আনুগত্য করতে বলেছেন, মুসলমানরা সাধারণত তাঁদের আনুগত্য করে থাকেন। প্রশ্ন হলো—ইমাম মাহদি ও ঈসা (আ.)-এর আগমনের পর মুসলমানরা কি মাজহাব মানা ছেড়ে দেবেন? মানলেও কোন মাজহাব মানবেন?
এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য হলো— ইমাম মাহদি (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.)-এর আগমনের পর পৃথিবীর মুসলমানরা তাঁদেরই আনুগত্য করবেন। এর কারণ হলো—তাঁরা দুজনই মুজতাহিদ হবেন। আর মুজতাহিদের অন্যকোনো ইমামের তাকলিদ করতে হয় না। মুসলমানরাও তাদেরই আনুগত্য করবেন।
বিজ্ঞাপন
আর ইমাম মাহদি ও ঈসা (স.)-এর মতো মুজতাহিদ আসার আগ পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায়, যে রাষ্ট্রে যে মাজহাব প্রচলিত, সেই মাজহাব অনুযায়ী ইজতিহাদি মাসআলার ওপর আমল করা জরুরি। পবিত্র কোরআনেই এর দলিল বিদ্যমান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মধ্যকার উলুল আমর তথা মুজতাহিদের আনুগত্য করো। (সুরা নিসা: ৫৯)
আরও পড়ুন: তাশাহুদের সময় আঙ্গুল কি নাড়াতেই থাকবেন?
অনেকে নিজেদের মুজতাহিদ দাবি করে বলেন যে, কোরআন-হাদিস থাকতে মাজহাব কিসের, মাজহাব মানার প্রয়োজন নেই। এসব অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ ছাড়া অন্যকিছু নয়। ইসলাম বলছে, মাজহাব মানে পথ। যেই পথে থাকলে কোরআন-হাদিসের পূর্ণ অনুসরণ করা সম্ভব হয়। অন্যথায় অসম্ভব। মাজহাবের অনুসরণ ছাড়া দুই রাকাত নামাজও পড়া যায় না। যেমন— রুকু করা ফরজ, এটি কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। রুকুর তাসবিহ পড়া সুন্নত, এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রুকুতে যাওয়ার সময় ইমাম জোরে তাকবির বলে আর মুসল্লি আস্তে বলে—এ মাসয়ালা কোরআন-হাাদিসের কোথাও নেই। রুকুতে গিয়ে যদি কেউ সেজদার তাসবিহ বলে, তাশাহুদের জায়গায় ভুলে সুরা ফাতেহা পড়ে, জোরে কেরাতের স্থলে আস্তে পড়ে, আস্তের স্থলে জোরে পড়ে—এসব মাসয়ালার সমাধান ছাড়া তো সহিহ পদ্ধতিতে নামাজ পড়া সম্ভব নয়। এর সমাধান মাজহাবের ইমামদের ইজমা তথা ঐক্যমত্ব দ্বারা প্রমানিত হয়েছে।
এটি শুধু নামাজের একটি ছোট্ট অংশের উদাহরণ। মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ এমন অসংখ্য মাসয়ালা রয়েছে, যার সরাসরি সমাধান কোরআন ও হাদিসে নেই। তাই মাজহাব মানা গাইরে মুজতাহিদের জন্য ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ (মাজহাব) অনুসরণ করবে। (সুরা লুকমান: ১৫)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বিতির নামাজ কি শুধু এক রাকাত পড়লেও হয়?
মুজতাহিদ হতে হবে এমন, যার মুজতাহিদ হওয়া শরিয়তের চার দলিল তথা কোরআন, হাদিস বা ইজমা বা কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। চার ইমামের যেকোনো একজনের তাকলিদ করা এই কারণে জরুরি যে, চার ইমামের মুজতাহিদ হওয়া শরয়ি দলিল ‘ইজমা’ দ্বারা প্রমাণিত। ৪র্থ শতাব্দীর আলেমদের ইজমা হয়ে গেছে যে, চার মুজতাহিদ ইমামের যেকোনো একজনের তাকলিদ করা জরুরি। (আল-ইনসাফ: ৫২, ৫৭-৫৯, মাদারে হক: ৩৪১, ইন্তিসারুল হক বজওয়াবে মিয়ারে হক: ১৫৩, আলমুআফাকাত: ৪/১৪৬, আলমাজমূহ শরহুল মুহাজ্জাব: ১/৯১)
কিন্তু ইমাম মাহদি এবং হজরত ঈসা (আ.) যখন আসবেন, তখন যেহেতু নতুন মুজতাহিদ এসেছেন, সেই হিসেবে তাঁদের অনুসরণ করাই হবে কোরআনি নির্দেশনা মান্য করা। তাই ইজতিহাদি মাসআলায় তখন তাঁদেরকেই অনুসরণ করতে হবে। তখন দুই বা চার মাজহাব মানার প্রশ্ন আসবে না। কারণ, তখন মাজহাবই থাকবে একটি। অন্য মাজাহাবের প্রয়োজনীয়তা আর বাকি থাকবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

