সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শরীরে ট্যাটু আঁকা হারাম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

শরীরে ট্যাটু আঁকা হারাম

বর্তমান বিশ্বে ট্যাটু বা উল্কির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সম্প্রতি জার্মানির একটি জরিপে উঠে এসেছে, ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের গায়ে ট্যাটু আঁকা আছে। কিছু বিপথগামী মুসলমানও এই আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি মুখ, কানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানেও ট্যাটু করতে দ্বিধাবোধ করছে না তারা। অনেক অবুঝ মুসলমান কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বাণী দিয়েও ট্যাটু আঁকছেন।

অথচ শরীরে উল্কি আঁকা অধিকাংশ ইসলামি আইনপ্রণেতার দৃষ্টিতে হারাম। যেসব উপায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়, তার সবই নিষিদ্ধ। আলাদা চুল লাগানো, ভ্রু প্লাক করা, চোখে আলাদা পালক লাগানো ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদন করে না।। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যেসব নারী সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে এবং যেসব নারী ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তাআলা তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারি: ৫৬০৪)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ১০ ব্যক্তির ওপর নবীজির অভিশাপ

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে, যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয় এবং যেসব নারী উল্কি অঙ্কন করে ও যাদের জন্য করে, রাসুলুল্লাহ (স.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারি: ৫৫৯৮, মুসলিম: ৫৬৯৩)

tattooing

হাদিস শরিফে নারীদের নির্দিষ্ট করে বলার কারণ হলো- আগেকার যুগে নারীরাই বেশি উল্কি আঁকত। বর্তমান বিশ্বেও উল্কি অঙ্কনে নারীদের হার বেশি। কিন্তু ইদানীং নারীদের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের মাঝেও উল্কি আঁকার প্রচলন শুরু হয়েছে। বরং বলা যায়, এখন নারী-পুরুষ উভয়ই এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিখ্যাত সেলিব্রেটিদের দেখাদেখি মানুষের মাঝে এর বিস্তার ঘটছে অনেক বেশি। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।’ (সুরা ত্বিন: ৪)


বিজ্ঞাপন


মনে রাখা উচিত, মানুষের শরীরের মালিক আল্লাহ, মানুষ নয়। এ শরীর ও অবয়ব আল্লাহ দিয়েছেন আমানত হিসেবে। এর মাধ্যমে কেবল আল্লাহর ইবাদত পালন করা যাবে। নিজের খায়েশ পূর্ণ করা যাবে না। নিজের মতো করে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। 

ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, মানুষের শরীর ও প্রাণ তার নিজের মালিকানায় নয়। বরং এটি কেবলই আল্লাহর মালিকানাধীন। মানুষকে শুধু ভোগ দখলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই সে তার শরীরকে ততটুকু ব্যবহার করতে পারবে, যতটুকু করতে সে অনুমতিপ্রাপ্ত। (ফাতহুল বারি: ১১/৫৩৯)

আরও পড়ুন: যে তিন অভ্যাস থাকলে জাহান্নাম নিশ্চিত 

মানুষের শরীরের চামড়ায় মোট সাতটি স্তর থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্তরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করাকে উল্কি বা ট্যাটু বলে। উল্কি আঁকা হয় ট্যাটু গান দিয়ে। এর মাথায় রয়েছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম সুঁই। সুঁইয়ের মাথায় থাকে রং। প্রতিবার সুঁইকে যখন চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করানো হয়, এর সঙ্গে রংও ভেতরে প্রবেশ করে। চামড়ার যে স্তরে রংটি লাগানো হয় তার নাম ডের্মিস। এই স্তরে যেকোনো রং প্রবেশ করলে তা সারা জীবন থেকে যায়। পাশাপাশি রঙের সঙ্গে থাকা রাসায়নিকও শরীরের মধ্যে থেকে যায় সারাজীবন।

ফলে হেপাটাইটিস, টিউবারকিউলোসিস, টিটেনাসের মতো বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। এসব কারণে ইসলামে উল্কি আঁকা হারাম। আল্লাহ তাআলা এ ধরনের গর্হিত কাজ থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর