সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বনি ইসরাইল যেসব পাপের জন্য বিখ্যাত 

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বনী ইসরাইল যেসব পাপের জন্য বিখ্যাত 

হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর আরেক নাম ছিল ইসরাইল। তাঁর নামানুসারে তাঁর বংশধররা ইতিহাসে বনি ইসরাইল বা ইসরাইলের সন্তান নামে পরিচিত লাভ করে। এই সম্প্রদায়েরই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি বা ইয়াহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। ‘ইয়াহুদি’ শব্দটি ‘হুদ’ শব্দ হতে গৃহীত। যার অর্থ তাওবা করা, অনুশোচনা করা। অথবা ইয়াহুদি শব্দটি ‘ইয়াহুদা’ শব্দ হতে গৃহীত। ইয়াহুদা ছিল হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাই। বনি ইসরাঈলের একজন সদস্য। সাধারণত সকল বনি ইসরাঈলের ওপর শব্দটির প্রয়োগ হয়ে থাকে। 

বনি ইসরাইলে অনেক নবী-রাসুলের আগমন হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে বিশেষ বিশেষ নেয়ামত দিয়েছিলেন এবং তাদের সময়ে শ্রেষ্ঠ জাতি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি ইসরাইল, আমার অনুগ্রহগুলো স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম এবং আমি তোমাদের সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।’ (সুরা বাকারা: ৪৭)


বিজ্ঞাপন


কিন্তু তারা নেয়ামতের শুকরিয়া তো করেইনি, বরং তারা অস্বীকারকারী, পাপী ও অহংকারী ছিল এবং অবাধ্য জাতী হিসেবেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বাস ভঙ্গ করা বনি ইসরাইলের একটি মন্দ স্বভাব। তাই তাদের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যখনই অঙ্গীকার করেছে, তখনই তা ভঙ্গ করেছে, বরং তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।’ (সুরা বাকারা: ১০০)

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে হাদিসে কী আছে

বনি ইসরাইল সুযোগ পেলেই যুগে যুগে বিশৃঙ্খলা বা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যতবার যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে মহান আল্লাহ ততবার তা নিভিয়েছেন, তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করে বেড়ায়, আল্লাহ বিশৃঙ্খল ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা মায়েদা: ৬৪)

বনি ইসরাইল মুমিনদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। পবিত্র কোরআনে নবী (স.)-কে এ ব্যাপারে  সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘আপনি মানুষের মধ্যে ইহুদি ও মুশরিকদের সবচেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন পাবেন, এবং যারা বলে, আমরা খ্রিস্টান, আপনি তাদের মুমিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখবেন...।’
(সুরা মায়েদা: ৮২)


বিজ্ঞাপন


কোরআনে বনি ইসরাইলকে ধুরন্ধর ও অর্থলোভী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আসলে তাদের অন্তরে আল্লাহর চেয়ে তোমাদের ভয়ই বেশি, কারণ তারা অবুঝ সম্প্রদায়।’ (সুরা হাশর: ১৩)

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের জন্য মুসলিম উম্মাহর ১৩ করণীয় 

তারা আল্লাহকেও দোষারোপ করেছিল। পৃথিবীতে একমাত্র বনি ইসরাইল আল্লাহকে নানাভাবে গালমন্দ করেছে। কখনো তারা আল্লাহকে দরিদ্র বলে আখ্যায়িত করেছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলে নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবগ্রস্ত এবং আমরা অভাবমুক্ত, তাদের কথা ও অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার বিষয়টি আমি লিখে রাখছি, আমি বলব, জ্বলন্ত আজাব ভোগ করো। (সুরা আলে ইমরান: ১৮১)

নিজেদের আল্লাহর সন্তান দাবি করেছে তারা। ইহুদিরা নিজেদের আল্লাহর সন্তান বলে দাবি করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়জন, আপনি বলুন, তাহলে তিনি তোমাদের অপরাধের কারণে কেন শাস্তি দেবেন, বরং তোমরা মানুষ...।’ (সুরা মায়েদা: ১৮)

এছাড়াও মানুষকে তাচ্ছিল্য করা বনী ইসরাইল বা ইহুদিদের একটি বড় বদভ্যাস। ইহুদিরা নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্যদের নিচু মনে করে। অন্যদের সম্পদ নিজেদের জন্য হালাল মনে করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিতাবধারীদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যার কাছে বিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও ফেরত দেবে, আবার এমন লোকও আছে, যার কাছে এক দিনার রাখলেও তার পেছনে লেগে না থাকলে সে তা ফেরত দেবে না; এর কারণ তারা বলে, নিরক্ষরদের ওপর আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং তারা জেনেশুনে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে।’ (সুরা আলে ইমরান: ৭৫)

আরও পড়ুন: সিরিয়া-ফিলিস্তিন-ইয়েমেনের জন্য যে দোয়া করেছেন নবীজি

বনি ইসরাইলের অপকর্মের কারণে মহান আল্লাহ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাদের চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিত করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মানুষের প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা যেখানেই ছিল লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের ওপর আল্লাহ ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়েছে, কারণ তারা আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করত, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালঙ্ঘন করত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১২)

বনি ইসরাইল অসংখ্য নবী-রাসুলকে হত্যা করেছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে এবং যারা ওই সব মানুষকে হত্যা করে, যারা ন্যায়বিচারের নির্দেশ দেয়, আপনি তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দিন।’ (সুরা আলে ইমরান: ২১)

বনী ইসরাইল বা ইহুদি জাতির অভিশপ্ত হওয়ার ১০ টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে সূরা নিসার ১৫৫-১৬১ আয়াতে। সংক্ষেপে কারণগুলো হলো—১. ব্যাপক পাপাচার ২. আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম গ্রহণ করতে মানুষ বাঁধা দেওয়া ৩. তাদের ধর্মে সুদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সুদ খাওয়া ৪. অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা ৫. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ৬. নবীদের হত্যা করা ৭. আল্লাহর প্রেরিত ধর্ম গ্রহণ না করে অজুহাত দেওয়া যে আমাদের অন্তর তালাবদ্ধ, নতুন কোনো ধর্ম গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। ৮. কুফরি করা ৯).মারিয়ামের (আ.) প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ১০. নবী ঈসা (আ.)-কে শূলে বিদ্ধ করে হত্যার মিথ্যা দাবি করা।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর