সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ফিলিস্তিনিদের জন্য মুসলিম উম্মাহর ১৩ করণীয় 

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ফিলিস্তিনিদের জন্য মুসলিম উম্মাহর ১৩ করণীয় 

বিশ্ববিখ্যাত দাঈ ড. জাকির নায়েক বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বে মোট মুসলিম জনসংখ্যা ২০০ কোটির বেশি। প্রত্যেকের দায়িত্ব ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান জেরুজালেম ও মসজিদুল আকসাকে রক্ষা করা। ফিলিস্তিনিরা গত কয়েক দশক ধরে মুসলিমদের সেই করণীয় পালন করে আসছে। এটি দায়িত্ব হিসেবে তাদের জন্য ফরজে কেফায়া। তারা সেখানে না থাকলে তা রক্ষা করা আমাদের সবার কর্তব্য ছিল। তাই ফিলিস্তিনিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যা করছেন তা হলো মুসলিম উম্মাহর পক্ষে একটি ফরজ দায়িত্ব পালন করছেন।

ফিলিস্তিনি সেসব ভাইদের জন্য মুসলিম উম্মাহর ১৩ করণীয় রয়েছে বলে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে লেকচারে তিনি বলেন, আমি সংক্ষেপে ১৩ টি পয়েন্ট উল্লেখ করব, যা প্রতিটি মুসলিমদের করা উচিত। যার মধ্যে প্রথম সাতটি প্রত্যেক মুসলিম করতে পারেন এবং করা উচিত। বাকিগুলো সকলের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে, তবে আল্লাহ যাদেরকে সেগুলো করার তাওফিক দিয়েছেন তারা করতে পারবেন।


বিজ্ঞাপন


১. ফিলিস্তিনের মানুষ এবং মসজিদুল আকসার জন্য দোয়া করা। তাদের নিরাপত্তার জন্য, বিজয়ের জন্য দোয়া করা উচিত। আল্লাহ যেন তাদের শান্তি ও সক্ষমতা দান করেন, আমাদের প্রার্থনা করা উচিত যেন ফিলিস্তিনিদের যারা শহিদ হয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। 

২. ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের নৃশংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা। 

৩. নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বর্বরতা সম্পর্কে সাহিত্যের মাধ্যমে, পুস্তিকা বা ই-বুকের মাধ্যমে বিশ্বকে সচেতন করা। 

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের বরকত নিয়ে কোরআন যা বলছে


বিজ্ঞাপন


৪. প্রচারের মাধ্যম হতে পারে বিলবোর্ড বা পোষ্টার। তা হতে পারে বিল্ডিং, বাড়ি বা হোল্ডিং অথবা বাস। এভাবে আপনি আপনার শহরে, আপনার দেশে, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি ভাই-বোনের ওপর সংঘটিত নৃশংসতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে পারেন।

৫. সারা বিশ্বে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হওয়া উচিত। নিজ নিজ দেশের আইন মেনে তা করতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিন, প্রতিবাদ করুন। সেখানে ইসরায়েলের হাইকমিশনে বা দূতাবাসে স্মারকলিপি দিন।

৬. বিশ্ব মুসলিমের জন্য সকল ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা উচিত। বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ মুসলিম। যদি সবাই ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করি, তা ইসরায়েলীদের জন্য অবশ্যই একটি ভালো শিক্ষা হবে।

৭. ফিলিস্তিনিদের জন্য আর্থিক অবদান রাখা। যত বেশি দান করবেন, তত বেশি ভালো। ফিলিস্তিনি ভাই-বোনেদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও খাবারের জন্য একটি অংশ বরাদ্দ করুন। কত দান করছেন, সেই পরিমাণ আল্লাহ দেখেন না। তবে তিনি আপনাকে দিয়েছেন তার থেকে আপনি কত শতাংশ দান করছেন সেটা তিনি দেখেন। আসুন আমরা অঙ্গীকার করি যে, আমরা আমাদের আয়ের শতকরা একটি ভাগ আল্লাহর পথে দান করি এবং এর থেকে আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি অংশ বরাদ্দ করি।

উপরোক্ত সাতটি পয়েন্ট প্রত্যেক মুসলিম করতে পারে। বাকি পয়েন্টগুলি মুষ্টিমেয় লোক করতে পারে। আল্লাহ যাকে যেরকম ক্ষমতা দিয়েছেন তার উপর নির্ভর করছে।

৮. মূলধারার মিডিয়াতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের নৃশংসতার কথা জোরালোভাবে প্রচার করার ব্যবস্থা করা। 

৯. আমাদের যাদের বিশেষ সংস্থা আছে, যারা আইন বিশেষজ্ঞ তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি মামলা করতে পারি।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে কোরআন-হাদিসের বাণী

১০. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিবাদ করা। তাদের দূতাবাস বা কনস্যুলেট থাকলে সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো যায়।

১১. বাণিজ্য বয়কট করা। যদি মুসলিমরা একত্রিত হয়ে ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য বয়কট করি, সম্পূর্ণ বাণিজ্য বর্জন করি, সকল মুসলিম দেশ সম্মিলিতভাবে যদি করি; আজ বিশ্বে ৫৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে, আমরা যদি বাণিজ্য বয়কট করতে পারি যাতে কোনোভাবেই তাদের কোনো পণ্যের লেনদেন বা ইসরায়েলের সাথে যেকোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক করা হবে না, তাহলে এটি একটি বড় কাজ হবে।

১২. ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক কঠোর করা। আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনেকে ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মুসলিম দেশ আছে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হয়েও এখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। আমি বিশ্বের ৫৭টি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের সকলকে অনুরোধ করব, এমন একটি আইন পাস করুন যাতে যে কেউ বাস্তবে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ইসরায়েলকে সমর্থন করে, ১০ বছর বা তা না হলে অন্তত ৫ বছর তাকে জেলে রাখা উচিত। তাদের যাতে কারাদণ্ড দেওয়া হয় সেটাকে আইনে পরিণত করুন। আমি জানি অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, যে ইসরায়েল পরাশক্তি দ্বারা সমর্থিত, কিন্তু আমরা বুঝতে ব্যর্থ হই যে আমাদের সঙ্গে আল্লাহ আছেন। মহান আল্লাহ আমাদের সমর্থন করেন এবং তিনি সর্বদা মুমিনদের সঙ্গে থাকেন। 

১৩. সকল মুসলিম দেশকে একত্রিত করা উচিত। যেমন আল্লাহ মহিমান্বিত কোরআনে সূরা আল ইমরান, ১০৩ নং আয়াতে বলেছেন, আল্লাহর রজ্জুকে সবাই সম্মিলিতভাবে দৃঢ় ও শক্তভাবে ধারণ কর। এটাই মহিমান্বিত কোরআন ও হাদিস আমাদেরকে বলছে যে বিভক্ত হবে না। তাই আমাদের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যে বিশ্বের সকল মুসলিমকে একত্রিত করা। আপনি যে চিন্তাধারারই হোন না কেন, আপনি যে মাজহাবের হোন না কেন, আপনি যে দেশেরই হোন না কেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য এবং মসজিদুল আকসার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। 

সূত্র: ইউটিউব, ড. জাকির নায়েক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর