মানবজাতির পিতা হজরত আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হজরত হাওয়া (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যে ভুলের শাস্তি হিসেবে তাঁদেরকে দুনিয়ায় আসতে হয়েছিল সেই গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য তাঁরা একটি দোয়া পড়েছিলেন এবং ক্ষমা পেয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে। যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
দোয়াটি হলো- رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ উচ্চারণ: ‘রব্বানা জলামনা আনফুসানা ওয়াইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতারাহামনা লানাকুনান্না মিনাল খ-সিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা আরাফ: ২৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: শয়তান থেকে সারাদিন নিরাপদ থাকার উপায়
জান্নাত থেকে বের হওয়ার এবং ক্ষমা পাওয়ার ঘটনা
আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.)-কে সস্ত্রীক জান্নাতে বসবাস করার সুযোগ দিলেন। কোরআনের ভাষায়, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং সেখানে খাও যেভাবে যেখান থেকে চাও তৃপ্তি সহকারে, কিন্তু এ গাছের নিকটেও যেও না।’ (সুরা বাকারা: ৩৫)
কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় আদম (আ.) আল্লাহর নিষেধের কথা ভুলে সেই গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। মহান আল্লাহ তার কাছে কৈফিয়ত তলব করলেন। হজরত আদম (আ.) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলেন এবং কোন ভাষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন সেই চিন্তা করতে লাগলেন।
বিজ্ঞাপন
ইবলিসের কাছেও আল্লাহ তাআলা একসময় কৈফিয়ত তলব করেছিলেন। যখন সে আদম (আ.)-কে সেজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ইবলিশ তখন অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে আল্লাহ পাকের নিকট বিভিন্ন কুযুক্তি পেশ করেছিল। তাই সে হয়েছিল অভিশপ্ত শয়তান ।
কিন্তু আদম (আ.)-এর কাছে যখন আল্লাহ পাক কৈফিয়ত তলব করলেন এই বলে যে, ‘আমি কি তোমাদের উভয়কে এ গাছ সম্পর্কে নিষেধ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি যে , নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আরাফ: ২২)
তখন আদম (আ.) শয়তানের মতো কোনো কুযুক্তি পেশ করেননি। তিনি আল্লাহ পাকের কাছে খুব লজ্জিত হলেন এবং আল্লাহ পাকের কাছে কীভাবে ক্ষমা চাইবেন তাই মনে মনে খুঁজছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তিনি নিজেই আদম (আ.)-কে ক্ষমা চাওয়ার বাক্য শিখিয়ে দিলেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আদম স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ হতে (তাওবার) কিছু শব্দ শিখে নিল (যা দ্বারা সে তাওবা করল) ফলে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ৩৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নিজেদের গুনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে বিনীতভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁরই শেখানো বাক্যে ক্ষমা চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।