বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তি কি শহীদ?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তি কি শহীদ?

ইসলামে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে সম্মানজনক মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। প্রকৃত শহীদ হলো- যারা তাওহিদের কালেমাকে সমুন্নত করার খালেস নিয়তে আল্লাহর পথে লড়াই করে মারা যায়। আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় যারা নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না।’ (সুরা বাকারা: ১৫৪) অন্য এক আয়াতে এসেছে, তারা রবের পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। (সুরা ইমরান: ১৬৯)

এই প্রকারের শহীদ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, তাদের রুহ সবুজ পাখির পেটে (রক্ষিত থাকে) যা আরশের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা বিচরণ করার পর দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। আল্লাহ যখন তাদেরকে কোনো আকাঙ্ক্ষা আছে কি না জিজ্ঞেস করেন, তখন তারা বলে- আর কী আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আমরা তো যথেচ্ছভাবে জান্নাতে বিচরণ করছি। কোনো আকাঙ্ক্ষার কথা জানাতে না পেরে এক পর্যায়ে তারা মহান আল্লাহকে বলেন, আমাদের রুহগুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিন আর পুনরায় আপনারই পথে নিহত (শহীদ) হই।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৭৩২)


বিজ্ঞাপন


তবে, আরও অনেক ব্যক্তিকে শহীদ বলে ঘোষণা করেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। এরা বিধানগত শহীদের আওতাভুক্ত। তাদের মধ্যে রয়েছেন মহামারীতে, আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীরা। আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) তার বাবা জাবের (রা.)-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তার কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।

তখন মহানবী (স.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ: ৩১১১)

আরও পড়ুন: দুইবার বিয়ে হওয়া নারী জান্নাতে কোন স্বামীর কাছে থাকবে?

জাবের বিন আতিক (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে। ১. মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৩ শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ। ৪. পেটের রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৫. আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ। ৬. যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ। ৭. সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। (মুয়াত্তা মালিক: ৫৫৪, ৮০২, আল মুজামুল কাবির: ১৭৮০, সহিহ কুনুজু সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ: ২৩)


বিজ্ঞাপন


উল্লেখিত হাদিসের আলোকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিরাও শহীদি মর্যাদা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে, পূর্বশর্ত হলো- মুসলমান হতে হবে। ইসলামে ঈমান ছাড়া শহীদি মর্যাদা লাভ হয় না।

উল্লেখ্য, বিধানগত শহীদের মর্যাদা পাবেন আরও অনেকে। যেমন— কাফের, বিদ্রোহী বা ডাকাতের আক্রমণের আঘাতে নিহত ব্যক্তি। (বুখারি: ৩/১০২৭, হাদিস: ৪১৯৬) ইসলামি রাষ্ট্রের সীমানারক্ষী, ডিউটিকালীন যার স্বাভাবিক মুত্যু হয়েছে। (মুসলিম: ৩/১৫২০, হাদিস: ১৯১৩) আল্লাহর পথে শাহাদত লাভের প্রার্থনাকারী, কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু তার সে বাসনা পূর্ণ করেনি। (মুসলিম: ৩/১৫১, হাদিস: ১৯০৯) জালিমের সঙ্গে অথবা নিজ পরিবার হেফাজতের লড়াইয়ে মৃত্যুবরণকারী। (আহমদ: ১/১৯০, হাদিস: ১৬৫৭) মজলুম রাজবন্দী, বন্দীদশাই যার মৃত্যুর কারণ। (উমদাতুল কারি: ১০/১৪৪) বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে যার মৃত্যু হয়েছে। (মুসতাদরাক হাকেম: ৩/৯০৯, হা: ২৪১৬) হিংস্রপ্রাণী যাকে ছিড়ে ফেড়ে মেরে ফেলেছে। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৫/৩৯০, হা: ৯৫৫৯) কুমারী অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীনী। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩/৩৬৬, হা: ২৮০৩) প্রবাসে-পরদেশে মৃত্যুবরণকারী। (ফাতহুল বারি: ৬/৫৬)

আরও পড়ুন: আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মর্যাদা

ইলমে দ্বীন চর্চায় লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী। (উমদাতুল কারি: ১০/১৪৫) সওয়াবের আশায় আজান দেয় যে মুআজ্জিন। (আততারগিব ওয়াত তারহিব: ১/১২৯, হাদিস: ৩৬৪) সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী। (সুনানে তিরমিজি: ১/৩৭৭, হা: ১২১২) উম্মতের ফেতনা-ফাসাদের সময় ও ‍যিনি সুন্নাতের ওপর অটল থাকেন। মেশকাত: ১/৫৫, হাদিস: ১৭৬) যিনি রাত্রিবেলায় অজু করে শয়ন করেন এবং ওই ঘুমেই তার মৃত্যু এসে যায়। (উমদাতুল কারি: ১০/১৪৫) জুমার দিনে মৃত্যুবরণকারী। (উমদাতুল কারি: ১০/১৪৫) দৈনিক চাশতের নামাজ আদায়কারী। মাসে তিনদিন রোজা পালনকারী এবং ঘরে-সফরে সর্বদা বেতের নামাজ আদায়কারী। (উমদাতুল কারি: ১০/১৪৫) দৈনিক একশত বার দুরূদ পাঠকারী। (ত্ববরানী ফিল আওসাত: ৫/২৫২,পৃ.৭২৩৫) যে স্ত্রী তার সতীনের প্রতি তার স্বামীর (অন্যায়) ভালোবাসার দুঃখ সয়ে সয়ে মৃত্যুবরণ করে। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/২৫২, আহকামে মায়্যেত: ১০১-১১২)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর