শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ছোট-বড় শিরক চেনার ও আত্মরক্ষার উপায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২, ০৯:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

ছোট-বড় শিরক চেনার ও আত্মরক্ষার উপায়

ইসলামে শিরক মহাপাপ ও গুরুতর অপরাধ। শিরকের পরিণাম ভয়াবহ। এটি মানুষের চূড়ান্ত ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অতি বড় জুলুম।’ (সুরা লোকমান: ১৩)

শিরক অর্থ- অংশীদার করা, সহযোগী বানানো, সমকক্ষ করা ও সম্পৃক্ত করা। কার্যত এমন সব বিশ্বাস, কাজ, কথা ও অভ্যাসকে শিরক বলা হয়, যার দ্বারা মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত (রব), উলুহিয়্যাত (ইলাহ), নাম ও গুণাবলীতে অপর কারো অংশীদারিত্ব বা সমকক্ষতা প্রতীয়মান হয়। আকিদার পরিভাষায়, শিরক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় অন্য কারো জন্য করা।


বিজ্ঞাপন


শিরক সংঘটিত হতে শতভাগ অংশীদার সাব্যস্ত করা আবশ্যক নয়; বরং একভাগ অংশীদার করলেও তাকে অংশীদার বলা হয়। তাই আল্লাহ তাআলার হকের সামান্যতম অংশ অন্যকে দিলেই তা শিরকে পরিণত হয়। শিরক মহান আল্লাহর সঙ্গে বিদ্রোহের শামিল। কারণ আল্লাহ তাআলাই বান্দাকে শিরক করতে নিষেধ করে করেছেন।

‘আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। এটি ছাড়া যাবতীয় গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।’ (সুরা নিসা: ১১৬)

তাওহিদের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকটি হচ্ছে শিরক। সাধারণ অর্থে তাওহিদ বলতে আল্লাহর একত্ববাদকে বোঝানো হলেও শুধুমাত্র এই অর্থ জানলেই তাওহিদ সম্পর্কে জানা শেষ হয়ে যায় না। তাওহিদের সংজ্ঞা আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। পৃথিবীতে যত নবী ও রাসুল এসেছেন, তারা সবাই তাওহিদ শেখানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মুসলিম বিদ্বানগণ তাওহিদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। ১) তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ ২) তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ ৩) তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত। প্রত্যেকটি প্রকার একেকটি বিভাগের মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এসব নিয়ে পড়ার সুযোগ বা রেওয়াজ না থাকায় মুসলিম সমাজে শিরক ছড়িয়ে পড়ছে। কারণ, তাওহিদ না বুঝার কারণেই শিরক বাড়ে।

একারণে অনেকে জানেন না যে, ইবাদতে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার ইচ্ছা লুকায়িত থাকাও শিরক। এটিকে ‘শিরকে আসগর’ তথা ছোট শিরক বলা হয়। অপর নাম রিয়া। মুমিনের ইবাদত ধ্বংস করে তাকে জাহান্নামি বানানোর জন্য শয়তানের অন্যতম ফাঁদ এই ‘রিয়া’বা লোক দেখানো আমল। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—


বিজ্ঞাপন


“আমি যে বিষয়টি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, তা হলো শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! শিরকে আসগর কী? তিনি বলেন, রিয়া বা লোক দেখানো আমল। কেয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও, দেখো তাদের কাছে তোমাদের পুরস্কার পাও কি না!’’ (আহমদ: ৫/৪২৮-৪২৯; হাইসামি, মাজমাউজ জাওয়াইদ: ১/১০২। হাদিসের মান- সহিহ)

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করাও শিরক। আব্দুলাহ ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে কসম করল, সে কুফরি করল অথবা শিরক করল’। (তিরমিজি: ১৫৩৫, মান-সহিহ) মূলত আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো নামে কসম করলে কসম হয় না। যেমন- রাসুলুল্লাহর কসম, কাবা ঘরের কসম, নিজ চোখের কসম, বাবা-মায়ের কসম, বিদ্যার কসম ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন—

فَلاَ تَجْعَلُوْا لِلهِ أَنْدَادًا وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ  “সুতরাং তোমরা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। অথচ তোমরা এ সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছো” (সুরা বাকারা: ২২)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন,  ‘আনদাদ’ বলতে এখানে শিরককে বোঝানো হচ্ছে, যা অন্ধকার রাতে কালো পাথরে পিঁপড়ার চলার চেয়েও সূক্ষ্ম। যা টের পাওয়া কঠিন। যেমন এ কথা বলা যে—হে অমুক! আল্লাহ তাআলা এবং তোমার-আমার জীবনের কসম!

অথবা এ কথা বলা যে, যদি কুকুরটা না হতো, চোর অবশ্যই আসত। যদি ঘরে হাঁসগুলো না থাকতো তাহলে অবশ্যই চোর ঢুকত। অথবা সঙ্গীকে এ কথা বলা যে, আল্লাহ তাআলা এবং তুমি না চাইলে কাজটা হতো না, অথবা আল্লাহ তাআলা এবং অমুক না থাকলে কাজটা হতো না। কারণ, এসব কথা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।”

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন,  ‘রাসুল (স.) আমাদের নিকট আসলেন যখন আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তু সম্পর্কে সংবাদ দেবো, যা তোমাদের জন্য দাজ্জালের চেয়েও অধিক ভয়ঙ্কর। আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, গোপন শিরক। যেমন, কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ছিলো, অতঃপর কেউ তাকে দেখছে বলে সে নামাজকে খুব সুন্দর করে পড়তে শুরু করলো।’ (ইবনু মাজাহ: ৪২৭৯; আহমদ: ৩/৩০; হাকিম: ৪/৩২৯)

আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (স.) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক ব্যক্তি যুদ্ধ করছে সওয়াব ও সুনামের জন্য। এমতাবস্থায় সে পুণ্য পাবে কি? রাসূল (স.) বললেন: সে কিছুই পাবে না। লোকটি রাসুল (সা.)-কে এ কথাটি তিনবার জিজ্ঞেস করলো। আর রাসুল (স.) প্রতিবারই তাকে বললেন, সে কিছুই পাবে না। অতঃপর রাসুল (স.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এমন আমলই গ্রহণ করে থাকেন, যা হবে একেবারেই নিষ্কলুষ এবং যা শুধু তার জন্য নিবেদিত।’ (নাসায়ি: ৩১৪০; বায়হাকি: ৪৩৪৮)

আল্লাহ তাআলা বলেন,  ‘আপনি বলে দিন, নিশ্চয়ই আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে আমার প্রতি এ প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদই একমাত্র মাবুদ। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ: ১১০)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহ.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা একক; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তখন সকল ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য হতে হবে। অতএব নেক আমল বলতে রাসুল (স.)-এর আদর্শসম্মত রিয়ামুক্ত ইবাদতকেই বুঝানো হয়। মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্য থাকলে তা নেকআমল বলে গণ্য হবে না।’

আর যেসব বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না, সেসব বিষয়ে অন্য কারও কাছে আশা করা ‘শিরকে আকবর’ তথা বড় শিরক। যেমন আল্লাহ ছাড়া কোনো পীর-আওলিয়াদের কাছে সন্তান চাওয়া, ব্যবসায়-বাণিজ্যে আয়-উন্নতির জন্যে অথবা কোনো বিপদ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো পীর-ফকীরের নামে বা মাজারে মান্নত দেওয়া, সেজদা করা, পশু জবেহ করা ইত্যাদি বড় শিরক বলে গণ্য। আল্লাহ বলেন—

‘(হে মুহাম্মাদ) আপনি আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো কিছুর নিকট প্রার্থনা করবেন না, যা আপনার কোনো প্রকার ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। কাজেই হে নবী! আপনি যদি এমন কাজ করেন, তাহলে আপনিও জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।’ (সূরা ইউনুস: ১০৬)

বড় শিরকের সংখ্যা নির্ধারিত নেই; তবে শাখা-প্রশাখা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো ১. আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া। ২. এক আল্লাহ ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য পশু জবাই করা। ৩. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে মানত করা। ৪. কবরবাসীর সন্তুষ্টিলাভের জন্য কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা ও কবরের পাশে বসা। ৫. বিপদে-আপদে আল্লাহ ছাড়া অন্যের অন্যের উপর ভরসা করা। এ জাতীয় আরো অনেক শিরক রয়েছে, যা বড় শিরক হিসেবে গণ্য হবে।

বড় শিরক বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। এ ধরনের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি তওবা না করে মারা যায়, তাহলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’(সুরা মায়েদা: ৭২)

শিরক নেক আমলগুলো ধ্বংস করে দেয়

শিরক থেকে বিরত থাকতে না পারলে কোনো নেক আমলই কাজে আসবে না। কারণ, শিরক বান্দার নেক আমলগুলো নষ্ট করে দেয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই এই ওহী হয়েছে তুমি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করলে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা যুমার: ৬৫)

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘..আমি তাদের আমলের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দেব।’ (সুরা ফোরকান:২৩)

সমাজে কুসংস্কার বৃদ্ধি পায়

যেখানে শিরক চলতে থাকে সেখানে নানা ধরনের কুসংস্কার ও ভয় প্রকাশ পেতে থাকে কোনো প্রকাশ্য কারণ ছাড়াই। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন, 'যারা কুফরি করে আমি তাদের অন্তরে ভয়কে নিক্ষেপ করব। ওই কারণে যে তারা আল্লাহর সাথে শিরক করছে, যে সম্বন্ধে আল্লাহ পাক কোনো প্রমাণ পাঠাননি। তাদের ঠিকানা আগুন এবং জালেমদের জন্য সেটা কতই না নিকৃষ্ট জায়গা।' (সুরা আলে ইমরান: ১৫১)

শিরক চেনার ও বাঁচার উপায়

শিরক থেকে বাঁচতে হলে এককথায় তাওহিদ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাহলেই তাওহিদ ও শিরকের সঠিক ব্যাখ্যা ও পার্থক্য জানা সহজ হবে। এরপর শিরকের ভয়াবহতা ও অশুভ পরিণতির কথা চিন্তা করে অতীতের শিরকের পাপ থেকে তাওবার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর বান্দা যখন একাগ্রচিত্তে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে, তখন আল্লাহ তার বিগত দিনের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।

প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে, তার জন্য দশগুণ নেকি রয়েছে অথবা তার চেয়ে বেশি। আর যে একটি পাপ করবে, তার বিনিময়ে সে ততটাই পাবে অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। যে আমার প্রতি এক বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি এক হাত নিকটবর্তী হব। আর যে আমার প্রতি এক হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি দুহাত নিকটবর্তী হব। যে আমার দিকে হেঁটে আসবে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাব। যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে পৃথিবী সমান পাপসহ আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, আমি সমপরিমাণ ক্ষমাসহ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করব।’(সহিহ মুসলিম: ৭০০৯)

শিরক থেকে আত্মরক্ষার দোয়া

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পিপড়ার নিঃশব্দ গতির মতোই শিরক তোমাদের মধ্যে গোপনে অনুপ্রবেশ করে। তিনি আরো বললেন, ‘আমি তোমাদের একটি উপায় বলে দিচ্ছি, যা করলে তোমরা বড় শিরক ও ছোট শিরক থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। তোমরা প্রতিদিন তিনবার পড়বে—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকাবিকা শাইয়ান ওয়া আনা আঅলামু ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আঅলামু।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করা থেকে আশ্রয় চাই। জানা-অজানা (শিরক-গুনাহ) থেকেও ক্ষমা চাই।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৭২১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক ও তাওহিদের জ্ঞান অর্জন করার, শিরকমুক্ত জীবন পরিচালনা করতে অব্যাহত চেষ্টাসহ সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর