বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা ‘শিগগিরই’

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা ‘শিগগিরই’

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে দফায় দফায় মিটিং করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা। তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী এবং সমমনা দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করে তারপরই সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপি। এই বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও শিগগিরই চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি।

সরকার পতনের চলমান আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপি। সেজন্য ধাপে ধাপ উপজেলা, জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপি। এরপর ঢাকাকে ঘিরে 'লংমার্চ' বা 'ঘেরাও'-এর মতো কর্মসূচি আসতে পারে। এসব কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করছে দলটি। এরমধ্য দিয়ে সব শ্রেণির মানুষকে এক সুতোয় গেঁথে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

এ লক্ষ্যে দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। একটি ‘কোর কমিটি’ও গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। কমিটিতে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট থেকে ২-৩ জন করে নেতা থাকবেন। পাশাপাশি এলডিপি ও গণফোরাম থেকেও প্রতিনিধি থাকবেন। এ ছাড়া শরিক সব জোট ও দলের প্রণীত দফাগুলোর সমন্বয়ে আন্দোলনের অভিন্ন ঘোষণাপত্রও প্রণয়ন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে যৌথ ঘোষণাপত্রের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। শরিক জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিগগিরই তা চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

bnp-1কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, গত ১৪ বছর ধরে আমরা মরতে মরতে বেঁচে আছি। এখন আমরা হয় মরব, না হয় বাঁচব। আমরা মরতে চাই না, বাঁচতে চাই। আমরা এখন প্রস্তুত, যেকোনো ধরনের কর্মসূচির জন্য। নেতাকর্মীরাও ব্যাপকভাবে সক্রিয় ও প্রস্তুত। জনগণ ও নেতাকর্মীদের সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে রয়েছি, এর শেষটা দেখতে চাই।

বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই বলেই তারা জনগণের কাছে যেতে পারছে না। তাই আমাদের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তবে বাধা দিতে পারবে না সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে।

বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন কোন দিকে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই চলমান প্রক্রিয়া চলতে চলতে যখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে তখন সেটা নেওয়া হবে। আন্দোলনের নিজস্ব একটি গতি-প্রকৃতি রয়েছে। চলার পথে যখন যেটা প্রয়োজন হয় তখন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: তৃণমূলে কর্মসূচি: কী বার্তা দিতে চায় বিএনপি?

সরকার হার্ড লাইনে রয়েছে, আপনারা কর্মসূচি ঘোষণা করলে তারা পাল্টা ‌কর্মসূচি দিচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, সরকার হার্ড লাইনে থাকবে এটা আমরা জানি। হার্ড লাইন ছাড়া তাদের ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। লাঠিসোটা, অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া আওয়ামী লীগের তো কোনো রাজনীতি নেই। এগুলো দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, এভাবে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। তাদের তো কোনো জনসমর্থন নেই। তারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এভাবে জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে লাভ কী? আমরা তো আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করেছি। হয়তো কিছু জায়গায় তারা মারামারি করেছে কিন্তু বাকি ইউনিয়নগুলোতে তো কর্মসূচি হয়েছে। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তো জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না। তাদের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই বলেই তারা জনগণের কাছে যেতে পারছে না। তাই আমাদের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমাদের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীতে এভাবেই আন্দোলন সফল হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে।

BNP-3

বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত আন্দোলনে ময়মনসিংহ বিভাগ কতটা সক্রিয় এবং প্রস্তুত জানতে চাইলে বিভাগটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ব্যাপকভাবে সক্রিয়, ব্যাপকভাবে প্রস্তুত এবং ব্যাপকভাবে কর্মসূচি পালিত হয়। জনগণ ও নেতাকর্মী সবাই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। তারা সরকারের দমন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, গুলি খাচ্ছে, আহত হচ্ছে, গ্রেফতার হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হচ্ছে। আমরা সবাই প্রস্তুত- সেই বার্তা দিয়েছি। জনগণ ও নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছি- আমরা এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে রয়েছি।

প্রিন্স বলেন, গত ১৪ বছর ধরে আমরা মরতে মরতে বেঁচে আছি। এখন আমরা হয় মরব, না হয় বাঁচব। মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি। আমরা মরতে চাই না, বাঁচতে চাই। আমরা এখন প্রস্তুত যেকোনো ধরনের কর্মসূচি জন্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব আমাদের সঙ্গে মিটিং করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, আমরা আবার তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক করছি। আমরা এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে রয়েছি, এর শেষটা দেখতে চাই।

আরও পড়ুন: যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির অর্জন কী?

বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত আন্দোলনে আপনারা কতটা সক্রিয় জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাজশাহীতে (আওয়ামী লীগে) একটি ভোটও পড়েনি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ২৩টি ইউনিট আন্দোলনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এছাড়া ১৪ সাল এবং ১৮ সালে রাজশাহীতে আমরাই আন্দোলন করেছি। এখন তো পুলিশ ছাড়া মাঠে আওয়ামী লীগের কোনো লোক দেখা যায় না। পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছে, লাঠিপেটা করছে, মারধর করছে। আওয়ামী লীগের কোনো লোকের সঙ্গে আমাদের কোনো গণ্ডগোল নেই। কর্মসূচি পালন করার সময় দূর থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন চিল্লাচিল্লি করেছে, কিন্তু কাছে কেউ আসেনি।

আপনারা কী আশা করেন যে কেন্দ্র এবার আপনাদের হতাশ করবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে চাঁদ বলেন, কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা শীর্ষ নেতা, তাদের বিরুদ্ধে তো আর সেভাবে বলা যায় না। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে। ম্যাডাম বন্দি, তারেক রহমান দূরে রয়েছেন। কিছু লোকের গাফিলতি রয়েছে। এই বিষয়টি দল ও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে। নেতাকর্মীদের কাছে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আগামী আন্দোলনের জন্য যেকোনো সময় তারেক রহমান ডাক দিলেই রাজশাহীতে আমরা সফল হব।

এমই/জেএম/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর