সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের অবস্থান কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের অবস্থান কী?
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে বিএনপি বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। ছবি: ঢাকা মেইল

দীর্ঘদিন ধরে জোট রাজনীতি চালিয়ে আসা বিএনপি সম্প্রতি জোট বিলুপ্ত করে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনার পর যুগপৎ কর্মসূচিও পালন করেছে দলটি। ইতোমধ্যে বিএনপির নেতৃত্বে কয়েকটি যুগপৎ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রথম কর্মসূচিতে বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী থাকলেও পরের কর্মসূচি সেভাবে পালন করেনি দলটি। ওইদিন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জামায়াত কি যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচিতে আছে?  

গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সাথে ১০ দফা দাবিতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াত। প্রথম কর্মসূচিতে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর এবং অন্যান্য জেলা ও মহানগরে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল হয়। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকায় গণমিছিল করে জামায়াত। সেদিন মালিবাগ এলাকায় জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন:  বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ‘মনোমালিন্য’

তবে ১১ জানুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পালন করলেও ওই কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে জামায়াত আলাদাভাবে ১০ দফা দাবিতে ঢাকায় আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ঢাকা মহনগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত আমির, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। যারা গণতন্ত্র মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করবে জামায়াত।’


বিজ্ঞাপন


যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে কী বলছেন জামায়াত ও বিএনপি নেতারা

যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসিকে বলেন, জামায়াতের ভূমিকা হলো আন্দোলনের সঙ্গে থাকা। যুগপৎ আন্দোলনে আমরা আছি। আমরাতো সবাই একমত হয়েছি যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো, জোট আর থাকবে না।

bnp2

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ২৪ তারিখে সারাদেশে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। বিএনপিও করেছে, আমরাও করেছি। ৩০ তারিখে ঢাকায় বিএনপিও করেছে, আমরাও করেছি। এরপর ১১ জানুয়ারি সেটা একটু ভিন্ন প্রেক্ষিতে আমরা করেছি।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিএনপি করেছে গণঅবস্থান আর আমরা সেই দিন যেহেতু ১১ জানুয়ারি ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছিল, এই দিবসটি আমরা আলোচনার মাধ্যমে পালন করেছি।

আরও পড়ুন: জামায়াত নিয়ে টুকুর বক্তব্যে বিএনপিতে অস্বস্তি

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিবিসিকে বলেন, বিএনপি এককভাবেই আন্দোলন করছে। ফরমাল ইনফরমাল কোনো ডিসকাশনই (আলোচনা) আমাদের জামায়াতের সাথে নাই। আমরা যে লিয়াজোঁ কমিটি করেছি, লিয়াজোঁ কমিটি সরাসরি যেসব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে, তারাই আমাদের সাথে আছে যুগপৎ আন্দোলনে আছে।

টুকু বলেন, যুগপৎ করার অর্থই হচ্ছে যার যার মতো সে সে করো। সেখানে যদি কোনো দল নিজের ইচ্ছায় করে, আমরাতো না করতে পারবো না।

আনুষ্ঠানিক আলোচনায় জামায়াতকে না রাখা হলেও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ মনে করেন বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়েনি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব বেড়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিএনপি হয়ত যেভাবে ভূমিকা রাখার দরকার সেভাবে রাখে নাই। এটা দূরত্ব বাড়া বা কমার কোনো বিষয় না।’

আরও পড়ুন: ‘মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে’

আকন্দ বলেন, ‘জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল, বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল। সুতরাং যার যার অবস্থান থেকে প্রত্যেকে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দূরত্ব আমাদের বাড়েও নাই কমেও নাই।’

bnp3

জামায়াতের কর্মসূচি প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের নেচার (চরিত্র) যেমনই হোক আন্দোলনের পার্ট হিসেবেই জামায়াত এখনকার কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করছে। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে- ‘যুগপৎ আন্দোলন মানে লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে পরস্পরের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। একটা আন্দোলনে কাউকে না কাউকে তো নেতৃত্ব দিতে হয়।’

আকন্দ বলেন, ‘সঙ্গত কারণেই বিএনপি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে। তবে বিএনপি জামায়াতের সাথে অফিসিয়ালি আলোচনা করেনি। এটা আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এভাবে তো যুগপৎ হয় না।’

তবে এসবের পরেও জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলেনে আছে এবং যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দলটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান মতিউর রহমান আকন্দ।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস মনে করেন, কেউ যদি বিএনপির সঙ্গে বিএনপির ব্যানারে আসতে চায়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য আছি, আমরা ভোটের অধিকার-ভাতের অধিকারের জন্য আছি, আমরা আইনের শাসন চাই, আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে চাই-যদি আমাদের এই নীতিতে কেউ একমত হন, তাহলে আমাদের ব্যানের আসতেই পারেন, আসবেন। আমরা মোস্ট ওয়েলকাম জানাবো।

আন্দোলনে জামায়াতনির্ভরতার প্রশ্নে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিবিসিকে বলেন, অনেক দিন ধরেই জামায়াতের সাথে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম কিছুই করছি না। দুই নম্বর হচ্ছে যে, বিএনপি তার নিজের শক্তিতে অনেক বলীয়ান এবং বিএনপির সংগঠন তৃণমূল থেকে এখন ভিত অনেক মজবুত। আমরা একটা ইলেকশন অ্যালায়েন্স করেছিলাম, তো ইলেকশন নাই অ্যালায়েন্সও নাই। সুতরাং জামায়াতের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি কোনোকালে চলছে বলে আমি মনে করি না।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর