দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরের কিছু বেশি সময়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। তাই এখনই রাজপথে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে তারা। নির্দলীয় সরকারের দাবিসহ বেশ কিছু দাবিতে সরব রয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চারটি বিভাগীয় সমাবেশ সফল করেছে তারা। বিভাগীয় সমাবেশ গুলোতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় উজ্জীবিত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতাকর্মীদের এমন মনোবলে আগামী দিনে চূড়ান্ত আন্দোলন নিয়েও আশাবাদী হয়ে উঠছে দলটির হাইকমান্ড।
আরও পড়ুন: মাঠ গরম ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার কৌশল বিএনপির
বিজ্ঞাপন
বিভাগীয় সমাবেশে আসতে পথে পথে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন দলের হামলা, বাধা, ভাঙচুর এবং গ্রেফতারের অভিযোগের পরও চারটি বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক লোকের জনসমাগম হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর সফলভাবে সম্পন্ন করেছে বিএনপি। চারটি সমাবেশের পর তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বিভাগীয় বাকি সমাবেশগুলোতে বাধা দিয়েও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।
ময়মনসিংহ ও খুলনার মতো রংপুরেও দুই দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা মোটর মালিক সমিতি। ধর্মঘটের কারণে দুই দিন আগে থেকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অংশ নিতে রংপুরে আসেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। আবাসিক হোটেলগুলোতে জায়গা না পেয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠ সমাবেশস্থলে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সরকার। এতে কোনো লাভ হবে না। কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ যত কিছুই করুক কোনো লাভ হবে না। গণপরিবহন বন্ধ করার কারণে সাধারণ মানুষের সমাবেশে আসার জন্য আগ্রহ বেড়েছে। বিএনপির সাথে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে এজন্য সমাবেশ গুলো লোকে-লোকারণ্য হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
তারা বলেন, মানুষ এখন মুক্তি চায়, মানুষ এখন নিঃশ্বাস নিতে চায়। যে সকল দাবি নিয়ে আমাদের এই আন্দোলন এটা জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দলীয় কোনো সংশ্লিষ্টতা নয়। এজন্য এত কষ্ট করেও মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছে। এখানে শুধু বিএনপি’র কর্মীরাই নয়, প্রচুর পরিমাণে সাধারণ মানুষও রয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ আসছে, কৃষকরা আসছে, শ্রমিকরা আসছে, রিকশাওয়ালারা আসছে। কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ যত কিছুই করুক কোনো লাভ হবে না।
আরও পড়ুন: বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা কতদূর?
জানতে চাইলে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু ঢাকা মেইলকে বলেন, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে আমাদের এই কর্মসূচি। যে সকল দাবি নিয়ে আমাদের এই আন্দোলন এটা জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দলীয় কোনো সংশ্লিষ্টতা নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত। সমাবেশকে সফল করার জন্য গত তিনদিন ধরে জনগণ এসেছে। গণপরিবহন বন্ধ করার কারণে সাধারণ মানুষের সমাবেশে আসার জন্য আগ্রহ বেড়েছে। বিএনপির সাথে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে এজন্য আমাদের সমাবেশগুলো লোকে-লোকারণ্য হচ্ছে। সমাবেশে এমন ভাবে মানুষ এসেছে মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে ছিল সমাবেশের উপস্থিতি। জনগণের সংশ্লিষ্ট বিষয় বলেই সাধারণ মানুষ আমাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আমাদের কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ যত কিছুই করুক কোনো লাভ হবে না।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু) ঢাকা মেইলকে বলেন, এই সরকারের সাথে বাংলাদেশের কোনো জনগণ নেই। কারণ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কারণ হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটি সমগ্র জনগণকে আঘাত করেছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং সাধারণ মানুষের সমস্যা। আর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে এই সরকার। আরও অনেক কারণ রয়েছে যার মধ্যে গুম, খুন, মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই। যার কারণে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ খরচে পায়ে হেঁটে এসে সমাবেশ সফল করছে। গণপরিবহন বন্ধ করেও জনগণকে থামিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: এবার ‘অগ্নিপরীক্ষায়’ বিএনপির ঢাকার নেতারা
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা মেইলকে বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষের খাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ এখন মুক্তি চায়, মানুষ এখন নিঃশ্বাস নিতে চায়। এজন্য এত কষ্ট করেও মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছে। এখানে শুধু বিএনপি’র কর্মীরাই নয়, প্রচুর পরিমাণে সাধারণ মানুষও রয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ আসছে, কৃষকরা আসছে, শ্রমিকরা আসছে, রিকশাওয়ালারা আসছে।
ডিসেম্বরে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না আওয়ামী লীগের এমন বক্তব্যে জবাবে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই সরকার হচ্ছে স্বৈরাচার। এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এ সরকার রক্তচক্ষু দেখায়। এটা এই বক্তব্যে প্রকাশ করে। আমরা জনগণ নিয়েই মাঠে থাকব। সরকারের মতো পুলিশ নিয়ে মাঠে থাকব না। আর জনগণের শক্তির কাছে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। এটা রংপুরের গণসমাবেশ প্রমাণ করেছে। খুলনা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামেও তাই প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগের এমন বক্তব্যে আমরা মোটেই উদ্বিগ্ন নই।
এমই/এএস