দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরের কিছু বেশি সময়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কর্মসূচিতে সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সোচ্চার থাকতে চায় দলটি। ধীরে ধীরে নির্বাচন কমিশন ও নির্দলীয় সরকারসহ একাধিক ইস্যুতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কর্মসূচি টেনে নিয়ে মাঠ গরম রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় ১৬টি বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। তৃণমূল ও রাজধানীর পর আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে গণসমাবেশ করছে দলটি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ হয়েছে, আগামীকাল শনিবার (২২ অক্টোবর) খুলনায় সমাবেশ। ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই কর্মসূচি।
বিজ্ঞাপন
সূত্র জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে সোচ্চার থাকতে চায় বিএনপি। তবে দলটি এখনই হরতাল বা অবরোধের মতো বড় কর্মসূচিতে যাবে না। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে এখনও বাকি এক বছরের বেশি সময়। এজন্য এখনই বড় কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করতে চায় না। এছাড়া সংঘাতে জড়াতে চায় না সরকারি দলের সঙ্গে। তবে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি রাখবে। নির্বাচনের কাছাকাছি গিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় দলটি।
নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার জন্য আপাতত বিএনপি মিছিল-সমাবেশের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগোবে। সরকারবিরোধী সব দলের সাথে আলোচনা করেই সরকার পতনের কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে দলটি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি আয়োজিত কর্মসূচিতে একের পর এক হামলার ঘটনাও ঘটছে, এতে পাঁচজন নেতাকর্মীকে জীবনও দিতে হয়েছে। একইসাথে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। তারপরেও মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, এবার তাদের আর পিছু হটার সুযোগ নেই। যেকোনো মূল্যে আন্দোলনে তারা সাফল্য পেতে চান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে কারণে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকার মামলা হামলা মাধ্যমে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এসব মামলা-হামলা উপেক্ষা করে এখন মানুষ জেগে উঠেছে। আমাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষের আসতে শুরু করেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, সরকার আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দিলে গ্রামগঞ্জ থেকে প্রতিবাদ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে আমরা আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো মানুষের কাছে বলছি, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছি। আমরা দাবিগুলো সরকারের কাছে জানাচ্ছি, সরকার মানলে ভালো কথা, না মানলে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করেছি, এখন আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করছি। যা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে। তারপরে কী হয়, করতে হবে সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে আমি দলনেতা ছিলাম। সেখানে মানুষের অংশগ্রহণ, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত, নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, তাদের চোখে মুখের চাহনি, তাদের কমিটমেন্ট দেখেছি। আমার মনে হলো, নেতাকর্মীরা কঠোর কমিটমেন্ট করেছে, সরকার দাবি না মানলে যেকোনো সময় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। সাধারণ মানুষেরও এই দাবি-দাওয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছে। কারণ দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এতে মানুষকে অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ এই দুর্নীতিবাজ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা মনে করে এই সরকারের ম্যান্ডেড নেই। মানুষের ভোটে এই সরকার তৈরি হয়নি। এজন্য সাধারণ মানুষের ক্ষোভের যে বহিঃপ্রকাশ সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হচ্ছে। ময়মনসিংহে সেই একই চিত্র দেখা গেছে। আমরা সরকারকে জানান দিচ্ছি, দেখো, এত কিছুর পরেও জনস্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। এইজন্য স্রোত সরকারের বিরুদ্ধে যে অবস্থান তার বহিঃপ্রকাশ।’
আরও পড়ুন: ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সেক্রেটারিরা কে কোথায়?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা মেলকে বলেন, ‘বিভাগীয় গণসমাবেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা। সারাদেশে নেতাকর্মীরা এখন জেগে উঠেছে। সমাবেশে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত, একটি লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে চায়।’
এমই/জেবি