সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শোডাউনে কী বার্তা দিল বিএনপি?

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

শোডাউনে কী বার্তা দিল বিএনপি?

প্রায় নয় মাস পর বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বড় কোনো সমাবেশ করেছে বিএনপি। গত বছরের ৩০ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য দলীয়প্রধানকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশের পর এটি বড় কোনো কর্মসূচি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ কয়েকটি ইস্যুতে ডাকা এই সমাবেশ মহাসমাবেশে পরিণত হয় বলে দাবি করছে দলটি। এর মাধ্যমে মূলত বিএনপি একটি শোডাউন করেছে।  

দীর্ঘদিন পর একটি বড় কর্মসূচি পালন করতে পেরে বেশ ফুরফুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা চাঙা হয়েছেন। আগামী দিনে তারা বড় আন্দোলন করতে চাচ্ছেন, সেটার একটা বার্তা দলীয় নেতাকর্মীদের দিতে পেরেছেন। এছাড়া বিএনপি ফুরিয়ে যায়নি সেটা এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে বোঝাতে পেরেছেন বলে মনে করছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা।  

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, সরকারের দমনপীড়নের প্রতিবাদে দলটির ডাকা দুই দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির মধ্যে প্রথমে দিনের এই সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি। সমাবেশটি দুপুর ২টায় শুরু হলেও বেলা ১২টার মধ্যে নয়াপল্টন কানায় কানায় ভরে যায়। ‘নির্বিঘ্ন’ এই সমাবেশে নেতাকর্মীর ঢল নামে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি খোলা ট্রাকের ওপর নির্মিত মঞ্চ থেকে সমাবেশের কার্যক্রম চলে বিরামহীনভাবে। পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় এবং পূর্বে ফকিরেরপূল মোড় পর্যন্ত ২০০ মাইক লাগিয়ে সমাবেশ প্রচারের ব্যবস্থা করে বিএনপি।

সমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে কী বার্তা দিচ্ছে বিএনপি, জানতে চাইলে দলটির সংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই সমাবেশের মাধ্যমে জনগণ একটি বার্তা দিয়েছে সরকারকে, তা হলো- এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন চায় না। কারণ এরা যে গুম, খুনের সরকার এটাই জনগণের উপস্থিতিতে প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষুদ্র সমাবেশকে একটি মহাসমাবেশ রূপান্তরিত করার পেছনে এটাই ছিল একটি বার্তা।’

B1


বিজ্ঞাপন


আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা রাজপথে রয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব। আমাদের চেষ্টা থাকবে সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অগণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানো।’

এ প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকারকে কোনো বার্তা দেওয়া আমাদের কাছে জরুরি বিষয় নয়। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা একেক রকম বক্তব্য দিয়ে তারা নিজেরাই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। এজন্য সরকারকে বলতে চাচ্ছি আপনাদের নিজেদের লোকেরাই আপনাদের ক্ষতি কামনা করে। তা না হলে একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী কীভাবে বলেন, না খেয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ মারা যায়নি। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছে, তার মানে এই মন্ত্রী চাচ্ছেন এখনও মানুষ না খেয়ে মারা যাক? ৭৪ সালে মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় ঘোরাফেরা করেছে কাপড়ের অভাবে। এখন তিনি বলেন, মানুষের গায়ে তো জামা-কাপড় আছে। তার মানে ওই মন্ত্রীও চান ৭৪ এর ঘটনা আবার ফিরে আসুক। সরকারের নিজেদের ঘর থেকেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এগুলো সংশোধন করেন, আর না হয় জনগণের ঘাড়ের উপর থেকে নেমে যান। যে ব্যবস্থা করা দরকার সেটা সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা করব।’

আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, কী কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি?

এক প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, ‘সরকার পতনের কিছু নেই, আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করিনি। আমরা সরকারকে সরে যেতে বলছি। সরকারকে সঠিক সময়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলছি। না করলে সরকার সরে যাবে নাকি পড়ে যাবে সেটা পরিস্থিতি বলবে। আমরা আগাম কিছু বলব কেন। কারণ সরকার নিজেদের ভুলের মধ্যে বারবার পড়ে যাচ্ছে এবং সেই ভুলের পরিধি বারবার বাড়ছে। ভুলের বোঝা নিয়ে তারা তো বেশিদিন হাঁটতে পারবে না চালাতে পারবে না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা বার্তা দিতে চেয়েছি যে, সরকার যে পথে চলছে এটা ভুল পথ। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জনগণের সমর্থন ছাড়া তারা ক্ষমতায় রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের যেসব নেতা সমাবেশে এসেছেন, তাদের অনেক স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত নির্যাতন বাধা-নিষেধের পরেও আমাদের সমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে। মানুষের ওপর যত জুলুম নির্যাতন হোক না কেন, তারা এই জুলুম উপেক্ষা করে আগামী দিনে সরকারের গণবিরোধী কার্যক্রম কঠোর দমন করবে। এটাই হচ্ছে সমাবেশের বার্তা।’

B2

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে রাজপথ দখলে নেবে আওয়ামী লীগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে এটার জন্য বলার কিছু নেই। তারা আবার দখল নেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে, সবকিছু তো তাদের দখলেই রয়েছে। প্রশাসন তাদের আর রাস্তা তো পুলিশের দখলে রয়েছে। নতুন করে আর দখলের কী নেবে, এটা আমার জানা নেই।’

আরও পড়ুন: সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টায় বিএনপি

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যা বার্তা দেওয়ার সেটা দেওয়া হয়েছে, এটা সবাই বুঝছে। আলাদা করে বলার কিছু নেই। আমরা যেটা চাই বার্তা তো একটাই, এটা তো নতুন কিছু নয়। আমাদের দাবিগুলো হচ্ছে সুস্পষ্ট। আমরা সেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।’

B3

এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি কি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবতই আন্দোলন করে আসছি। শেষটা দেখতে চাই, শুরুটা নাই বললাম। শুরুটা আমরা অনেক আগেই করেছি, আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আমরা পতন না চাইলেও আন্দোলন এমন পর্যায়ে যাবে বা অতীতে গিয়েছে, যাতে সরকার পতন হয়ে যায়। সব সময় চাওয়ার ওপর নির্ভর করে না। আবার সবসময় না চাওয়ার ওপরও নির্ভর করে না।’

এমই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর