বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, কী কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি?

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২২, ০২:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, কী কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি?

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দলের দুই নেতা হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তবে জ্বালানি তেল ইস্যুতে আপাতত হরতাল অবরোধের মতো বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। আপাতত স্বাভাবিক কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখাটাই হচ্ছে বিএনপির মূল টার্গেট। যেহেতু নির্বাচনের বাকি এখনো প্রায় দেড় বছর, সেজন্য এখনই বড় কর্মসূচি দিলে মামলা-হামলা এবং গ্রেফতার আতঙ্ক রয়েছে। তাই নির্বাচনের কাছাকাছি গিয়ে বড় আন্দোলনের চিন্তা রয়েছে। 

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরেও বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে চলমান কর্মসূচি সাথে জ্বালানি ইস্যু সম্পৃক্ত করে নিয়েছে দলটি। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বিএনপির সমালোচনাও করছে জ্বালানি তেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দায়সারা কর্মসূচি দেওয়ায়। অথচ বক্তব্যে সবসময় কঠোর কর্মসূচির হুঙ্কার দিচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতারা। 


বিজ্ঞাপন


গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দেশে সবধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায় সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি পণ্যগুলোর মূল্য এক লাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের মূল্য ১৩০ টাকা হয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনীতির দল কর্মসূচি পালন করে আসছে। জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহার না করলে হরতালের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষমতাসীন সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টিও সারাদেশে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও সকল ইউনিটের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল পালন করছে। 

গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও ৮ আগস্ট পর্যন্ত গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বিক্ষোভ মিছিল এবং বিএনপি মহাসচিব এর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাড়া তেমন কোন কর্মসূচি গ্রহণ কারেনি দলটি। যদিও চলমান কর্মসূচিতে তেলের মূল্য ইস্যুটি সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দলের দুই নেতা হত্যার প্রতিবাদে সোমবার ৮ আগস্ট দুই দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে ১১ আগস্ট রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং ১২ আগস্ট দেশের সব মহানগর ও জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। 

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারই দায়ী বলে মনে করে বিএনপি। দলটির নেতারা জানান, এ সংকটের জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করছেন তারা। সরকার যদি পদত্যাগ না করে, সেই লক্ষ্যে গণআন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যখন যেই কর্মসূচি প্রয়োজন সেটাই দেবেন। এ বিষয়ে তারা জিরো টলারেন্সে রয়েছেন। 

বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোলায় দুই নেতাকে হত্যা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে যাবে দলটি। তবে এখনই হরতাল অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। বৃহত্তর আন্দোলনের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সকল দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে চায় বিএনপি।

বিএনপির চলমান কর্মসূচির সাথে জ্বালানি ইস্যুকে সম্পৃক্ত করেছে এটা কি কৌশল নাকি এড়িয়ে যাওয়া— জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালে প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশের গুলিতে আমাদের দুজন কর্মী নিহত হয়েছে। সে কারণে সেই কর্মসূচি আমাদের করতে হবে। এরপর জ্বালানি তেলের মূল্যও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমাদের চলমান কর্মসূচির সাথে জ্বালানি ইস্যু সম্পৃক্ত করে দিয়েছি। আমাদের যে চলমান বিক্ষোভ রয়েছে এটা একই সাথে জ্বালানি তেল এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। জ্বালানি ইস্যু আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি না, দায়িত্বশীল দল হিসেবে আমরা এই কাজগুলো করছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। জনগণ যাতে আরও সংকটে পতিত না হয় সেটাও আমরা মাথায় রাখছি; জনগণ এখন দুঃসহ জীবন যাপন করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিক্ষোভ বা সমাবেশ করলে ১০-১৫ জনকে নিয়ে তো করি না। ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোকের সমাবেশ হয়, এক লাখ লোকের সমাবেশ হয়। আমি মনে করি সেটা হরতাল অবরোধ থেকেও জোরালো কর্মসূচি। হরতাল অবরোধও আমরা বাদ দেব না ধাপে ধাপে সেই কর্মসূচি আসবে। আমরা সামগ্রিকভাবে সেই কর্মসূচির দিকে এগিয়ে যাব। শঙ্কট ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করছি। এ সংকটের জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। সরকার যদি পদত্যাগ না করে, সেই লক্ষ্যে আমরা গণ আন্দোলন চালিয়ে যাব। যখন যেই কর্মসূচি প্রয়োজন আমরা সেটাই দেব। এ বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। 

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা মেইলকে বলেন, জ্বালানি ইস্যুতে আমাদের নিয়মিত কর্মসূচি চলছে। এটাতো বিএনপির পূর্বের কর্মসূচি সাথে জ্বালানি ইস্যু সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

তাহলে কি নতুন কোনো কর্মসূচি আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জ্বালানি ইস্যুতে বিএনপির ভিন্ন কোনো কর্মসূচি আসবে কিনা এটা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা রয়েছে সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। সভায় যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমরা এর আগে তো আগস্ট মাসে কখনো কর্মসূচি করি নাই, এবার তো আমাদের ১২ তারিখ পর্যন্ত কর্মসূচি দেওয়া রয়েছে।

তাহলে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির জ্বালানি ইস্যুতে কঠোর কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, এটাতো যার যার মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। সেটা দিতেই পারে, বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছে নির্যাতন হচ্ছে মামলা হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত। এটা এখন গায়ে সয়ে গেছে। এখানে নতুন করে এড়ানোর কিছু নাই। এটা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ তো আর বিএনপির পক্ষের নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশার পক্ষে বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে। যারা অন্ধ অনুভূতিহীন, যারা মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে নাই, মানুষকে নিয়ে চিন্তাও করে না তাদের কথা ভিন্ন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, জ্বালানি ইস্যুতে বিএনপির প্রতিবাদ আসবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সরকার ইচ্ছেমতো যা ইচ্ছে তাই করছে। আমরা বিরোধী দল হিসেবে সব সময় আন্দোলন করছি, আরও করব ইনশাআল্লাহ। আমরা আন্দোলনে রয়েছি এবং জ্বালানি তেলের ইস্যুতে মহাসচিব বিবৃতিও দিয়েছে। কঠোর কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করছি না কে বলছে? আমরা তো আন্দোলনে রয়েছি আমাদের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছে, কেউ তো বসে নাই। অত্যাচার করা হচ্ছে তাদেরকে মেরে ফেলা হচ্ছে তারপরও তো তারা রাস্তায় রয়েছে।

‘বিএনপির নিয়মিত কর্মসূচি হচ্ছে’ বলে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা মেইলকে বলেন, জ্বালানি ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে। বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি হচ্ছে, মিছিল হচ্ছে, মশাল মিছিল হচ্ছে, সভা হচ্ছে, সমাবেশ হচ্ছে

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে চলমান কর্মসূচি সেটা তো ন্যায্য কর্মসূচি ছিল। সরকারের কৌশলই হচ্ছে একটি নতুন ঘটনা ঘটিয়ে পূর্বের ঘটনাটা ভুলিয়ে দিতে চায়। মানুষ খুন করেছে সেটা যাতে ভুলে যায় সেজন্য তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলব, মানুষ খুন করার বিষয়ে কথা বলতে পারব না? তেলের দাম বেড়ে গেছে, জনগণের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে, আমরা আন্দোলন করছি; দ্রুতই এই ইস্যুতে আমাদের বড় কর্মসূচি থাকবে।

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর