শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভোটের মাঠে জটিল সমীকরণ!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

vote
ভোটের মাঠে জটিল সমীকরণ। ছবি: ঢাকা মেইল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের বাকি চার মাসেও কম সময়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত চতুর্মুখী সমীকরণ দেখা যাচ্ছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী তিনটি দলকে ঘিরেই চলছে জল্পনা-কল্পনা। এরই মধ্যে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। যারা চষে বেড়াচ্ছে নির্বাচনি মাঠ।

আর নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও আসনভিত্তিক সুনির্দিষ্ট প্রার্থী না থাকায় এখনো প্রচারণা জমে উঠেনি বিএনপির। আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে খুব হিসাব-নিকাশ করেই প্রার্থী ঘোষণা করবে দলটি। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দানকারী তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো সারাদেশে নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। এতে বৃহৎ কোনো দলের সঙ্গী হয়েই তাদের নির্বাচনি মাঠে থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। এসব নিয়ে দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে এনসিপি। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে নির্বাচন অনিশ্চিত জাতীয় পার্টির। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে দেখা যাচ্ছে জটিল সমীকরণ।


বিজ্ঞাপন


মাঠ চষে বেড়াচ্ছে জামায়াত

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে দেখা যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে। এর আগে বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একত্রে হেঁটেছে জামায়াত। ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তির বলয় দেখেনি বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ কার্যত মাঠশূন্য হওয়ার পর বিএনপির জন্য মাঠ ফাঁকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন রাজনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জিং জায়গা দখল করে নিয়েছে জামায়াত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিকে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে কিছুটা অনীহা ছিল জামায়াতের। আগে পুরোপুরি সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার, তারপর নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল দলটি। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আসে জামায়াতের। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। সক্রিয়ভাবে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছে জামায়াত। আবার জোট হলে শরিকদের আসন ছাড়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে শতভাগ মানসিক প্রস্তুতি।

আরও পড়ুন

‘বেফাঁস’ মন্তব্যে এগিয়ে বিএনপি, পাল্লা দিচ্ছে জামায়াত-এনসিপিও!

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে সরেজমিনে দেখা চায়, মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি প্রার্থীর ছবিসহ রীতিমতো লিফলেট ছাপিয়ে গ্রামের হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ভোট চাচ্ছেন তারা। করছেন উঠান বৈঠক। বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া প্রার্থী বাছাইয়েও বেশ চমক দেখিয়েছে জামায়াত। এক্ষেত্রে তরুণ ও জনপ্রিয় মুখদের সামনে এনেছে দলটি।


বিজ্ঞাপন


Jamat
দলের বক্তাদের সতর্ক করেছে জামায়াত। ছবি: সংগৃহীত

তবে ভোটের মাঠে সম্প্রতি কিছু নেতা বা প্রার্থীর বেফাঁস বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে জামায়াতকে। সম্প্রতি জামায়াত ঘরানার কয়েকজন ইসলামি বক্তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে দল থেকে তাদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে ‘বিশিষ্ট দাঈ ও ওয়ায়েজ সম্মেলন’ আয়োজন করা হয়। সেখানে সারাদেশ থেকে শতাধিক জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে বিতর্কিত বক্তব্যে শীর্ষে থাকা মাওলানা তারেক মনোয়ার ও মুফতি আমীর হামজাও ছিলেন। সেখানে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ময়দানে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না যাতে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে কথাবার্তা বলতে হবে। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা যাবে না।

এদিকে সতর্ক বার্তা দেওয়ার পরপরই কুষ্টিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে জামায়াতের প্রার্থী ও বক্তা মুফতি আমীর হামজা এক বক্তব্য দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন। তিনি নবী করিম সা.কে ‘সাংবাদিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এছাড়া দুর্গাপূজা চলাকালে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনিরের রোজার সঙ্গে পূজার তুলনাসহ আরও কয়েকজন নেতার বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দেয়।

হিসাব কষছে বিএনপি

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করে আসছে বিএনপি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে মাঠে সরব ছিল দলটি। কিন্তু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলেও এখন পর্যন্ত আসনভিত্তিক প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিতে পারেনি বিএনপি। এতে দলে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি।

বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াতে ইসলামী ও তার শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নির্বাচনি কর্মকাণ্ড অনেক আগে থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে শুরু হওয়ায় তারা চিন্তিত। তারা পিছিয়ে পড়েছেন বলে মনে করছেন। আসছে নির্বাচনে দলের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে তাদের আশঙ্কা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও এসব বিষয় উঠে এসেছে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশের ভোটারদের একটি বড় অংশ তরুণ ও যুবক। যাদের বেশির ভাগ বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। জেন-জি প্রজন্মের এই সময়ে প্রায় চার কোটি ভোটারের সমর্থন আদায়ে কোনো কর্মসূচি নেই বিএনপির।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিএনপির চেয়ে জামায়াত এগিয়ে আছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মনোনয়ন ঘোষণা করেনি। বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে। তারা লিফলেট-পোস্টার প্রস্তুত করে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠেও নেমেছে।

আরও পড়ুন

প্রার্থী বাছাইয়ে ‘চমক’ দেখাতে চায় বিএনপি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ জাকসু নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের। ওই নির্বাচনেও আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা, আগাম প্রস্তুতি কিংবা মাঠ জরিপ ছিল না বিএনপির। একইভাবে চললে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

এছাড়াও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোকে আসন ছাড়ের সিদ্ধান্তও এখন পর্যন্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন নেতারা। আবার দলটির প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে কোন্দল বাড়ছে। আগামী দিনে এই কোন্দল নিরসন করে অল্প সময়ে নির্বাচনি ফল ঘরে তোলা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

BNP1
প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রচারে পিছিয়ে বিএনপি। ছবি: সংগৃহীত

তবে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে বিএনপি সব দিক থেকেই চাঙা হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলায় তারেক রহমান সাক্ষাৎকার দেওয়ায় তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে উজ্জীবিত ভাব দেখা গেছে। নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ইসলামি দলকেও টার্গেটে করে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও চালাচ্ছে দলটি। এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের। আবার জোট শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও হিসাব-নিকাশ কষতে হচ্ছে। কেননা জোট শরিকদের ছাড় দেওয়া আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণ বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনসিপির দর কষাকষি

জুলাই অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দানকারী শীর্ষ সমন্বয়কদের নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দল গঠনের পর দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে কিছু কিছু এলাকায় ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও এখনো সারাদেশে নির্বাচনের মতো সক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে এনসিপির নাম ব্যবহার করে কিছু তৃণমূল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। এতে দলটির শুরুর আগেই চিড় ধরে জনপ্রিয়তায়।

শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন বাদে সারাদেশে এনসিপির এখন পর্যন্ত তেমন কোনো নির্বাচনি তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে শেষ পর্যন্ত সদ্য নিবন্ধন পাওয়া দলটি বৃহৎ কোনো দলের সঙ্গী হয়েই নির্বাচনি মাঠে থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। এসব নিয়ে দর কষাকষিও চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। তাদের নিবন্ধন নিশ্চিত হলেও প্রতীক নিয়ে ইসির সাথে চলছে দেন-দরবার।

আরও পড়ুন

যুগপৎ আন্দোলনে নামার আগেই ধাক্কা!

এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার সঙ্গে নির্বাচনে যাবে তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে দলটি। বিএনপির সঙ্গে জোটে গেলে যেসব আসন ভাগে পড়বে তাতে জিতে আসাও তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ প্রত্যেক আসনেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে একটা শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করা বা তাদের সহযোগিতা পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে গেলে বেশিসংখ্যক আসনে ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জোটে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তারপরও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে শঙ্কার কথাও চিন্তা করতে হচ্ছে এনসিপিকে। এছাড়া কিছুদিন আগে গণঅধিকার পরিষদের মতো ছোট কিছু দল মিলে জোট করার গুঞ্জন শোনা গেলেও তাতে আশার আলো দেখছে না দলটি। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দলটির কপালে চিন্তার ভাঁজ তত দৃশ্যমান হচ্ছে।

NCP
এনসিপির কয়েকজন তারকা প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এনসিপি নিবন্ধন পাওয়ার সব ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপির পক্ষ থেকে কোনো দলের সাথে জোট বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। আমরা মনে করি, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়, দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য যদি কারও সাথে জোটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে আদর্শিক জায়গা থেকে প্রয়োজন বিবেচনায় সেই ধরনের জোটের জন্য আমরা ওপেন রয়েছি।

ভোট অনিশ্চিত জাপার

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর মাঠছাড়া আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলটির সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিপদে রয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিও। দিন দিন দলটির নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে। এই অবস্থায় জাতীয় পার্টিরও নির্বাচন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের নেতারা চলছেন মুখ লুকিয়ে। জাতীয় পার্টি যাতে কোনোভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে দাবিতে সক্রিয় রয়েছে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি ইসলামি দল। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় রয়েছে বিএনপি। নির্বাহী আদেশে কোনো দলকে নিষিদ্ধ চায় না বলে বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বিপাকে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির স্বীকৃতি পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে জাতীয় পার্টির সক্রিয় দুটি গ্রুপ। এর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন জিএম কাদের, অপরটির নেতৃত্বে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আসল জাতীয় পার্টির দাবিদার দুই অংশই নিজেদের স্বীকৃতি দিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

জাতীয় পার্টি কি নিষিদ্ধ হচ্ছে?

সম্প্রতি জাপার আনিসুল ইসলাম অংশের দফতর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পুরনো তথ্য ইসির ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। অপরদিকে জিএম কাদের অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখতে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সাক্ষাৎ শেষে জাতীয় পার্টির (জাপা) নিবন্ধন ও প্রতীক দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নামেই বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন এই অংশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

jtiya1
পুলিশি বাধায় পণ্ড জাতীয় পার্টির কর্মী সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি দলগুলো মিলে বৃহৎ জোট

কয়েক মাস ধরেই শীর্ষ ইসলামি দলগুলো মিলে বৃহৎ জোটের কথা শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ নানা দাবিতে জামায়াতসহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাগপা অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করছে। এছাড়া আরও ছোট ছোট কয়েকটি দল মিলে গঠন হতে পারে এই জোট।

ইসলামি দলগুলো নিজেরা জোটের ব্যাপারে একমত থাকলেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটের ব্যাপারে কারও কারও আপত্তি রয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইতোমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে কোনো জোটে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। ইসলামি দলগুলোর মধ্যেও এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ জামায়াতসহ বৃহৎ ইসলামি জোটে আগ্রহী হলেও অনেকে তেমন আগ্রহী নয়। তারা ভেতরে ভেতরে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। শেষ পর্যন্ত ইসলামি দলগুলো কোন দিকে যায় তা এখনই বলা যাচ্ছে না।   

তবে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতের পরে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে পরিচিত চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ইসলামি জোটের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। দলটি বিএনপি বলয়ে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি গত কয়েক মাস ধরে চির বৈরী জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে ইসলামী আন্দোলন। আগামী নির্বাচনে অন্য ইসলামি দল না থাকলেও জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের একটি নির্বাচনি সমঝোতা হতে পারে বলে জোর প্রচার রয়েছে।

আরও পড়ুন

নারীদের মন জয়ে পাল্টা কৌশলে মাঠে নামছে বিএনপি

সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেন, এক বাক্সে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনায় কয়েকটি ইসলামি দল মিলে একজোট হওয়ার আলোচনা চলছে। অধিকাংশ ইসলামি দলই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই বৃহত্তর নির্বাচনি সমঝোতায় একমত। সেভাবে বৈঠক ও আলোচনা চলছে। আর আমাদের দল ছাড়া অন্য অনেক ইসলামি দল আগে দীর্ঘদিন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ রাজনীতি করেছে। আল্লাহ চাহে তো ইসলামি দলগুলোর এক বাক্স নীতি আলোর মুখ দেখবে।

Chormonai
মাঠে সক্রিয় ইসলামী আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

তৃতীয় জোট গঠনের চেষ্টা ৯ দলের

জামায়াত ও বিএনপি এই দুই জোটের বাইরে ৯ দল মিলে স্বতন্ত্র তৃতীয় আরেকটি বৃহত্তর জোটের বিষয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের। যদিও এই আলোচনায় আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি কিংবা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের বাসায় এই বৈঠক হয়। তবে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় নতুন এই জোটের উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রস্তুতির সময়টা একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছে দলগুলো। তারপরও একটি ‘বৃহত্তর’ রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে দলগুলো শিগগির আবারও আলোচনায় বসবে।

জানা গেছে, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, মঞ্চের সমন্বয়ক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রভাব

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদগুলো ভোটের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নিঃসন্দেহে ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ ছায়া ফেলবে। বিশেষ করে সচেতন শিক্ষিত মহলের বিশ্লেষণে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। এছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যারা ভোটার, তারা জাতীয় নির্বাচনেরও ভোটার। সঙ্গত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাচ্যের অক্সোফোর্ড খ্যাত এ বিদ্যাপীঠে যে দল-মতের ভিপি-জিএসরা নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তাদের নীতি-আদর্শের দলও জাতীয় নির্বাচনে ভোটের জরিপে সুবিধা নেবে।

টিএই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর