রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সংকট সমাধানের পথ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বের সরকার: মির্জা ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

Fakhrul
‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব। ছবি- ঢাকা মেইল

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বের সরকারই দেশে বিদ্যমান সংকট সমাধানের একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে অপর্ণা আলোক সংঘ সংগঠনের উদ্যোগে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই মন্তব্য করেন। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল

ফখরুল বলেন, ‘এই যে সমস্যার কথা বললেন, সমাধানের পথ কী? এটা আমার সিস্টেমের ওপর নির্ভর করবে। আমি যদি একটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করতে পারি, আমি যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি, যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি, তাহলে সেখানে জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব। আমি মনে করি, আপাতত এটা একটা ভালো পথ, যেখানে গিয়ে হয়তো কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারব।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা শেষ হয়ে গেছে। এগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তো মানুষ লাগবে। সেই  মানুষগুলো তো তৈরি করতে হবে আপনাকে।’

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার বিচার এই দেশের মাটিতেই হতে হবে: মির্জা ফখরুল


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি সেক্রেটারিয়েটে যাবেন, সেখানে গেলে ওই যে আমলারা বসে আছেন, তারাই সবকিছু নির্ধারণ করেন। আমাদের উপদেষ্টা যারা দায়িত্ব পালন করছেন এখন, অনেক ক্ষেত্রেই তারা অসহায়। তারপরও আমরা আশা করি, তারা এতদিন যে চেষ্টা করেছেন, সে চেষ্টাটা নিয়ে সংস্কারের যেসব কমিশনগুলো আছে, তারাসহ আমরা সবাই মিলে একটা শুরু করতে পারি, যে শুরুটা দিয়ে আমরা একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্রামের একজন স্কুল শিক্ষক, তার সমস্যার সমাধান করতে হলে তাকে ঢাকায় আসতে হয়। কেন? যেটার প্রয়োজন নাই, সেটা জেলাতেই যথেষ্ট। কিন্তু ওই যে সিস্টেম। ওই সিস্টেমে যদি সেন্ট্রালে না আসে, তাহলে ঘুষটা আসবে কোথা থেকে। এটাই বাস্তবতা। শুনতে খারাপ লাগবে, বাট দ্যাট দ্য ট্রুথ।’

আরও পড়ুন: উগ্রবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না: মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, ‘ইউনির্ভাসিটিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে। তাহলে যেই ব্যবস্থাতে অনিয়ম চলতে থাকে, যে ধরণের বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারবে না, এটা খুব ডিফিকাল্ট। আমাদেরকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে যেতে এমন সিস্টেমের মধ্যে যেতে হবে, যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অন্তত মিনিমাম যে ন্যায়বিচার, সেটা নিশ্চিত করবেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসলে কাঠামোটা সংস্কার দরকার, যে কথা আমাদের সাকি সাহেব বলেছেন, ববি হাজ্জাজ বলেছেন। এটা আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে, আমাকে আগে আমার কাঠামোটাকে বদলাতে হবে এবং সেই কাঠামোতে আমাদের এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু হবে না, জোড়াতালি দিয়েও কিছু হবে না। একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লক্ষ্য, চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে।’

আরও পড়ুন: পিআর পদ্ধতি কোনোভাবেই মেনে নেব না: মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, ‘একটি গণঅভ্যুত্থান, তারপরই আমরা যখন নতুন করে রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন সংস্কার শুরু করেছি, তখনই তো বিবাদ শুরু করেছি, তর্ক-বিতর্ক শুরু করেছি। গণতন্ত্রে যেতে হলে তর্ক-বিতর্ক তো হবেই। কিন্তু এমন জায়গায় যাচ্ছি, মাঝে মাঝে যে জায়গায় গিয়ে হতাশা এসে যায়।’

ফখরুল বলেন, ‘আমি হতাশাবাদী কখনো ছিলাম না, হতাশাবাদী হতেও চাই না। কিন্তু এটা তো সত্য কথা যে, হতে হচ্ছে। আমি যখন একটা প্রগতিবাদী সমাজ দেখতে চাই। যখন একটা মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা চাই, যখন জনগণের বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই, তার আর্থিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই, তখন যদি দেখি যে, সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে এবং সেটাকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে, একটা উগ্রবাদকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন তো হতাশা আসবেই।’

আরও পড়ুন: উপদেষ্টাদের সততার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে: মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা লড়াই করেছি, করে চলেছি, আমাদের দায়িত্ব হবে সত্যিকার অর্থেই জনগণের জন্য যেন আমরা কাজ করি। জনগণ কথাটা আমার কাছে খুব ভেগ মনে হয়। কারণ কোন জনগণ? কারা? সেটা কি আপনার সালমান এফ রহমান, নাকি এস আলম নাকি আমাদের কলিম উদ্দিন-সলিম উদ্দিন। ওই জায়গাগুলোতে আমাদের আসতে হবে, আলোচনা করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে। সবকিছু নির্ভর করছে যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা কীভাবে সেই দেশটাকে পরিচালনা করছে? আওয়ামী লীগকে তো যেনতেন ভাবে ভোট দিয়েছিল ২০০৮ সালে, তাই না। সেই আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এই দেশকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। একেবারে বলা যায় যে ভূমিধস করে দিয়েছে।’

সংগঠনের প্রধান বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজসহ স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি।

বিইউ/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর